বাগেরহাট: বঙ্গোপসাগরে গভীর নিম্নচাপ থেকে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়েছে মোখা। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী ঘূর্ণিঝড়টির রোববার (১৪ মে) দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানার আশঙ্কা রয়েছে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবেলায় সবধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে জেলা প্রশাসন। বৃহস্পতিবার (১১ মে) দুপুরে বাগেরহাট জেলা প্রশাসন ও জেলার ৯টি উপজেলায় দূর্যোগ প্রস্তুতি কমিটির সভা হয়েছে। জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আজিজুর রহমানের সভাপতিত্বে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তরা এতে উপস্থিত ছিলেন। উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) সভাপতিত্বে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় সব ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান উপস্থিত ছিলেন।
জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবিলায় বাগেরহাটে ৮৪টি মেডিকেল টিম, ১ হাজার ৯২০ জন সিপিপি সদস্য, ৫০০ জন রেড ক্রিসেন্ট সদস্য, রোভার, বিএনসিসি, স্বেচ্ছাসেবক সংগঠন, এনজিও, প্রতিটি ইউনিয়নে মেডিকেল টিম গঠন ও প্রাথমিক চিকিৎসাসামগ্রীসহ প্রয়োজনীয় ওষুধ এবং ৪৪৬টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যেখানে ২ লাখ ৩৫ হাজার ৯৭৫ জন আশ্রয় নিতে পারবে।
এছাড়া ত্রাণ দেওয়ার জন্য ৫২২ দশমিক ৮০০ মেট্রিকটন চাল, নগদ ১০ লাখ ১০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি উপকূলবর্তী এলাকা পানিতে প্লাবিত হয়ে ফসলের যাতে ক্ষতি না হয় সেজন্য উপ-পরিচালক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এবং উপজেলা কৃষি অফিসারদেরকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, নৌ-পুলিশ, বিদ্যুৎ বিভাগ ও কোস্টগার্ডকে সক্রিয় থাকার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। উপজেলা পর্যায়ে শুকনা খাবার যেমন চিড়া, গুড়, মুড়ি, বিস্কুট, গুঁড়াদুধ, মোমবাতি, বিশুদ্ধ পানি, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও উপকরণ এবং খাবার স্যালাইন মজুদ রাখার জন্য সিভিল সার্জন, নির্বাহী প্রকৌশলী, জনস্বাস্থ্য এবং ইউএনওদেরকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি মসজিদে ইমামদের মাধ্যমে মাইকিং করে ঝড়ের আগে, ঝড়ের সময় এবং ঝড়ের পরে করণীয় এবং উপকূলবর্তী প্রতিটি মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য ঘোষণা দেওয়া। আশ্রয়কেন্দ্র ছাড়াও প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কন্ট্রোলরুম খোলা হচ্ছে। ঝড়ের আগে ধান কাটা, মাছ ধরা এবং মাছের ঘেরের পাড়-নিচু জমি নেট দিয়ে ঘিরে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যথাসময়ে গবাদি পশু আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার জন্য স্বেচ্ছাসেবক এবং খামারিদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আজিজুর রহমানের বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবিলায় জেলার সব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারির ছুটি বাতিল করা হয়েছে। জেলার ৯টি উপজেলায় ৪৪৬টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যেখানে ২ লাখ ৩৫ হাজার ৯৭৫ জন আশ্রয় নিতে পারবেন। জেলা সদর ও প্রতিটি উপজেলায় একটি করে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। ৯ উপজেলায় ৮৪টি মেডিক্যাল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। রেড ক্রিসেন্ট, ফায়ার সার্ভিস ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার কয়েকশ স্বেচ্ছাসেবককে প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মোংলা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কমকর্তা হারুন আর রশিদ বলেন, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপটি মোংলা বন্দর থেকে এক হাজার ২২০কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছে। ইতোমধ্যে এটি ঘূর্ণিঝড় মোখায় রূপ নিয়েছে। মোংলা সমুদ্র বন্দরকে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১০০৮ ঘণ্টা, মে, ২০২৩
এমএমজেড