ঢাকা, বুধবার, ১০ পৌষ ১৪৩১, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

বকেয়া ১ টাকাও পাননি খুলনার দুই পাটকলের ৫ হাজার শ্রমিক!

মাহবুবুর রহমান মুন্না, ব্যুরো এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪৫ ঘণ্টা, মে ১, ২০২৩
বকেয়া ১ টাকাও পাননি খুলনার দুই পাটকলের ৫ হাজার শ্রমিক!

খুলনা: খুলনার খালিশপুর ও দৌলতপুর জুট মিল বন্ধের প্রায় ৩ বছর পার হলেও বকেয়া ১ টাকাও পাননি শ্রমিকরা। শ্রমিকদের বকেয়া পাওনা পরিশোধ ও মিল চালুর দাবিতে আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে আসলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন (বিজেএমসি) সূত্রে জানা গেছে, খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত ৯টি পাটকলের মধ্যে খালিশপুরে চারটি ও ভৈরব নদের ওপর পাড়ে দিঘলিয়ায় একটি পাটকল ছিল। এছাড়া ফুলতলার আটরা শিল্প এলাকায় দুটি ও যশোরে দুটি পাটকল রয়েছে।

২০২০ সালের জুলাই মাসের শুরুতে শ্রমিকদের ‘গোল্ডেন হ্যান্ডসেক’ দিয়ে মিলগুলো বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। এরপর কয়েকদিন অপেক্ষার পর পরিবার নিয়ে এলাকা ছাড়তে শুরু করেন শ্রমিকরা।

খুলনার ৫টি জুট মিলের শ্রমিকরা বকেয়া মজুরি ও সরকারি সব সুযোগ সুবিধ পেলেও খালিশপুর জুট মিলস ও দৌলতপুর জুট মিলসের প্রায় ৫ হাজার শ্রমিক পাননি বকেয়া মজুরিসহ অন্যান্য পাওনা এমন অভিযোগ শ্রমিক ও শ্রমিক নেতাদের। যে কারণে মানবেতর জীবন যাপন করছেন তারা।

বিজেএমসি সূত্রে জানা যায়, অধিভুক্ত ৫টি পাটকলে (খালিশপুর জুট মিলস, দৌলতপুর জুট মিলস, জাতীয় জুট মিলস, কেএফডি ও আর আর জুট মিলস) আনুমানিক ১৫ হাজার শ্রমিক কর্মরত ছিল। এই ৫টি মিল ২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার কর্তৃক বন্ধ করার পর জাতীয় নির্বাচনের ইস্তেহার অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২০১১ সালের ৫ মার্চ পুনরায় চালু করেন। কিন্তু মহামারি করোনাকালে ২০২০ সালের ২ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এবং ২০২০ সালের ৩০ জুন উল্লেখ করে বিজেএমসি কর্তৃক নোটিশ প্রদান পূর্বক অধিভুক্ত ২৫টি পাটকল বন্ধ ঘোষণা করে। বন্ধ ঘোষণা করার সময় প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব বলেছিলেন যা বিজেএমসির নোটিশেও উল্লেখ ছিল, ‌‘সব শ্রমিকের বকেয়া পাওনা ২ মাসের মধ্যে পরিশোধ করা হবে’। কিন্তু যথাসময়ে বকেয়া না পাওয়ায় শ্রমিকদের আন্দোলনের মুখে সরকার প্রায় ১ বছর পর স্থায়ী শ্রমিকদের এবং পরবর্তীতে বদলি শ্রমিকদের বকেয়া পাওনা পরিশোধ করতে শুরু করে। তবে এখনও খুলনার খালিশপুর জুট মিলসও দৌলতপুর জুট মিলসের শ্রমিকরা কোনো বকেয়া মজুরি পাননি।

বকেয়া মজুরি না পাওয়া শ্রমিকরা বলেন, বর্তমানে জীবনযাপন ব্যয় অত্যাধিক বাড়ায় কর্মহীন হয়ে তারা পরিবার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। গেটপাসে নামের বানান ভুলসহ নানা অজুহাতে এখনও অনেক শ্রমিককে টাকা পরিশোধ করা হয়নি। ফলে অমানবিক অবস্থায় দিন পার করছেন তারা। ২০১৫ সালের ‘মজুরি ও উৎপাদনশীলতা কমিশন’-এর ঘোষণা অনুযায়ী মজুরি কাঠামো মোতাবেক শ্রমিকরা পারিশ্রমিক পেয়েছেন। সুতরাং বকেয়া এরিয়ারের অর্থ এবং সেই সঙ্গে ২০১৫ সালের মজুরি কাঠামো অনুযায়ী বিভিন্ন উৎসব বোনাসের পার্থক্য, নোটিশ পে, লক ডাউনের টাকা ইত্যাদি আমাদের ন্যায্য প্রাপ্য। কিন্তু প্রায় ৩ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পরও আমরা প্রাপ্য অর্থ পাইনি। তাই সরকারের ঘোষিত গেজেট অনুযায়ী আমাদের বকেয়া সব পাওনা অবিলম্বে এককালীন পরিশোধ ও বন্ধকৃত সব পাটকল রাষ্ট্রীয় মালিকানায় চালুর দাবি জানাচ্ছি।

খালিশপুর জুটমিল এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মনির হোসেন বলেন বাংলানিউজকে বলেন, খালিশপুর ও দৌলতপুর জুটমিলের প্রায় ৫ হাজার শ্রমিকের ৭০ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। ২৬টি জুট মিলের মধ্যে ৫টির বকেয়া রয়েছে। কিছু ভুল নামের জন্য ও মামলার কারণে কয়েকজনের বকেয়া রয়েছে। বাকি সবাই সঞ্চয়পত্র পেয়ে গেছেন। ৩ মাস পর পর তার মুনাফা পাচ্ছেন। সরকার বলেছিল করোনার জন্য ৩ মাসের জন্য মিলের উৎপাদন বন্ধ করেছে। কিন্তু ৩ বছরেও চালু হয়নি। খালিশপুর ও দৌলতপুর জুটমিলের শ্রমিকরা কিছুই পাননি। শ্রম প্রতিমন্ত্রী গেট মিটিং করে বলেছিলেন ২০১৫ সালের ‘মজুরি ও উৎপাদনশীলতা কমিশন’-এর ঘোষণা অনুযায়ী আপনারা মজুরি পাবেন। কিন্তু ওনার বলার দেড় বছর পরও ১টি টাকাও পাইনি।

পাটকল রক্ষায় সম্মিলিত নাগরিক পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক মুনীর চৌধুরী সোহেল বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমান সরকার লোকসানের অজুহাত দেখিয়ে ২০২০ সালের ২ জুলাই বাংলাদেশের ২৬টি পাটকল বন্ধ করে দিয়েছেন। সেই সময় সরকার প্রধান, পাটমন্ত্রী ও শ্রমপ্রতিমন্ত্রী বলেছিলেন, দুই মাসের ভেতর শ্রমিকদের সব ধরনের বকেয়া পাওনা পরিশোধ করা হবে এবং ৩ মাসের মধ্যে পাটকলগুলো চালু করা হবে। সেই অঙ্গীকার, অঙ্গীকারই থেকে গেছে, পাটকলগুলো লিজ বা ব্যক্তিমালিকানায় ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। খুলনার খালিশপুর ও দৌলতপুর জুটমিলের প্রায় ৫ হাজার শ্রমিক বকেয়ার একটি টাকাও পায়নি। আজ প্রায় ৩ বছর অতিক্রম হলেও স্থায়ী শ্রমিকদের সঞ্চয়পত্র, অন্যান্য পাওনা, ২০২০ সালের দুটি বোনাস, ছাত্রদের উপবৃত্তির টাকা এবং আরও অন্যান্য পাওনাদি কবে পাওয়া যাবে তা শ্রমিকরা জানে না। এরকম অনিশ্চিত অবস্থায় শ্রমিকরা দিনগুজরান করছে। বর্তমানে চাল-ডাল-তেল-গ্যাসসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম লাগামছোঁয়া। অর্থের অভাবে তারা বয়স্ক পিতা-মাতার চিকিৎসা করাতে পারছে না। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গেছে। টাকার টেনশনে সপ্তাহ দুই আগে চাকরি হারানো দুজন শ্রমিক মারা গেছেন। আমাদের জোর দাবি, রাষ্ট্রীয় মালিকানায় পাটকল অবিলম্বে চালু ও সব পাওনা পরিশোধ করা হোক। নতুবা আন্দোলনের মাধ্যমে রাজপথ উত্তপ্ত করা হবে।

খুলনার খালিশপুর ও দৌলতপুর জুটমিলের শ্রমিকদের বকেয়া প্রসঙ্গে খুলনা শ্রম দপ্তরের বিভাগীয় পরিচালক মো. মিজানুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, আইনত যে টাকা পায়নি তারা পাবে না। যারা প্রাপ্য তারা সবাই পেয়েছে। এছাড়া মামলার জন্য কিছু টাকা দেওয়া যাচ্ছে না, টাকা রেডি আছে। সঞ্চয়পত্রের কিছু ত্রুটি আছে এগুলো নিস্পত্তির জন্য অর্থমন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করছেন অনেকে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৫ ঘণ্টা, মে ১, ২০২৩
এমআরএম/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।