ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিক গুদাম স্থানান্তরে কাজ করছে ডিএসসিসি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫২ ঘণ্টা, জুন ৪, ২০২৩
পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিক গুদাম স্থানান্তরে কাজ করছে ডিএসসিসি

ঢাকা: পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিক গুদাম স্থানান্তর প্রক্রিয়া বাস্তবায়নে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। ডিএসসিসির আওতাধীন এলাকায় বিস্ফোরক জাতীয় প্লাস্টিক ও কেমিকেল ব্যবসা পরিচালনা করা প্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকা তৈরির লক্ষ্যে ২০২০ সালের ২০ ডিসেম্বর থেকে জরিপ কাজ শুরু হয়।

এর আগে একই বছরের ৮ অক্টোবর মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে পুরান ঢাকার কেমিকেল গোডাউনের তালিকা তৈরির জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।

এ বিষয়ে ডিএসসিসি অঞ্চল-৪ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মো. হায়দর আলী, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা আরিফুল হক ও প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিনকে প্রধান করে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর এবং বিস্ফোরক পরিদপ্তরসহ সরকারের আরও বিশেষ তিনটি সংস্থার প্রতিনিধিদের নিয়ে টিম গঠন করা হয়েছে।

টিমগুলো প্রায় ২ মাস সময় নিয়ে সে সময় দক্ষিণ সিটির কর অঞ্চল ৩, ৪ ও ৫ এ জরিপ কাজ পরিচালনা করে। এরপর ২০২১ সালের এপ্রিলে পুরান ঢাকায় বিদ্যমান বিস্ফোরক জাতীয় প্লাস্টিক ও কেমিকেল ব্যবসা পরিচালনা করা প্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠায় ডিএসসিসি।  

তালিকায় অঞ্চল ৩, ৪ ও  ৫ এলাকায় অনুসন্ধান চালিয়ে ১ হাজার ৯২৪টি কেমিকেল গোডাউনের তথ্য সরবরাহ করা হয়। এর মধ্যে অঞ্চল-৩ এ ১৩০১টি, অঞ্চল-৪ এ  ৫৮৫টি এবং অঞ্চল-৫ এ ৩৮টি রাসায়নিক গুদাম ও প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে অঞ্চল-৩ এর ইসলামবাগে ৫০০ মতো রাসায়নিক গুদাম ও প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো তালিকায় কেমিকেলের ধরন এবং ঝুঁকির মাত্রা বিবেচনায় অতি ঝুঁকিপূর্ণ, মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ ও নিম্ন ঝুঁকিপূর্ণ গুদামের সংখ্যা এবং এসব গুদামে রাখা রাসায়নিক দ্রব্যাদির নামও উল্লেখ করা হয়েছে।

রাসায়নিক গুদাম স্থানান্তর বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, আমি দায়িত্ব নিয়ে বলতে পারি, একমাত্র ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনই তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করেছে। চুড়িহাট্টার দুর্ঘটনার পর থেকে আমরা কিন্তু সম্পূর্ণরূপে বাণিজ্য অনুমতি যেটা আমরা দিয়ে থাকি - ট্রেড লাইসেন্স, সেটা আমরা বন্ধ করে দিয়েছি। এ কারণে ডিএসসিসি ব্যাপক রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কিন্তু সরকারি সিদ্ধান্তের আলোকে আমরা এই পদক্ষেপ নিয়েছি। আমি অবাক হই, সিটি করপোরেশন থেকে কোনো ধরনের বাণিজ্যিক অনুমতি ছাড়াই কীভাবে তারা এই রাসায়নিক দ্রব্যাদি আমদানি করে, কীভাবে গুদামজাত করে এবং কীভাবে তারা সবার চোখের সামনে দিয়ে ব্যবসা করছে। এগুলো আসলে খুবই অবাক কাণ্ড! দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ যতক্ষণ পর্যন্ত না এটাকে সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব হিসেবে সময়লব্দ অনুযায়ী (টাইম বাউন্ড) কাজ করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত এই সমস্যা রয়ে যাবে।

মেয়র বলেন, শিল্পমন্ত্রণালয় একটি প্রকল্প নিয়েছে—কেরানীগঞ্জে এসব গুদামগুলো স্থানান্তর করা হবে। সেটা নিয়ে আমরা কথা বলেছি। এরই মাঝে আমরা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে সভা করেছি, শিল্প মন্ত্রণালয় সভা করেছি, বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সভা করেছি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে নিয়ে একটি উচ্চতর কমিটি করে দেওয়া হয়েছে, সেখানেও আমরা সভা করেছি। আমাদের ওপর যে দায়িত্ব ছিল আমরা তা পালন করেছি। অবৈধ রাসায়নিক গুদামের তালিকা করার কথা বলা হয়েছিল, আমরা তা সম্পন্ন করেছি। কিন্তু আজ অবদি সেরকম কোনো কার্যকর পদক্ষেপ আমরা পাচ্ছি না। সুতারাং সিটি করপোরেশন সম্পূর্ণরূপে তার দায়িত্ব পালন করেছে।

তিনি বলেন, পুরান ঢাকা থেকে কেমিকেল কারখানা ও গুদাম সরাতে ডিএসসিসি যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছে। ২০১৭ সালের পর থেকে আর কোন ট্রেড লাইসেন্স দিচ্ছি না। কিন্তু তারপরও দেখা যাচ্ছে যে, স্থানান্তর প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রিতার কারণে সেখানে (পুরান ঢাকায়) বেআইনিভাবে এখনো কেমিকেল কারখানা ও গুদাম চালু রয়েছে।

পুরান ঢাকায় ঘটে যাওয়া অগ্নিকাণ্ডের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এ ধরনের দুর্ঘটনা অত্যন্ত অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত। বিষয়টি আমি অন্যান্য কর্তৃপক্ষের নজরে এনেছি। এগুলো দ্রুত যেন স্থানান্তরের ব্যবস্থা করে সেজন্য আমি শিল্পমন্ত্রীর সঙ্গে, বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সভা করেছি। আমরা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছি ,কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। প্রত্যেক বছরই প্রাণহানি হচ্ছে, দুর্ঘটনা ঘটছে। সুতরাং অনুরোধ করব এ ব্যাপারে তারা যেন দ্রুত যথাযথ ব্যবস্থা নেয়। প্রতি বছরই এমন দুঃখজনক ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে। শুধু নিমতলী বা চুড়িহাট্টা নয়, প্রতিবছরই দেখছি এমন ঘটনা ঘটছে। এর একমাত্র কারণ ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় এসব ঝুঁকিপূর্ণ কারখানা, গুদাম পরিচালিত হওয়া। এগুলোর সব স্থানান্তর না হওয়া পর্যন্ত এ রকম দুর্ঘটনা ঘটতেই থাকবে। তাই এগুলোকে স্থানান্তর করতে হবে।

বাঙরাদেশ সময়: ১৬৫২ ঘণ্টা, জুন ৪, ২০২৩
এইচএমএস/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।