নীলফামারী: এবছর অনুকূল আবহাওয়া ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ না থাকায় নীলফামারীতে ইরি-বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে। এ গোটা জেলায় চলছে এসব ধান কাটা-মাড়াইয়ের পালা।
কৃষি বিভাগের সূত্রমতে, জেলায় চলতি বোরো মৌসুমে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৮১ হাজার ৭০০ হেক্টর। তবে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে আবাদ হয়েছে ৮১ হাজার ৭১০ হেক্টর। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৬৬ হাজার ৭৮০ মেট্রিক টন। তবে বেশি জমি আবাদ হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। অর্জিত জমির মধ্যে সদরে ২৩ হাজার ৭০২ হেক্টর, সৈয়দপুরে সাত হাজার ৭০০ হেক্টর, ডোমারে ১৩ হাজার ২১৫ হেক্টর, ডিমলায় ১১ হাজার ২৬০ হেক্টর, জলঢাকায় ১৪ হাজার ৬৬৮ হেক্টর ও কিশোরগঞ্জ উপজেলায় ১১ হাজার ১৬৫ হেক্টর বোরোর আবাদ হয়েছে।
জেলার ডোমার উপজেলার বোড়াগাড়ির বোরো চাষি নজরুল ইসলাম জানান, এবছর ইরি-বোরোর খুব ভালো ফলন হয়েছে। তবে ধানের শীষ বের হওয়ার সময় একটুখানি বৃষ্টি হলে বোরোর ফলন আরও বাড়তো। তবে যেটুকু হয়েছে তাতে খুশি তিনি।
তিনি বলেন, বাজারে শুকনো বোরো প্রতি মণ এক হাজার ২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এভাবে দাম পেলে আবাদের জমি বাড়াবেন বলে জানান নজরুল ইসলাম।
সৈয়দপুর-নীলফামারী সড়কের শিমুলতলী এলাকায় দেখা গেল কৃষকের নিয়োজিত শ্রমিকরা দোলা থেকে ধান কেটে পাকা সড়কে আনছেন। তারপর ধান মাড়াই করে রোদে শুকানোর পর কেউ গোলাজাত কেউবা বাজারে বিক্রি করছেন।
কৃষক মজেউদ্দিন বলেন, যে কোনো সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগ হতে পারে তাই দ্রুত ধান কাটতে হচ্ছে। ফলে একটু মজুরিও বেশি দিতে হচ্ছে। প্রতিবিঘা জমির ধান কাটতে পাঁচ হাজার টাকা শ্রমিককে দিতে হচ্ছে বলে জানান তিনি।
জেলার সৈয়দপুর উপজেলার খাতামধুপুর ইউনিয়নের কৃষক আবেদ আলী জানান, চলতি মৌসুমে ৬৫ শতক (দুই বিঘা পাঁচ শতাংশ) জমিতে ব্রি ধান-২৮ ও ৫৮ জাতের ধান চাষ করেছেন। বীজতলা, জমি চাষ, রোপণ, স্যার, কীটনাশক, সেচ ও শ্রমিক বাবদ খরচ হয়েছে ২৮ হাজার ৩১২ টাকা। জমির ধান কেটে ঘরে তুলেছেন ৪১ মণ। প্রতিমন এক হাজার ২০০ টাকা হিসাবে মূল্য দাঁড়ায় ৪৯ হাজার ২০০ টাকা। এতে খরচ বাদে লাভ হয়েছে ২১ হাজার টাকা।
জেলার কিশোরগঞ্জের বাহাগিলি ইউনিয়নের কৃষক শরাফত আলী জানান, ধান কাটা-মাড়াই শুরু হয়েছে। সবাই একসঙ্গে কাটা-মাড়াই শুরু করায় ধানকাটা শ্রমিকের সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে বাড়তি মজুরিতে ধান কাটতে হচ্ছে। তিনি বলেন, ধান কাটার কিছু আগে কারেন্ট পোকা ফসলের ব্যাপক ক্ষতি করছে। নাহলে বোরোর উৎপাদন আরও বাড়তো বলে জানান তিনি।
সৈয়দপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ধীমান ভূষণ জানান, পুরোদমে ইরি-বোরো ধান কাটা-মাড়াই শুরু হয়েছে। অনুকূল আবহাওয়ায় বাম্পার ফলনে কৃষক বেজায় খুশি। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অর্জন বেড়ে যাওয়ায় আবাদ বেশি হয়েছে। আশা করি, আবহাওয়া ও বাজার দর অনুকূলে থাকলে অন্যান্য বছরের তুলনায় কৃষকরা এবার লাভবান হবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. এসএম আবু বকর সাইফুল ইসলাম বলেন, গোটা নীলফামারী জেলায় এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১০ হেক্টর জমি বেশি আবাদ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলনও হয়েছে বাম্পার। জেলায় শ্রমিক ও মেশিনে ধান কাটা-মাড়াই চলছে। আশা করছি, বাজারে ভাল দাম পেলে বিক্রি করে লাভবান হবেন তারা এবং আগামীতে আবাদের জমির পরিধি বাড়বে বলে মনে করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৭ ঘণ্টা, মে ১২, ২০২৩
এসএম