ঢাকা: রাজধানী ঢাকায় বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)-এর উদ্যোগে বায়ুদূষণ কমাতে জরুরি ভিত্তিতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সোমবার (২২ মে) শাহবাগ চত্বরে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন- বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক স্থপতি ইকবাল হাবিব, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও আঞ্চলিক পরিকল্পনা বিভাগের শিক্ষক ও ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. আদিল মোহাম্মদ খান, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক আলমগীর কবির, বারসিকের সমন্বয়কারী মো. জাহাঙ্গীর আলম, সিজিইডির নির্বাহী পরিচালক আব্দুল ওহাব, বিএনসিএ’র সহ-সমন্বয়ক শামস সুমন, গ্রিন ভয়েজের সহ-সমন্বয়ক হুমায়ুন কবির সুমন, সিপিইডি-এর ইমরান সরকার, পরিবেশ উদ্যোগের সমন্বয়ক মাহমুদা ইসলাম ও ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিসের নির্বাহী সমন্বয়কারী সোহানুর রহমান।
ক্যাপসের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশের পরিবেশ দূষণ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, বিভিন্ন শহর ধীরে ধীরে বসবাসের যোগ্যতা হারাচ্ছে। সারাদেশে প্রবাহমান তীব্র দাবদাহের পেছনে জলবায়ু পরিবর্তনের পাশাপাশি বায়ুদূষণও দায়ী। ধূলিকণা ও দূষিত গ্যাসের তাপ শোষণ করার ক্ষমতা থাকার কারণে বর্তমানে অত্যধিক দূষিত বায়ুতে অবস্থিত ধূলিকণা এবং গ্যাসীয় পদার্থগুলো সূর্যের তাপমাত্রাকে শোষণ করে তাপপ্রবাহ সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখছে। পাশাপাশি সালাফার ডাই অক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড, কার্বন মনো অক্সাইড, কার্বন ডাই অক্সাইড তাপমাত্রা বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা রাখে। সুতরাং তাপমাত্রা বাড়া কমাতে বায়ুদূষণ কমানো জরুরি। অথচ দেশে বায়ুদূষণ কমানোর ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সমন্বিত কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। বরং প্রতিনিয়ত বায়ুদূষণের নতুন নতুন ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে। অতি দ্রুত বায়ুদূষণ কমাতে পদক্ষেপ না নিলে জনজীবন আরও দুর্বিষহ হয়ে উঠবে। তিনি বায়ু দূষণ ও তাপমাত্রা কমানোর জন্য বনায়ন ও জলাভূমি সংরক্ষণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের যুগ্ম সম্পাদক স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, বায়ুদূষণের জন্য আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়ে বেড়ে উঠবে। এ জায়গা থেকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে আমরা দায়বদ্ধ। নিশ্চয়ই আমরা ঘুরে দাঁড়াবো। আল্লাহ সুবহানাল্লাহু তাআলা আমাদের এমন এক দেশ দিয়েছেন যেখানে বীজ বপন করলেই গাছ হয়, শুধু লালন-পালন করলেই আমরা এ ক্ষতিকর বায়ুদূষণ থেকে মুক্তিলাভ করতে পারি। আজকে আমরা সবাই অঙ্গীকারবদ্ধ হই এ শহরকে আবার সাজাবো এবং এর জন্য সবাই একসঙ্গে কাজ করবো।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও আঞ্চলিক পরিকল্পনা বিভাগের শিক্ষক ও ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, বাংলাদেশে বায়ুদূষণ এখন একটি উদ্বেগজনক জায়গায় আছে, অথচ রাষ্ট্র কিন্তু এখানে নির্বিকার। এ বায়ুদূষণ নিয়ে যে গবেষণা হচ্ছে বেশির ভাগই হচ্ছে বেসরকারি উদ্যোগে। সরকারি যে কয়েকটা গবেষণা হচ্ছে সেখানে অল্প জায়গাতে বায়ুমান পরিমাপ করা হচ্ছে। কিন্তু তা দিয়ে পুরো শহরের যে ক্রান্তিক অবস্থা সেটা বোঝার উপায় নেই। অথচ রাষ্ট্রর উচিত ছিল সরকারিভাবে সবাইকে নিয়ে আলোচনা করা, গবেষণা করা ও করণীয়গুলো ঠিক করা।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক আলমগীর কবির বলেন, বায়ুদূষণের ফলে ধীরে ধীরে আমরা অসুস্থ জাতিতে পরিণত হচ্ছি। সবাইকে নিয়মিতভাবে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে সরকারের সঙ্গে একত্রিত হয়ে কাজ করতে হবে। সরকারকে বিভিন্ন পর্যায়ে দূষণের উৎসগুলো কমিয়ে আনতে আইনের প্রয়োগ করতে হবে।
বারসিকের সমন্বয়কারী মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বায়ুদূষণ আমাদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ বায়ুদূষণ আমাদের সমস্ত নগর এলাকার মানুষের জীবনকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। নগর হলো উন্নত জীবন ধারণের স্থান হিসেবে বিবেচিত। কিন্তু অপরিকল্পিত উন্নয়ন, ইটভাটা, যানবাহন ও শিল্পকারখানার ধোঁয়ার কারণে নগরের বায়ু প্রতিনিয়ত দূষিত হচ্ছে এবং পরিবেশ দিন দিন বসবাসের জন্য অযোগ্য হয়ে যাচ্ছে। তাই বায়ুদূষণ কমানোর জন্য এখনই উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি।
ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিসের নির্বাহী সমন্বয়কারী সোহানুর রহমান বলেন, প্রাণঘাতী বায়ুদূষণের মোকাবিলায় সরকারি পদক্ষেপ কেবল একটি দায়িত্ব নয়, নৈতিক আবশ্যক। কারণ এটি আমদের শিশু ও তরুণদের নির্মল শ্বাস-প্রশ্বাসের অধিকারকে ক্ষুণ্ন করে। বায়ুদূষণের কারণে আমাদের ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। তাই সরকারকে দ্বৈতনীতি পরিহার করে পরিবেশগত সুবিচার প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগী হতে হবে এখনই।
স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. গুলশান আরা লতিফা বলেন, ঢাকা একদিকে যেমন ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা হিসেবে পরিচিত অন্যদিকে বায়ুদূষণের পরিমাণও দিন দিন বেড়ে চলেছে। এর কারণে স্বাস্থ্য ঝুঁকি, পরিবেশ অবক্ষয় ও নানাবিধ সম্পদগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে নিজেদের রক্ষা করতে আমাদের প্রচুর গাছ লাগাতে হবে।
স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মাহমুদা পারভীন বলেন, অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে ঢাকা শহরে প্রতিনিয়ত বাড়ছে নাগরিক ভোগান্তি। এসব ভোগান্তির মধ্যে অন্যতম প্রধান কারণ হল বায়ুদূষণ, যা আমাদের জীবনকে করে তুলছে অসহনীয়।
পরিবেশ উদ্যোগের সমন্বয়ক মাহমুদা ইসলাম বলেন, বায়ুদূষণে প্রতিনিয়ত ঢাকা প্রথম দশটি শহরের মধ্যে থাকার পরেও কোনো সমন্বিত উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। উপরন্ত যেসব আইন-বিধিমালা আছে সেগুলো ঠিকমতো মানা হচ্ছে না বরং গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে। ধীরে ধীরে আমরা এক ভয়ঙ্কর ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।
সিজিইডির নির্বাহী পরিচালক আব্দুল ওহাব বলেন, এ নগরের বায়ুদূষণ কমানোর জন্য সরকার ও জনগণকে সর্বাত্মকভাবে চেষ্টা করতে হবে। যেসব উৎস থেকে বায়ুদূষণ হচ্ছে তা নিরসনের জন্য প্রযুক্তিগত ব্যবস্থা নিতে হবে ও সচেতন হতে হবে।
মানববন্ধনে আরও উপস্থিত ছিলেন- স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশসহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকামণ্ডলী ও শিক্ষার্থী, বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের গবেষক এবং বারসিক, বিএনসিএ, সেভ ফিউচার বাংলাদেশ, জিএলটিএস, গ্রিন ভয়েজ, পরিবেশ উদ্যোগ, সিপিআরডি, সিজিইডি ও ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিসসহ অন্যান্য পরিবেশবাদী সংস্থার সদস্যরা।
বাংলাদেশ সময়: ০৯০৯ ঘণ্টা, মে ২৩, ২০২৩
এইচএমএস/আরবি