ঢাকা: বীর মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা সেবায় সরকার বাৎসরিক ৭৫ হাজার টাকা এবং জটিল রোগের ক্ষেত্রে দুই লাখ টাকা মূল্যের স্বাস্থ্য সেবা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়। দেশের সব জেলা, উপজেলা পর্যায়ের পাশাপাশি ২৪ টি বিশেষায়িত হাসপাতেলে এ স্বাস্থ্য সেবা দেওয়া হবে।
পাশাপাশি যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে বিনামূল্যে বরাদ্দকৃত সরকারি আবাসন ‘বীর নিবাস’ ক্ষতিগ্রস্ত হলে তা পুনঃনির্মাণের জন্য এককালীন ৫০ হাজার টাকার অনুদান দেওয়া হবে।
সোমবার (৫ জুন) বিকেলে রাজধানীর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা জানান মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।
এই সমঝোতা স্মারকের মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের পক্ষে স্বাক্ষর করেন সিনিয়র সচিব খাজা মিয়া এবং স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের পক্ষে সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার।
সরকারি হাট-বাজার ইজারার ৪ শতাংশ অর্থ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা সেবা বা কল্যাণে ব্যয় করা হবে উল্লেখ করে মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, এই অর্থ কীভাবে তাদের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হবে সেজন্যই মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে। কারণ যারা এই চিকিৎসা দেবেন তারা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে। আর তাদের মন্ত্রণালয় নির্দেশ ছাড়া তো আমরা এ সেবাটা পাব না। সেজন্যই মূলত আমাদের এই সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করা। যদিও এই স্বাস্থ্য সেবা আমাদের পাঁচ বছর যাবত চলমান আছে। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে এখনো তেমনভাবে জনপ্রিয় হয়নি।
মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসার জন্য টাকা হাসপাতালে অগ্রিম দেওয়া হয় জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, কারণ যদি চিকিৎসকদের কাছে টাকা না থাকে তাহলে তারা চিকিৎসা দেবে কী করে? এজন্য নীতিমালায় সুস্পষ্টভাবে বলেছি ৭৫ ভাগ টাকা খরচ হওয়ার পরই তারা আমাদের কাছে পুনরায় টাকা চাইবে। তাৎক্ষণিকভাবে আমরা সেই টাকা দিয়ে দেই। অর্থাৎ রিভোল ফান্ডের মত। টাকার অভাবে কোনো মুক্তিযোদ্ধা যেন চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত না হন, সে জন্যই এই অর্থ অগ্রিম দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, জাতীর শ্রেষ্ঠ সন্তান যারা দেশকে স্বাধীন করে দিয়েছেন তারা যেন শেষ জীবনে এসে তাদের প্রাপ্য স্বাস্থ্য সেবা টুকু লাভ করতে পারেন। কাজটা খুব সামান্য হলেও আমি মনেকরি এই পদক্ষেপটা অনেক বড় একটা বিষয়। যেহেতু তারা দেশের সিনিয়র সিটিজেন এবং বয়সেও কেউ সত্তরের নিচে নেই তাই চিকিৎসকদের প্রতি অনুরোধ করব তারা যেন মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি অত্যন্ত সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব দেখান।
অনুদানের অর্থ দুই লাখ টাকা থেকে বাড়ানো হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, মন্ত্রণালয়ের মিটিংয়ে আমরা পরিকল্পনা করছি এই অর্থ দুই লাখষ টাকা থেকে বাড়িয়ে কীভাবে তিন লাখ করা যায়। কারণ যখন একটা প্রজ্ঞাপন জারি হয় তার একটা নিয়ম আছে। এখানে সরকারের মতামত নিতে হয়। তবে আমাদের এই সক্ষমতা আছে। তাই আশা করছি অচিরেই তিন লাখ টাকার বিষয়টা আমরা বাস্তবায়ন করতে পারব। পাশাপাশি কোনো মুক্তিযোদ্ধার চিকিৎসার ক্ষেত্রে মেডিকেল বোর্ড যদি মনে করেন দুই লাখ টাকার বেশি অর্থ প্রয়োজন, তাহলে সেটা দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে মেডিকেল বোর্ডের অনুমতির প্রয়োজন লাগবে। অর্থাৎ যত টাকাই প্রয়োজন মেডিকেল বোর্ড মনে করলে তত টাকাই দেওয়া হবে মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসার জন্য।
মন্ত্রী আরও বলেন, আমরা চেষ্টা করছি মুক্তিযোদ্ধাদের মাসে যে ওষুধের প্রয়োজন হয় সেগুলো যেন তারা নিকটস্থ ফার্মেসি থেকে বাকিতে নিতে পারেন এমন ব্যবস্থা করার। মুক্তিযোদ্ধারা থেকে তাদের প্রয়োজনীয় ওষুধ নেবেন। ফার্মেসিগুলো তা বিল করে রাখবে, পরে আমরা তা পরিশোধ করে দেব।
মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব খাজা মিয়া বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধারা যত দিন বেঁচে থাকবেন, ততদিন তাদের চিকিৎসা সেবা দেওয়া হবে। রাষ্ট্র কখনো এই দায় নিতে চায় না যে কোনো মুক্তিযোদ্ধা বিনা চিকিৎসায় বা অবহেলায় থাকুক।
স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে আমরা সব নাগরিকের বিনা মূল্যে স্বাস্থ্য দেওয়ার অঙ্গীকার করেছি। যা আমাদের সংবিধানে উল্লেখ আছে। কিন্ত ২০৩০ সাল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অনেক লম্বা সময়। সে সময় পর্যন্ত অনেক মুক্তিযোদ্ধারাই আমাদের ছেড়ে চলে যাবেন। তাই এই সেবা তাদের জন্য এখন থেকেই চালু করছি।
মুক্তিযোদ্ধাদের নিরবিচ্ছিন্ন চিকিৎসা সেবা দেওয়ার বিষয়ে স্বাস্থ্য সচিব বলেন, বয়স হলে একজন মানুষের নিরবিচ্ছিন্ন চিকিৎসা সেবার প্রয়োজন আছে। প্রতিবার ডাক্তারের কাছে গেলে তাকে ফি দিতে হয়, টেস্ট করতে হয় একই সঙ্গে নানাবিধি খরচ আছে। যা মুক্তিযোদ্ধা থেকে শুরু করে অনেকের পক্ষে বহন করা সম্ভব হয় না। তাই মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ ধরনের উদ্যোগ খুবই প্রশংসনীয়। সমঝোতা স্মারকে যা আছে তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করা হবে। যাতে করে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসার জন্য কোনো ধরনের অবহেলা না হয়।
সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০২ ঘণ্টা, জুন ৫, ২০২৩
ইএসএস/এমএমজেড