নরসিংদী: নরসিংদীর বেলাব উপজেলায় লালন সংগীতের আখড়াবাড়ি পুলকিত আশ্রমে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় আশ্রম এবং বাদ্যযন্ত্র ভাঙচুর করা হয়েছে এবং তিনজন বাউল শিল্পী আহত হয়েছেন।
রোববার (০৭ মে) বিকেলে উপজেলার পাটুলি ইউনিয়নের ভাবলা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। বিষয়টিতে তুমুল নিন্দা জানাচ্ছেন বিশিষ্টজনরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালে ভাবলা গ্রামে লালন সংগীতের আখড়াবাড়ি পুলকিত আশ্রমের প্রতিষ্ঠা করেন জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়া। তার সঙ্গে পূর্ব শত্রুতা ছিল হামলাকারী শেখ জাহাঙ্গীর এবং শাহীনের। তারা তিনজন সম্পর্কে চাচাতো মামাতো ভাই।
আশ্রমের বাউলরা জানান, সোমবার পুলকিত আশ্রমে সাধুসঙ্গের দিন ধার্য ছিল। সে উপলক্ষে সারা দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে সাধু-ফকির, বাউল শিল্পীরা আগে থেকেই আশ্রমে উপস্থিত ছিলেন। রোববার দুপুরে শেখ জাহাঙ্গীর এবং শাহীনের নেতৃত্বে ৫-৬ জন দেশীয় অস্ত্রসহ জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়াকে খুঁজতে আশ্রমে যান। জাহাঙ্গীরকে না পেয়ে তারা সেখানে হামলা শুরু করলে তাদের বাঁধা দেন বাউল শিল্পীরা। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আগত শিল্পীদের ওপর হামলা চালান তারা। এ সময় শেরপুর জেলার মিন্টু বাউল (৩০), খুলনার রিয়াদ ভূঁইয়া (৩২) ও কিশোরগঞ্জের খোকন বাউল (৪০) আহত হন। তাদের সঙ্গে থাকা তনপোড়া, দোতারাসহ সব বাদ্যযন্ত্র ভেঙে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে লালন সংগীতকে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যেই এ হামলা চালানো হয়েছে বলে দাবি করছেন কুষ্টিয়াসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা লালন শিল্পীরা। তারা বলেন, হামলাকারী কাউকে আমরা চিনি না। আমরা এখানে গান করছিলাম। হঠাৎ তারা এসে আমাদের মারধর করেন এবং আমাদের যন্ত্র ভেঙে দেন। আমরা এর বিচার চাই।
কুষ্টিয়া থেকে লালন আখড়া ধামে আসা আলম নামে এক বাউল বলেন, হঠাৎ করেই কয়েকজন লোক এসে আমাদের সব বাউলদের গালাগালি শুরু করেন ও গান-বাজনা বন্ধ করতে বলেন। এক পর্যায়ে লাঠিসোটা নিয়ে তার এলোপাথাড়ি মারতে শুরু করেন। আমার কয়েকজন বাউল এতে আহত হয়েছি। আমাদের দোষটা কোথায়? গান গাউয়াটা কি অপরাধ!
পুলকিত আশ্রমের দায়িত্বে থাকা জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়া বলেন, এখানে দেশের দূর-দূরান্ত থেকে অনেক বাউলপ্রেমী এবং সংগীতপ্রেমী মানুষ এসে গান বাজনা করেন। গতকাল কয়েকজন দেশীয় অস্ত্রসহ আশ্রমে এসে বাদ্যযন্ত্র ভাঙচুর এবং শিল্পীদের ওপর হামলা করে তিনজনকে আহত করেছে। আমি এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করি।
বেলাব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ তানভীর আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। আগে থেকেই জাহাঙ্গীর ভূঁইয়া এবং শেখ জাহাঙ্গীরের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। তার জের ধরে এ ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। এই ঘটনাটি উস্কানিমূলক কোনো বিষয় কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এখনও থানায় কেউ কোনো অভিযোগ করেননি। তবে আমরা বিষয়টি তদন্ত করছি। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪৫ ঘণ্টা, মে ০৮,২০২৩
এফআর