ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

মোখা: ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় ব্যাপক প্রস্তুতি, কাল আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠক

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৫১ ঘণ্টা, মে ১২, ২০২৩
মোখা: ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় ব্যাপক প্রস্তুতি, কাল আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠক

ঢাকা: বঙ্গোপসাগরের ঘূর্ণিঝড় মোখা ক্রমশ উপকুলের দিকে এগিয়ে আসছে। এর তীব্রতা বাড়তে থাকায় আবহাওয়া অধিদপ্তর চার নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত জারি করেছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ পূর্বাভাসে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে দুই নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত নামিয়ে তার জায়গায় চার নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এর মানে হচ্ছে বন্দর ঘূর্ণিঝড় কবলিত। তবে ঘূর্ণিঝড়ের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেওয়ার মতো বিপজ্জনক পর্যায়ে এখনো যায়নি। এই ঝড়ের সম্ভাব্য গতিবেগ ঘণ্টায় ৫১ হতে ৬১ কিলোমিটার পর্যন্ত।

আবহাওয়া অধিদপ্তর তাদের সর্বশেষ পূর্বাভাসে জানায়, ঘূর্ণিঝড়টি সর্বশেষ পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। শুক্রবার (১২ মে) দুপুর বারোটায় এটি ছিল চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১০০৫ কিলোমিটার; কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৩৫ কিলোমিটার; মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৬৫ কিলোমিটার ও পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে। এটি আরও উত্তর-উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হচ্ছে।

ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে বাতাসের সর্বোচ্চ গতি এখন ঘণ্টায় ১৩০ কিলোমিটার, তবে দমকা এবং ঝড়ো হাওয়ার আকারে তা ১৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছে সাগর এখন বেশ বিক্ষুব্ধ। উত্তর বঙ্গোপসাগরের সব মাছধরা নৌকা এবং ট্রলারকে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে বলা হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক আজিজুর রহমান জানিয়েছেন ঘূর্ণিঝড়টি উপকূলের কাছে যখন আসবে তখন এর কেন্দ্রে বাতাসের গতিবেগ আরও বাড়তে পারে। এটির তীব্রতা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। এটির প্যাটার্ন আগে ছিল সিডিইউ, এখন এটি ব্যান্ড প্যাটার্নে রূপ নিয়েছে। এ ধরণ পরিবর্তনের কারণে ঘূর্ণিঝড়ে বাতাসের বেগ বেড়ে যায় ও বৃষ্টিপাতের তীব্রতাও বাড়ে। পাশাপাশি বজ্রপাতের পরিমাণও বেড়ে যায়।

তীব্র এ ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় প্রস্তুত সারা দেশে। উপকূলীয় অঞ্চলসহ দেশের প্রতিটি জেলা উপজেলায় মোখা মোকাবিলায় টিম গঠন করা হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। সারা দেশ থেকে বাংলানিউজের করেসপন্ডেন্টদের পাঠানো প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

চাঁদপুরে ৩৫৩ আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত
ঘূর্ণিঝড় মোখা চলাকালীন ও পরবর্তী সময়ে পরিস্থিতি মোকাবিলায় সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসন। দুর্যোগপূর্ণ সময়ে নদী উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দাদের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৩৫৩টি আশ্রয়কেন্দ্র। একই সাথে নগদ অর্থ ও শুকনো খাবার প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

শুক্রবার এসব তথ্য জানিয়েছেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) কামরুল হাসান। তিনি বলেন, জেলার ৮ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একই সাথে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভা হয়েছে।

রাত ৯টায় চাঁদপুর বন্দর ও পরিবহন কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, এখন পর্যন্ত চাঁদপুর-ঢাকা, চাঁদপুর-নারায়ণগঞ্জ রুটের লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। তবে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার সংবাদ পাওয়ায় আজকে যাত্রী সংখ্যা ছিল কম। আবহাওয়ার পরবর্তী সংবাদ ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনার আলোকে আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা  নেব।

চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ইমতিয়াজ হোসেন মোখা মোকাবিলায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গৃহীত পদক্ষেপ সমূহের তথ্য গণমাধ্যমকে দিয়েছেন। এতে উল্লেখ করা হয়, ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবিলায় জেলা ও উপজেলা কার্যালয় সমূহে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। জেলার নিয়ন্ত্রণ কক্ষের নম্বরগুলো হচ্ছে- ০১৭০০৭১৬৭০১, টেলিফোন নম্বর: ০২৩৩৪৪৮৭৫৯৬ অথবা ০২৩৩৪৪৮৭৪৭২।

কৃষি বিভাগকে বর্তমান মৌসুমে উৎপাদিত ফসল কাটা, স্বাস্থ্য বিভাগকে জরুরি মেডিকেল টিম গঠন এবং ওষুধ মজুদ রাখা, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগকে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা, জেলা পুলিশ, কোস্টগার্ড, আনসারকে আইন শৃঙ্খলা বিষয়ে সার্বিক দিক নির্দেশনা, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স বিভাগকে দুর্যোগ পূর্ববর্তী ও পরবর্তী উদ্ধার কাজে প্রস্তুত থাকা, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রেড ক্রিসেন্ট, জেলা স্কাউট, জেলা রোভার স্কাউট, বিএনসিসিসহ এনজিও প্রতিষ্ঠান সমূহকে দল প্রস্তুত রাখা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরকে মাইকিং করে সতকর্তামূলক প্রচারণার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

মজুদ রাখা হয়েছে ত্রাণ সামগ্রী। এর মধ্যে রয়েছে নগদ ১৭ লাখ ১৫ হাজার টাকা, চাল ৫০৫ মেট্রিক টন, ঢেউটিন ও গৃহ নির্মাণ মঞ্জুরি ১০ বাণ্ডিল, শুকনো খাবার ১৯০ প্যাকেট এবং শীতবস্ত্র (কম্বল) ৩৮৪০ পিস।

চাঁদপুর জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ শাখার সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী জেলা সদরে ২৯টি, ফরিদগঞ্জে ৩১টি, হাইমচরে ২৪টি, হাজীগঞ্জে ৪৪টি, কচুয়ায় ৫১টি, মতলব উত্তরে ৬২টি, মতলব দক্ষিণে ৮৮টি, শাহরাস্তিতে ২৪টি আশ্রয়ণকেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এসব আশ্রয়ণ কেন্দ্রে ১লাখ ১৪ হাজার ৫৬৭জন থাকার ধারণ ক্ষমতা রয়েছে।

এদিকে, চাঁদপুর পদ্মা, মেঘনা, ডাকাতিয়া নদী উপকূলীয় এলাকায় সচেতনতামূলক মাইকিং অব্যাহত রেখেছে কোস্টগার্ড চাঁদপুর স্টেশন। একই সাথে শহর ও আশপাশে ঘূর্ণিঝড় মোখা সম্পর্কে সর্বসাধারণকে সতর্ক থাকার জন্য প্রচারণা চালাচ্ছেন ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স চাঁদপুর।

নৌ পুলিশ চাঁদপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ কামরুজ্জামান জানান, ঘূর্ণিঝড় মোখা পূর্ব এবং পরবর্তী সময়ের সতর্কতা বিষয়ে আমাদের নৌ অঞ্চলে মাইকিং করে প্রচারণা চলছে। চাঁদপুর, শরীয়তপুর, লক্ষ্মীপুর ও কুমিল্লা জেলার যেসব থানা ও পুলিশ ফাঁড়ি রয়েছে সবাইকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ দিয়ে জনগণের জান-মালের নিরাপত্তার জন্য কাজ করছি এবং করব। বিশেষ করে লঞ্চঘাট ও ছোট নৌযানগুলো নিরাপদে রাখার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

উপকূলে আতঙ্ক থাকলেও পাথরঘাটায় প্রস্তুত ১৯৭ আশ্রয় কেন্দ্র
প্রচণ্ড গরম ও কোনো বাতাস না থাকায় পাথরঘাটার উপকূলীয় এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। কারণ, পাথরঘাটার নদী ও সাগর উপকূলে বাস করেন কয়েক হাজার মানুষ। ঝড় এলেই তাদের ক্ষতির মুখে পড়তে হয়। বিশেষ করে জলোচ্ছ্বাসে আক্রান্ত হন তারা। আসন্ন ঘূর্ণিঝড় মোখা নিয়েও তারা আছে ভয়ে। উপকূল জুড়ে বিরাজ করছে আতঙ্ক-উৎকণ্ঠা। এমন পরিস্থিতিতে তাদের দাবি উঁচু বাঁধের।

উপকূলের পদ্মা গ্রামের বাসিন্দা রশিদ উদ্দিন, রহমান মিয়া বলেন, একটা বন্যা আসবে সেটা জেনেছি, আমাদের ভীষণ ভয় হচ্ছে। ঝড়ের সময় মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে গেলেও, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ঘরবাড়ি। জলোচ্ছ্বাসের কারণে এবারও আমরা ক্ষতির মুখে পড়তে পারি। আমরা চাই বাঁধগুলো যেন আরও উঁচু হয়।

এদিকে মোখার ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনতে উপকূল ও নদীতে সচেতনতামূলক প্রচারণা করছে রেড ক্রিসেন্ট, সিপিপি, কোস্ট গার্ডসহ স্বেচ্ছাসেবক দল। ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলা প্রশাসন।

বরগুনা জেলায় মোট ৬৪২টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে; এর মধ্যে পাথরঘাটায় ১৯৭টি এর মধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ৮৯ টি। এছাড়া সিপিপির ১০৩ টি টিম প্রস্তুত রাখা রয়েছে। বরগুনা জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান বলেছেন, দুর্যোগ মোকাবিলায় জেলায় ২৯৪ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য মজুদ রাখা হয়েছে। দুর্যোগ পরবর্তী জরুরি ত্রাণ বাবদ ৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা বরাদ্দ হয়েছে ও ১৪২ বাণ্ডিল ঢেউটিন ও গৃহনির্মাণ ব্যয় বাবদ ৪ লাখ ২৬ হাজার টাকা, ২ হাজার কম্বল ও দুই হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার মজুদ রয়েছে। বরগুনা আড়াই কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের মাধ্যমে শিগগিরই তা সংস্কার করা হবে।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ফারজানা তাসমিন বলেন, ইতোমধ্যেই বোরো ধান, মুগডাল কাটতে মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার আগেই ফসল কাটা সম্ভব হবে।

পাথরঘাটা উপজেলা মেরিন ফিশারিজ কর্মকর্তা মো. রিয়াজ হোসেন বলেন, মৎস্যজীবী গ্রাম সমিতির মাধ্যমে সকল মাছ চাষি ও জেলেদের সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। মাছের ঘের নেট দিয়ে সংরক্ষণ করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুফল চন্দ্র গোলদার বলেন, বরগুনা জেলাসহ উপকূলীয় উপজেলা পাথরঘাটা ঝুঁকিতে। তাই ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবিলায় আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি। আমরা ইতোমধ্যেই আশ্রয় কেন্দ্রসহ উপকূলে সকল মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনগুলো খুলে দিতে নির্দেশ দিয়েছি। প্রয়োজনে ওইসব বিশ্ববিদ্যালয়ে অফিস রুমও খুলে দিতে হবে।

বাঁধ না থাকায় আতঙ্কিত কয়েক লাখ মানুষ
উপকূলীয় জেলা হওয়ায় ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের ঝুঁকির মধ্যেই বসবাস বাগেরহাটবাসীর। তবে নদী বেষ্টিত বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ, শরণখোলা, মোংলা ও রামপাল উপজেলার মানুষ একটু বেশি ঝুঁকিতে থাকেন সব সময়। কারণ, এই চার উপজেলার একটা বড় অংশ রয়েছে বেড়িবাঁধের বাইরে। ফলে ঘূর্ণিঝড় মোখার সময় যত ঘনিয়ে আসছে, এইসব উপজেলার কয়েক লাখ মানুষের আতঙ্ক তত বাড়ছে।

বিশেষ করে মোরেলগঞ্জ উপজেলার বারুইখালী, বহরবুনিয়া, পঞ্চকরণ, রামপালের ভোজপাতিয়া, পেরিখালী, মোংলা উপজেলার সোনাইলতলা, মোংলা পৌরসভার একটা অংশসহ বেশকিছু এলাকা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এসব এলাকাগুলোকে জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষার জন্য যেমন বাঁধ নেই, তেমনি যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নত নয়। যার ফলে যেকোনো দুর্যোগের এসব এলাকার মানুষের যান মালের ক্ষয়ক্ষতি বেশি হয়ে থাকে।

অন্যদিকে শরণখোলা উপজেলার বলেশ্বর নদীর তীরে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে করা বেড়িবাঁধ থাকলেও, এই উপজেলার সাউথখালী ইউনিয়নের বগী গ্রামে ২৫০টি এবং ভোলা নদীর চরে দুই সহস্রাধিক পরিবার বেড়িবাঁধের বাইরে রয়েছে। এছাড়া বাগেরহাট সদর উপজেলার কাড়াপাড়া ইউনিয়নের মাঝিডাঙ্গা এলাকায় ৫ শতাধিক পরিবার জলোচ্ছ্বাসের ঝুঁকিতে রয়েছেন।

আবার শরণখোলা উপজেলার রায়েন্দা থেকে সাউথখালী পর্যন্ত বিশ্বব্যাংকের নির্মাণাধীন বেড়িবাঁধে ফাটলের ঘটনা ঘটছে। ফলে বাঁধ এলাকাতেও আতঙ্কে থাকছেন সাধারণ মানুষ। গত বছর মে মাসে শরণখোলা উপজেলায় বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্মাণাধীন বেড়িবাঁধে ফাটল দেখা দেয়। মুহূর্তেই ফেটে যাওয়া এলাকায় বেড়িবাঁধের বাইরে থাকা গাবতলা গ্রামের এক বাসিন্দার ১০ কাঠা জমি গাছপালাসহ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়।

শরণখোলা উপজেলাকে রক্ষার জন্য একটি টেকসই বেড়িবাঁধ বাসিন্দাদের প্রাণের দাবি ছিল। সরকার বরাদ্দও দিয়েছিল। কিন্তু ইচ্ছেমতো কাজ করেছে ঠিকাদাররা। যেখানে মাটি দেওয়ার কথা সেখানে বালু দিয়েছে। ফলে নির্মাণ শেষ হওয়ার আগেই ফাটল দেখা দিচ্ছে।

নদীর পাশে থাকলেও মাঝিডাঙ্গায় কোনো বাঁধ নেই। প্রতিবছর-ই জোয়ারের পানিতে ডুবে যায় এলাকার অনেকাংশ। বিশেষ করে আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে হাঁটু সমান পানি উঠে যায় সব জায়গায়। স্থানীয়রা মিলে যে বাঁধ দেয়, তা পানির চাপ বাড়লেই ভেঙে যায়। কর্তা-ব্যক্তিরা তা পরিদর্শনেও যায়। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয় না। এমন অভিযোগ মোরেলগঞ্জ উপজেলা, বারুইখালী এলাকার বাসিন্দাদেরও।

বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ড নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাসুম বিল্লাহ বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ এলাকা আমরা পর্যবেক্ষণে রেখেছি। এছাড়া জরুরি প্রয়োজনে ত্রিশ হাজার জিও ব্যাগ ও দশ হাজার সিনথেটিক ব্যাগ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। মোরেলগঞ্জ, রামপাল ও মোংলা উপজেলার একটা বড় অংশকে জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায়  ৯০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য আমরা ডিপিপি পাঠিয়েছি। অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। অনুমোদন হলে দ্রুত কাজ শেষ হবে।

ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবিলায় সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছে জেলা প্রশাসন। বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আজিজুর রহমানের বলেন, জেলার সব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে। জেলার নয়টি উপজেলায় ৪৪৬টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যেখানে ২ লাখ ৩৫ হাজার ৯৭৫ জন আশ্রয় নিতে পারবে। জেলা সদর ও প্রতিটি উপজেলায় একটি করে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। নয় উপজেলায় ৮৪টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। রেড ক্রিসেন্ট, ফায়ার সার্ভিস ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার কয়েকশ স্বেচ্ছাসেবকদের প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ত্রাণ দিতে ৫২২ দশমিক ৮০০ মেট্রিকটন চাল, নগদ ১০ লাখ ১০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

৬ সদস্য বিশিষ্ট কন্ট্রোল রুম খুলেছে বিআইডব্লিউটিএ
ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের বরিশাল বিভাগ। এরই মধ্যে ৬ সদস্য বিশিষ্ট একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বরিশাল নদী বন্দর কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক।

এখন পর্যন্ত আমরা কোনো বিপদ সংকেতের আওতায় না আসলেও সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। ১৪, ১৫ ও ১৬ মে বিশেষ সতর্ক অবস্থানে আছি আমরা। এরই মধ্যে বরিশাল নদী বন্দরের সব লঞ্চ কর্মচারী ও মালিকদের এরই মধ্যে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

বরিশাল নদী বন্দর কর্মকর্তা আরও জানান, ৬ সদস্য নিয়ে একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। তারা সার্বক্ষণিক নৌ পথের মনিটরিং রাখবে। লঞ্চ কর্মচারি ও মালিকরা জানান, বিআইডব্লিউটিএ’র নির্দেশনায় তারা সতর্ক অবস্থানে আছেন। যেভাবে নির্দেশনা আসবে তারা সেই অনুযায়ী কাজ করবেন।

শনিবার (১৩ মে) আন্তঃমন্ত্রণালের বৈঠক
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান বলেছেন, অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবিলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে এবং শনিবার সকালে আন্তঃমন্ত্রণালয়ে বৈঠক ডাকা হয়েছে।

বিকেলে সাভারে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আন্তর্জাতিক নার্সিং দিবস উপলক্ষে আয়োজিত শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা জানান।

এনামুর রহমান বলেছেন, ঘূর্ণিঝড়ের গতিপ্রকৃতির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী সার্বক্ষণিক নজর রাখছেন। ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় প্রস্তুতি সম্পর্কে দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন। চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজারে ইতোমধ্যে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সমন্বিতভাবে ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলা ও উদ্ধার তৎপরতা নিশ্চিত করতে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠক ডাকা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১০৫০ ঘণ্টা, মে ১২, ২০২৩
এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।