ঢাকা: ‘১৯৭১ সালের মার্চে শেখ মুজিব যখন অসহযোগ আন্দোলন শুরু করেন, তখন পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী সহিংস দমন প্রতিক্রিয়া অনুসরণ করে। মুজিবকে বন্দি করে পশ্চিম পাকিস্তানে পাঠানো হয়।
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের পরে তাহির রিয়াজ নামের এক প্রবাসী পাকিস্তানি তার ভেরিফায়েড টুইটার একাউন্টে প্রতিক্রিয়া জানাতে এভাবেই বর্তমানের পাকিস্তানি রাজনীতিতে বঙ্গবন্ধুকে প্রাসঙ্গিকতায় নিয়ে এসেছেন।
আরেক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘দে জা ব্যু’, যার অর্থ অতীতের পুনরাবৃত্তি।
মূলত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে গ্রেপ্তারের ঘটনার সঙ্গে ইমরান খানের গ্রেপ্তারকে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি বোঝাতে চেয়েছেন তিনি। বঙ্গবন্ধু ও ইমরান খানের ছবি সমেত একটি কার্ড বানিয়ে পোস্টের সঙ্গে ছবিটি ব্যবহার করেছেন তাহির রিয়াজ।
সামরিক বাহিনীর গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে শুধুমাত্র প্রবাসী তাহির রিয়াজ নয় বরং পাকিস্তানি তরুণ প্রজন্ম থেকে শুরু করে ‘ইসলামাবাদ সিটি নিউজ-এর মতো গণমাধ্যমও বঙ্গবন্ধুকে টেনে আনছেন।
এর আগে গত বছরের ১ নভেম্বর এক রোডমার্চে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছিলেন, ‘১৯৭০ সালে আওয়ামী লীগকে নির্বাচনী ম্যান্ডেট থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল। এর ফলে পাকিস্তানের পূর্বাংশ ‘বাংলাদেশ’ নামে স্বাধীন রাষ্ট্র হয়ে যায়। চতুর রাজনীতিবিদ ভুট্টো ক্ষমতার লোভে সশস্ত্র বাহিনীকে তৎকালীন বৃহত্তম দল আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়েছিলেন। ’
এসময় তিনি (ইমরান খান) দেশটির ক্ষমতাসীন সরকারের বিরুদ্ধে নিজের লড়াইকে বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর লড়াইয়ের সঙ্গে তুলনা করেছেন।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক লেখক অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, স্বাধীনতার ৫২ বছর পরে এসে যদি তারা ভুল বুঝতে পারে যে সামরিক শাসন দেশের ক্ষতিকারক সেটা তাদের দেশের জন্যে ইতিবাচক। যদিও একসময় ইমরান খান নিজেই ছিলেন পাকিস্তানি সামরিক জান্তার পক্ষের খেলোয়াড়। পরে সুবিধা করতে না পেরে ইউটার্ন নিয়েছেন। তারপরও সার্বিকভাবে তাদের উপলব্ধি ইতিবাচক।
অন্যদিকে পাকিস্তানিদের একাত্তরে বাংলাদেশে ঘটানো জেনোসাইড নিয়ে সবচেয়ে পাঠক নন্দিত বই 'জেনোসাইড ৭১: তত্ত্ব তথ্য তর্ক' - এর লেখক হাসান মোরশেদ বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক অবস্থান বিশ্লেষণ করে বুঝিয়েছেন কিভাবে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছেন বঙ্গবন্ধু।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে আমরা একটা নির্দিষ্ট উচ্চতায় দেখি। কিন্তু রাজনৈতিক উৎকর্ষতায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আসন আরও উঁচুতে।
বঙ্গবন্ধুর মানুষের পক্ষে দীর্ঘ সংগ্রামের বর্ণনা দিতে গিয়ে এ লেখক বলেন, বৃটিশ ভারতের সংখ্যালঘু মুসলমানদের অধিকার আদায়ের ক্ষেত্র হিসেবে পাকিস্তান রাষ্ট্রের সৃষ্টি হলেও সামরিক বেসামরিক আমলাতন্ত্র এই রাষ্ট্রের গণমুখী চরিত্র বিকাশের অন্তরায়, এই সত্য তাঁর মতো করে এতো স্পষ্টভাবে আর কোন নেতা উপলব্ধি করেননি। তাঁর প্রণীত ছয় দফা কর্মসূচি কেবল বাঙালির মুক্তি সনদই ছিলো না, পাকিস্তান রাষ্ট্রের অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীরও অধিকার আদায়ের সুত্র ছিলো। সিন্ধের জাতীয়তাবাদী নেতা জিএম সৈয়দ, বেলুচ জাতীয়তাবাদী নেতা আকবর বুগতি'র প্রেরণা ছিলেন বঙ্গবন্ধু।
দীর্ঘদিন পরে যে কারণে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছেন বঙ্গবন্ধু সেটা বিশ্লেষণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, গোটা পাকিস্তানের একক নেতা হবার আইনী অধিকার পেলেও বঙ্গবন্ধু বাঙালির নিজস্ব রাষ্ট্রের আকাঙ্ক্ষাকে গুরুত্ব দিয়েছিলেন, সফল হয়েছিলেন। কিন্তু সেই ষাটের দশকে সামরিক একনায়কতন্ত্রের বিরুদ্ধে তিনি যে আপোষহীন সংগ্রাম শুরু করেছিলেন, আজকে এতো বছর পরও পাকিস্তানের নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতিপ্রিয় মানুষদের সেই সংগ্রাম করে যেতে হচ্ছে। বহু অপপ্রচারের ভেদ করে তাঁদের কাছেও তিনি আজ স্মরনীয় হয়ে উঠছেন তাঁর সাহস ও গনতন্ত্রের প্রতি আপোষহীনতার কারণে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সমাজকল্যাণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন বলেন, বঙ্গবন্ধুর অসামান্য দূরর্দশী নেতৃত্বকে পাকিস্তানিরা আজ উপলব্ধি করতে পারছে।
বঙ্গবন্ধু কেন পাকিস্তানে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছেন সেটা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আওয়ামী লীগের নতুন প্রজন্মের এই কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, বঙ্গবন্ধু কোনো ব্যক্তি বা সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে নয় বরং মুক্তিকামী মানুষের ন্যয় ও অধিকারের পক্ষে সংগ্রাম করেছেন। শুধু সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে নয়, বরং মানুষের নায্যতার জন্যে বঙ্গবন্ধু আন্দোলন করেছেন। এজন্য স্বাধীনতার ৫২ বছর পরে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১০, মে ১২, ২০২৩
এনবি/এসএ