ঢাকা: প্রতিবছর মে মাসের দ্বিতীয় রোববার দিনটিকে মা দিবস হিসেবে পালন করে বিশ্ববাসী।
আজ রোববার (১৪ মে) বিশ্ব মা দিবস।
শনিবার (১৩ মে) রাত সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা মেডিকেল জরুরি বিভাগে হুইলচেয়ার নিয়ে রোগী বহন করতে দেখা যায় সালমা বেগমকে।
গত ৩০ বছর ধরে দুই সন্তানের মা সালমা বেগম শরীরের ঘাম ঝড়িয়ে যাচ্ছেন, সন্তানদের ক্ষুধা নিবারণের জন্য। তারা যেন একটু ভালো থাকতে পারে, তাই উপার্জনের পেছনে ছুটছেন বছরের পর বছর ধরে। রাত নাই দিন নাই পরিশ্রম করে যাচ্ছেন তিনি। শরীরে ক্লান্তি চলে আসলেও কাউকে বুঝতে দেন না সালমা। নীরবে সেগুলো সহ্য করে আবারও উপার্জনের রাস্তায় ঝাঁপিয়ে পড়েন তিনি। পাশাপাশি কিডনি রোগে আক্রান্ত তার স্বামী মনির হোসেনের সেবাও করে যাচ্ছেন।
কথা হয় হুইলচেয়ারে রোগী বহনকারী দুই সন্তানের মা সালমা বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জ সোনারগাঁও এলাকায় স্বামী ও দুই সন্তানকে নিয়ে থাকে তিনি। তার ছেলের বয়স ১৮, মেয়ের বয়স ১৬। দুজনই লেখাপড়া করছে।
মা দিবসের কথা বলতেই সালমা একটু হেসে বলেন, মার কাছেই জানতে চাচ্ছেন মা দিবস কথা? মা হয়েছি বলেই বছরের পর বছর ধরে উপার্জনের জন্য নিজের শরীরের ঘাম ঝরিয়ে যাচ্ছি। সন্তানদের মুখে একটু হাসি ফোটানোর জন্য, একটু ভালো খাবার দেওয়ার জন্য।
তবে লক্ষ্য করা যায় হঠাৎ সালমা বেগম ওড়না দিয়ে চোখ মুছে বলেন, মা দিবস বছর ঘুরিয়ে আসলে শুনতে পাই কিন্তু মা দিবস সম্পর্কে কিছুই জানিনা। আমার সন্তানরা জানে কিনা তাও জানিনা। যদি তারা জেনে থাকতো হয়তোবা আমাকে নিয়ে আনন্দ করতো।
তিনি আরও বলেন, চার বছর বয়সে বাবাকে হারিয়েছি, মাকে তেমন কাছে পাইনি। এতিমদের মতো বেড়ে উঠেছি। মানুষের বাসায় কাজ করেছি। এক সময় অল্প বয়সে বিয়ে হলো। স্বামীর উপার্জন তেমন ছিল না। সংসারও ঠিকমত চলেছিল না। বিয়ের আগে থেকেই শরীরের ঘাম ঝরিয়ে উপার্জন করি। এরপরে এলো কোল জুড়ে সন্তান। আগে উপার্জন করতাম নিজের জন্য। মা হবার পরে সেই উপার্জনের জন্য কষ্টের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিলাম। শরীরের ঘাম সেই যে ঝরা শুরু হয়েছে, এখনো ঝড়েই যাচ্ছে। একমাত্র সন্তানদের জন্যই।
সালমা বলেন, আমার মনে হয় বাংলাদেশে কোনো মানুষ নিজে ভালো থাকার জন্য এত কষ্ট কখনো কেউ করে না। আমি যে কষ্ট করছি, সেটা আমার সন্তানের জন্য, আমার অসুস্থ স্বামীর জন্য। গত ৩৫ বছর ধরে আমি কষ্ট করে যাচ্ছি, ঘাম জড়িয়ে কাজ করে যাচ্ছি। এখনও করে যাচ্ছি। অথচ এক মায়ের কাছেই কাছে জানতে এসেছেন মা দিবসের কথা। মায়েরা শুধু দিয়ে যায় কিছু পাবার জন্য নয়। কথাটা মনে রাইখেন।
কথা বলতে বলতে এরই মধ্যে এক রোগী গাড়ি থেকে নেমে তার হুইলচেয়ারে উঠে পড়ে। সেই রোগীকে নিয়ে হুইল চেয়ার ঠেলতে ঠেলতে হাসপাতালের ভেতরে চলে যায় সালমা বেগম।
এর আগে তিনি জানিয়েছেন, রোগীরা খুশি হয়ে যে যা দেন, সেটা নিয়েই তিনি খুশি থাকেন। কখনো ৩০০ টাকা বা ৪০০ টাকাও ইনকাম হয়ে থাকে।
বাংলাদেশ সময়: ১১৩২ ঘণ্টা, মে ১৪, ২০২৩
এজেডএস/এসআইএ