ঢাকা: খুব দ্রুতই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায় সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ সফররত ইউরোপের মানবাধিকার প্রতিনিধিদল।
এসময় ইউরোপীয় ইউনিয়নও দ্রুতই এ গণহত্যার স্বীকৃতি দেবে বলেও তারা আশা প্রকাশ করেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যার স্বীকৃতি আদায়ে সোমবার (২২ মে) অনুষ্ঠিত হবে ‘বাংলাদেশ জেনোসাইড ১৯৭১’ শীর্ষক সম্মেলন।
এ উপলক্ষে রোববার (২১ মে) জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আন্তর্জাতিক গণহত্যা ও মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এ সম্মেলনের আয়োজন করেছে প্রজন্ম’৭১, আমরা একাত্তর ও ইউরোপিয়ান বাংলাদেশ ফোরাম (ইআরএফ)।
এসময় তারা আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা শক্তি বাংলাদেশের বিরোধিতা করে। এছাড়া বাংলাদেশের ভেতের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ বিপক্ষ নিয়ে বিপরীতমুখী রাজনীতি আজও চলমান। এসব কিছুই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের গণহত্যার স্বীকৃতিকে বিলম্বিত করেছে। তবে এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা বাংলাদেশের গণহত্যাকে স্বীকৃতি দিচ্ছে। অচিরেই জাতিসংঘ থেকে স্বীকৃতি আদায়ও সম্ভব হবে।
রোববার প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে মিট দ্য প্রেসে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য অ্যারমা দত্ত।
সভাপতিত্ব করেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন। এসময় বক্তব্য রাখেন সাবেক ডাচ এমপি ও মানবাধিকার কর্মী হ্যারি ভ্যান বোমেল, আমস্টারডামের ভ্রিজে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. অ্যান্থনি হলসল্যাগ, যুক্তরাজ্যের সাংবাদিক ক্রিস ব্ল্যাকবার্ন, ইউরোপিয়ান বাংলাদেশ ফোরামের (ইবিএফ) সভাপতি বিকাশ চৌধুরী বড়ুয়া, ইবিএফ—এর যুক্তরাজ্য শাখার সভাপতি আনসার আহমেদ উল্লাহ প্রমুখ।
হ্যারি ভ্যান বোমেল বলেন, বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের সময় বিশ্ব রাজনীতিতিতে শীতল যুদ্ধ চলছিল। সে কারণেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের পক্ষে ছিল আর সোভিয়েত ইউনিয়ন ভারত ও বাংলাদেশের পক্ষে অবস্থান নেয়। তার প্রভাবেই এটি বিলম্বিত।
অ্যারমা দত্ত বলেন, মুক্তিযুদ্ধের গণহত্যার স্বীকৃতির জন্য আমরা ধাপে ধাপে একটি পর্যায়ে এসে পৌঁছেছি। আমরা এ গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে প্রত্যয়ী। জাতিসংঘ থেকে খুব দ্রুতই এ গণহত্যার স্বীকৃতি প্রত্যাশা করি আমরা। এজন্য যারা এ গণহত্যার স্বীকৃতি আদায়ে বাঙলাদেশ সফর করছেন তাদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।
বিকাশ চৌধুরী বড়ুয়া বলেন, বাংলাদেশেও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ বিপক্ষ নিয়ে বিপরীতমুখী রাজনীতি আজো চলমান। এটা গণহত্যার স্বীকৃতি আদায়ে বাধা সৃষ্টি করে চলেছে।
ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, বাংলাদেশের গণহত্যার স্বীকৃতি আদায়ে যে আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি উদ্যোগ। মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত গণহত্যার যাবতীয় তথ্য—প্রমাণ আমাদের আছে। গণহত্যার সংজ্ঞার সঙ্গে তা পুরোপুরি মিলে যায়। আমাদের এ দাবির সঙ্গে বিশ্বের মানুষের সম্পৃক্তাও বাড়ছে। গবেষক, রাজনীতিবিদ প্রত্যেককেই যার যার অবস্থান থেকে এ দাবি আদায়ে এগিয়ে আসতে হবে। মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের ৫১ বছর পরে এসে আমাদের গণহত্যার স্বীকৃতি আদায়ের দবি জানাতে হচ্ছে। এটা খুব মর্মান্তিক বিষয়। তবে, আমরা প্রত্যয়ী। মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহিদ ও ২ লাখ মা—বোনের আত্মত্যাগের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায় করা খুব দ্রুতই সম্ভব হবে বলে বিশ্বাস করি।
সোমবার (২২ মে) সকাল ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হবে ১৯৭১'এ বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যার স্বীকৃতির জন্য আন্তর্জাতিক সম্মেলন। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. আখতারুজ্জামান, সভাপতিত্ব করবেন আমরা একাত্তরের চেয়ারপার্সন মাহবুব জামান। সূচনা বক্তব্য রাখবেন আমরা একাত্তরের প্রধান সমন্বয়ক হিলাল ফয়েজী।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০০ ঘণ্টা, মে ২১, ২০২৩
এইচএমএস/এসএএইচ