কিশোরগঞ্জ: কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলায় শিশু লাব্বি ওরফে রাব্বি (৫) হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত দুই আসামির মধ্যে মো. দিদারুল ইসলাম পায়েল (৩৩) নামে এক আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
বুধবার (৩১ মে) বিকেলে কিশোরগঞ্জ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. আশিকুর রহমানের আদালতে আসামি মো. দিদারুল ইসলাম পায়েল স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরে বিচারকের নির্দেশে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
নিকলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. সারোয়ার জাহান বাংলানিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গ্রেপ্তার আসামি মো. দিদারুল ইসলাম পায়েল কিশোরগঞ্জ জেলার নিকলী উপজেলার ছাতিরচর দক্ষিণপাড়া গ্রামের তৈয়ব আলী ওরফে বছিরের ছেলে এবং আসামি আব্দুল কাইয়ুম ওরফে তনয় খান (১৯) একই উপজেলার কূর্শা মাইজহাটি গ্রামের জমশেদ খানের ছেলে।
অন্যদিকে হত্যাকাণ্ডের শিকার রাব্বি কিশোরগঞ্জ জেলার নিকলী উপজেলার সদর ইউনিয়নের কূর্শা মাইজপাড়া গ্রামের আমির হোসেনের ছেলে।
পুলিশ জানায়, রাব্বি স্থানীয় কূর্শা বিদ্যাময় মডেল একাডেমি কিন্ডারগার্টেনে প্লে শ্রেণিতে পড়ত। গত শুক্রবার (১৯ মে) সন্ধ্যা ৬টার দিকে রাব্বি তার মাকে বলে বাসা থেকে বের হয়। পরে আর বাসায় ফিরে আসেনি। অনেক খোঁজ করেও কোথাও তার সন্ধান পাওয়া যায়নি। পরদিন শনিবার (২০ মে) দুপুর ২টার দিকে মাইজপাড়া গ্রামের তুহিনের একচালা ছাপরা ঘরের চৌকির নিচ থেকে রাব্বির মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
এ ঘটনায় শনিবার (২০ মে) রাতেই রাব্বির বাবা আমির হোসেন নিকলী থানায় অজ্ঞাত আসামি উল্লেখ করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ রাসেল শেখের নির্দেশে মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করেন নিকলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সারোয়ার জাহান।
পুলিশ গোয়েন্দা নজরদারী বাড়িয়ে আসামি মো. দিদারুল ইসলাম পায়েল ও আব্দুল কাইয়ুম ওরফে তনয় খানের অবস্থান শনাক্ত করে। এরপর মঙ্গলবার (৩০ মে) দিনগত রাত পৌনে ১০টার দিকে পুলিশ অভিযান চালিয়ে নিকলী উপজেলার রসুলপুর বাজার থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে। পরে গ্রেপ্তার পায়েল ও তনয়ের দেখানো মতে রাব্বির সঙ্গে থাকা একটি খেলনা গাড়ি ও একটি ক্রিকেট বল উদ্ধার করে পুলিশ।
বুধবার (৩১ মে) বিকেলে কিশোরগঞ্জ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. আশিকুর রহমানের আদালতে আসামি মো. দিদারুল ইসলাম পায়েলকে হাজির করা হয়। পরে তিনি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
পুলিশ আরও জানায়, কিছুদিন আগে শিশুটির (রাব্বি) ফুফুর সঙ্গে ডিভোর্স হয় দিদারুল ইসলাম পায়েলের। এ কারণে রাব্বির বাবা আমির হোসেনের সঙ্গে পায়েলের কথা কাটাকাটি ও মারামারি হয়। এ নিয়ে পায়েল ক্ষোভে আমির হোসেনের পরিবারকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য বন্ধু তনয় খানকে সঙ্গে নিয়ে শিশু রাব্বিকে ধরে নিয়ে যান। পরে মুখের ভেতর মাটি ভরে ঘাড় মটকিয়ে রাব্বিকে হত্যা করেন তারা।
শিশু রাব্বি হত্যার বিষয়ে বুধবার (৩১ মে) নিজ কার্যালয়ের কনফারেন্স রুমে প্রেস ব্রিফিংয়ের করেন পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ রাসেল শেখ।
তিনি রাব্বি হত্যার রহস্য উদঘাটনসহ আসামিদের গ্রেপ্তার নিয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন-অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) মো. আল আমিন হোসাইন, হোসেনপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুজন চন্দ্র সরকার, নিকলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সারোয়ার জাহানসহ অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৬ ঘণ্টা, জুন ০১, ২০২৩
আরএ