লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুরের মেঘনা নদীতে আশানুরূপ ইলিশ পাচ্ছেন না জেলেরা। ফলে বাজারে তেমন একটা দেখাও মিলছে না ইলিশের।
জেলে, আড়তদার, মৎস্য ব্যবসায়ী ও মৎস্য কর্মকর্তারা বলছেন, এ মুহূর্তে নদীতে ইলিশের উপস্থিতি একেবারে কম। প্রাকৃতিক কারণে এবং শুষ্ক মৌসুমে নদীতে গভীরতা কম থাকায় ইলিশের দেখা মিলছে না। তবে ভরা বর্ষায় মেঘনায় ইলিশ ধরা পড়বে বলে আশা করছেন তারা।
এদিকে ইলিশ শিকারে দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষে যেসব জেলেরা নদীতে যাচ্ছেন তাদের ফিরতে হচ্ছে খালি হাতে বা অল্প পরিমাণ ইলিশ নিয়ে। কিছু ইলিশ ধরা পড়লেও সেগুলো আকারে ছোট। তবে জেলেদের জালে পোয়া বা রিস্যা মাছ ধরা পড়ছে।
মঙ্গলবার (২ মে) সন্ধ্যায় লক্ষ্মীপুরের মজুচৌধুরীর হাট মাছঘাটে গিয়ে দেখা যায়, জাটকা অভিযান শেষে ঘাটের আড়তদাররা বসে আছে ইলিশের আশায়। আর ব্যবসায়ীরাও ভিড় করছে কেনার জন্য। তবে দীর্ঘ সময়ে ঘাটে ইলিশ মাছ আসতে দেখা যায়নি। এতে হতাশ আড়তদার এবং ব্যবসায়ীরা।
কয়েকজন আড়তদাররা বলেন, নিষেধাজ্ঞা শেষে কিছু জেলে নদীতে নেমেছে। কিন্তু তারা আশানুরূপ মাছ পাচ্ছে না। তাই ঘাটেও মাছের উপস্থিতি নেই। প্রাকৃতিক কারণে এ অঞ্চল থেকে ইলিশ মাছ অন্যদিকে চলে যাচ্ছে। আস্তে আস্তে লক্ষ্মীপুরের মেঘনা ইলিশ শূন্য হয়ে যাচ্ছে।
মঙ্গলবার (২ মে) রাতে জেলা শহরের উত্তর তেমুহনী, দক্ষিণ তেমুহনী এবং গোড়াউন সড়কের মাছ বাজারে গিয়ে ইলিশ মাছের উপস্থিতি তেমন একটা দেখা যায়নি। বাজারে যে পরিমাণ ইলিশ রয়েছে- সেগুলোর দাম ছিল আকাশচুম্বী। বিক্রেতারা ৮০০ গ্রাম ওজনের প্রতিকেজি ইলিশের দাম হাঁকাচ্ছেন ১৫০০-১৬০০ টাকা, ৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি ১২০০ টাকার বেশি, ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি হাজার টাকার ওপরে। এছাড়া ছোট আকারে ইলিশ প্রতিকেজির দাম ৬০০ থেকে ৭০০ টাকার মধ্যে। গেল ভরা মৌসুমে দাম এখনকার চেয়ে অর্ধেকেরও নিচে ছিল।
জেলা শহরের দক্ষিণ তেমুহনীতে ইলিশ কিনতে আসা ক্রেতা আবদুল মান্নান বাংলানিউজকে বলেন, যে দামে ইলিশ বিক্রি হচ্ছে তা সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে নেই। তাই আপাতত ইলিশের স্বাদ নেওয়া সাধ্যের বাইরে।
একই বাজারের ইলিশ বিক্রেতা কমল সাহা বাংলানিউজকে বলেন, মেঘনা নদীর তীরবর্তী ঘাট রামগতি বাজার মাছঘাট থেকে ইলিশ কিনে এনে শহরে বিক্রি করি। ঘাটের পাশেই আমাদের বাড়ি। নিষেধাজ্ঞার পর ইলিশ ধরা শুরু হলেও ঘাটে তেমন একটা মাছ আসছে না। নদীতে চর পড়ে গেছে, তাই জেলেদের জালে মাছ ধরা পড়ছে না। তবে জেলেরা কিছু মাছ নদীর গভীর অংশ থেকে ধরে আনছেন।
কমলনগর উপজেলা মতিরহাট মাছঘাটের সভাপতি লিটন মেম্বার বলেন, এ অঞ্চলে যে পরিমাণ জেলে আছে, তারা সবাই এখনো নদীতে মাছ শিকারে নামেনি। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, নদীতে মাছ কম থাকায় জেলেদের পোষাচ্ছে না। ফলে জেলেরা রবি মৌসুমে ক্ষেতে-খামারে কাজ করছেন। বর্ষা মৌসুমে যখন নদীতে মাছ আসা শুরু হবে তখন এসব জেলেরা পুরোদমে মাছ শিকারে নেমে পড়বেন।
এ মুহূর্তে মাছ কম ধরা পড়ার কারণে ঘাটে মাছের উপস্থিতি কম জানিয়ে তিনি বলেন, ইলিশের পরিমাণ কম। আকারেও ছোট। তবে পোয়া এবং রিস্যা মাছ ধরা পড়ছে। ঘাটে ৫০০ গ্রামের এক হালি (৪টি) ইলিশের দাম উঠছে দুই হাজার টাকার ওপরে। খুচরা বাজারে এর দাম আরও বেশি।
নদীতে ইলিশ মাছ কম থাকার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, নদীতে ডুবোচর এবং পলি জমে গেছে। তাই মাছ চলে গেছে গভীর সমুদ্রের দিকে। নদীতে মাছ একেবারে কম।
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা সারোয়ার জামান বাংলানিউজকে বলেন, সাধারণত মার্চ-এপ্রিলে জাটকা ইলিশের অভিযান শেষ হলেও নদীতে মাছের দেখা মেলে না। এসময়টাতে নদীতে পানি কম এবং গরম থাকে। ইলিশ গভীর জলের মাছ। শুষ্ক মৌসুমে তারা গভীর সাগরে অবস্থান নেয়। এখন সাগরে মাছ পাওয়া যাচ্ছে।
তিনি বলেন, নদীর এ অঞ্চলে ডুবোচর এবং বিভিন্ন অংশে টংজাল থাকায় সাগর থেকে নদীতে ইলিশ প্রবেশে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে নদীতে পানি বাড়লে মাছ আসার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে অন্যান্য বছর দেখা গেছে, জুলাইয়ের পর জেলেদের জালে মাছ ধরা পড়ে। অক্টোবর-নভেম্বরের দিকেও মাছ বেশি ধরা পড়ে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩০ ঘণ্টা, মে ০৩, ২০২৩
আরএ