পাবনা (ঈশ্বরদী): ঈশ্বরদী-ঢাকা রেলরুটে পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলায় দিলপাশার ইউনিয়নে মাগুরা গ্রামে ১০৭ বছরের ব্রিটিশ আমলের বাউজান গার্ডার ব্রিজের সংস্কার শেষ হয়েছে। সাড়ে ৬০০ ফুট লম্বা শতবর্ষী এ ব্রিজের সংস্কার কাজ করা হয়েছে এক কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে।
আশা করা যায়, কিছুদিন পর থেকেই রেলব্রিজ দিয়ে ঈশ্বরদী-ঢাকা রেলরুটে ১০০ কিলোমিটার গতিতে আন্তঃদেশীয় ট্রেন ‘মৈত্রী’ এক্সপ্রেসসহ ১৮ জোড়া আন্তঃনগর মেইল ও লোকাল ট্রেন নিরাপদে চলাচল করবে।
শুক্রবার (১২ মে) সকাল ৭টায় থেকে ৯টা পর্যন্ত পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার দিলপাশার ইউনিয়নের পারভাঙ্গুড়ায় চলনবিলের মাঝখানে ব্রিটিশ আমলে নির্মিত ওই ২৫ নাম্বার গার্ডার রেলব্রিজের অস্থায়ী সিসিক্লাভের রেললাইন সরিয়ে সম্পূর্ণ নতুন ঢালাই করা পিয়ারের বেডব্লকের উপর রেললাইন বসানো হয়।
অতঃপর রাজশাহী থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী ৭৫৪ নাম্বারে আন্তঃনগর সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ট্রেন পারাপার করা হয়। ছয় মাস মেয়াদী প্রকল্পের নির্ধারিত সময়ের আগে বর্ষার আগেই কাজ শেষ করেছে ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি।
তার আগে সোমবার (১৯ ডিসেম্বর) পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে ২৫ নাম্বার বাউজান রেলওয়ে গার্ডার ব্রিজে আরসিসি বেডব্লক ভেঙ্গে সিসিক্লিভ দিয়ে একটি অস্থায়ী রেললাইন তৈরি করে সংস্কারের কাজ শুরু করে রেলওয়ে প্রকৌশল বিভাগ। বড় ব্রিজ হওয়ার কারণে কয়েকদফায় কাজটি শেষ হয়।
এসময় পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী লিয়াকত শরীফ খান, পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে সেতু প্রকৌশলী আব্দুর রহিম, পাকশী বিভাগীয় প্রকৌশলী-২ বীরবল মণ্ডল, বিভাগীয় সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী, মো. শিপন আলী, ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী (পথ-কার্য) আহসানূর রহমান, (ব্রিজ) হাসান আলী, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান আরটিসির প্রকৌশলী আলমগীর কবীর উপস্থিত ছিলেন
রেলওয়ের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান আরটিসির প্রকৌশলী আলমগীর কবির বাংলানিউজকে জানান, ব্রিটিশ আমলে ইটের মাঝে চুন-সুড়কি দিয়ে গাঁথুনি করাছিল। চুন-সুড়কির গুণাগুণ নষ্ট হয়ে ছাইয়ের মতো হয়ে গিয়েছিল। শতবর্ষী পিলারগুলোতে ফাটল ধরেছিল। গুরুত্বপূর্ণ এ রেলরুটে দিয়ে ট্রেন চলাচলে যেন বিঘ্ন না ঘটে, অস্থায়ী রেললাইন তৈরি করে সংস্কার কাজ করা হয়।
পাকশি বিভাগীয় রেলের ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী হাসান আলী বাংলানিউজকে জানান, গার্ডার ব্রিজের সংস্কার কাজ চলাকালীন ট্রেন ব্রিজে এসে থেমে যেত। ওপিটিতে চালকের স্বাক্ষর করিয়ে ট্রেন ছাড়তে দেরি হতো। এখন ১০ কিলোমিটার গতিতে আর না, মাসখানেক পর থেকে আগের মত নির্ধারিত গতিতে এখন ট্রেন চলাচল করবে।
পাকশী বিভাগীয় প্রকৌশলী-২ বীরবল মণ্ডল জানান, অস্থায়ী ব্যবস্থাপনার ওপরে গার্ডার ব্রিজটি ছিল। পাকশী বিভাগীয় প্রকৌশল বিভাগ সবগুলো পিয়ারের সম্পূর্ণ হওয়ায় ব্রিজের গার্ডারগুলো নতুন ঢালাই করা পিয়ারের বেডব্লকের উপর রেললাইন বসানো হয়েছে। ফলে এখন থেকে এই রেলব্রিজ দিয়ে ঈশ্বরদী-ঢাকা রেলরুটে ১০০ কিলোমিটার গতিতে আন্তঃদেশীয় ট্রেন ‘মৈত্রী’ এক্সপ্রেসসহ ১৮ জোড়া আন্তঃনগর মেইল ও লোকাল ট্রেন নিরাপদে চলাচল করবে
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের সেতু প্রকৌশলী আব্দুর রহিম জানান, শত বছরের বেশি সময় ধরে এ রুটটি দিয়ে ট্রেন চলাচল করছে। পাকশি বিভাগীয় রেলওয়ের আওতায় ঈশ্বরদী-ঢাকা রুটে ব্রিটিশ আমলে নির্মিত ৪৯টি গার্ডার রেলব্রিজ রয়েছে। ব্রিজগুলোর ওপর দিয়ে ২৫ টন এক্সেল লোড নেওয়ার মতো অবস্থায় নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে রেলপথ মন্ত্রণালয় ঝুঁকিপূর্ণ পর্যায়ক্রমে সকল ব্রিজগুলো সংস্কার ও পুনর্নির্মাণের উদ্যোগ হাতে নিয়েছে
জানা যায়, ১৯১০ সালে পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ নির্মাণের পর ১৯১৬ সালে ঈশ্বরদী-সিরাজগঞ্জ রেলরুটে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। ১৯৯৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর উত্তর-দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের কথা চিন্তা করে যমুনা সেতুর ওপর দিয়ে ট্রেন চালু শুরু হয়। প্রতিদিনই ব্রডগেজ-মিটারগেজের ২২ জোড়া ট্রেন যাতায়াত করে। ঝুঁকিপূর্ণ সেতুগুলোর কারণে স্বল্প গতি ও ঝুঁকি নিয়ে ট্রেন পারাপার হতো। এতে সময় অপচয় হতো আবার শিডিউল বিপর্যয় ঘটতো। এরই ধারাবাহিতায় পুরোনো রেলসেতুগুলো পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান প্রকৌশলীসহ পাকশি বিভাগীয় রেলওয়ে প্রকৌশলীরা সংস্কার করার দায়িত্ব পালন করছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০৯ ঘণ্টা, মে ১২, ২০২৩
এসএম/এমজে