ঢাকা: সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার গোবিন্দগঞ্জ আব্দুল হক স্মৃতি কলেজের অবৈধ অধ্যক্ষ সুজাত আলীর অপসারণের দাবি জানিয়েছে বৃহত্তর গোবিন্দগঞ্জবাসী।
শুক্রবার (৯ জুন) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনী মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানায় বৃহত্তর গোবিন্দগঞ্জবাসী, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও মধ্যপ্রাচ্যের প্রবাসীরা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন অলিউর রহমান চৌধুরী বকুল। তিনি বলেন, হাইকোর্টের রিট পিটিশনে ২০১০ সালের আদেশে কলেজ অধ্যক্ষ সুজাত আলীর নিয়োগ বাতিল করা হয়। অবৈধ অধ্যক্ষ সুজাত আলীর ছুটির আবেদন বারবার মঞ্জুর ও কলেজ কর্তৃপক্ষ ছুটি বর্ধিত করে। পরবর্তীতে তার ছুটি বাতিল করে তাকে কলেজে যোগদানের নির্দেশ দেয়। এরপরে ২০০৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর অধ্যক্ষ সুজাত আলী প্রভাষক পদ থেকে অব্যাহতির আবেদন করেন। কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অনিল কুমার মল্লিক ঘোষণাপত্রে উল্লেখ করেন যে, ১০ জানুয়ারি ২০০৮ সালে পদটি শূন্য ঘোষণা করা হয়।
তিনি বলেন, ২০০৯ সালের ২০ মার্চ প্রভাষক হিসেবে পুনরায় এই কলেজে যোগদান করেন সুজাত আলী। পরবর্তীতে কলেজ পরিচালনার অ্যাডহক কমিটি কোনোরকম নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে তাকে অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেয়।
অধ্যক্ষ সুজত আলী চাকরিরত অবস্থায় তথ্য গোপনের কথা উল্লেখ করে অলিউর রহমান চৌধুরী বলেন, সুজাত আলী অধ্যক্ষ হিসেবে চাকরিরত অবস্থায় তথ্য গোপন করে মিথ্যা ও জাল কাগজপত্র দাখিল করে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল থেকে ওকালতির সনদ নিয়ে প্রতারণামূলকভাবে সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতিতে (আইডি নং-৭০১) অ্যাডভোকেট হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। অথচ তিনি একই সঙ্গে অধ্যক্ষ এবং অ্যাডভোকেট হিসেবে কোনোভাবেই দুটি পদে থাকতে পারেন না।
লিখিত বক্তব্যে বকুল আরও বলেন, দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো- সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্টের রায় ও আদেশ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় গাজীপুর, মাউশি (মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড) কলেজ কর্তৃপক্ষ অবহিত থাকা স্বত্বেও সুজাত আলী কীভাবে বেতন-ভাতা উত্তোলন করেন। সুজাত আলী গোবিন্দগঞ্জ আব্দুল হক স্মৃতি কলেজের অবৈধ অধ্যক্ষ পত্র-পত্রিকায় বিষয়টি বার বার প্রকাশিত হওয়ার পরও, তিনি প্রতারণার মাধ্যমে বেতন-ভাতা উত্তোলন করে সরকারের কয়েক কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন। এতে এলাকাবাসী বিক্ষুব্ধ ও মর্মাহত হয়ে কলেজের সকল শিক্ষার্থী ও গণ্যমান্য মুরুব্বীদের নিয়ে কলেজের সামনে মানববন্ধনও করেছে। আমরা কলেজের সুনাম রক্ষার্থে সর্বোচ্চ আদালতের রায় ও আদেশ দ্রুত কার্যকর করে কথিত অধ্যক্ষ সুজাত আলীর একই সঙ্গে দুটি পদে থেকে বেতন-ভাতা উত্তোলন বিষয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
সুজাত আলীর সঙ্গে কোনো ব্যক্তিগত আক্রোশ আছে কি-না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে অলিউর রহমান চৌধুরী বকুল বলেন, আমাদের তার সঙ্গে কোনো ব্যক্তিগত সমস্যা নেই। আমরা কলেজের সাবেক ছাত্র। সেই দায়িত্বের জায়গা থেকে আমরা অধ্যক্ষের অনিয়মের কথা কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিতে আনতে চায়।
কোন শক্তির জোরে সুজাত আলী ওই পদে আছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা জানি না। অব্যাহতির ব্যাপারে হাইকোর্টের নির্দেশনাও রয়েছে। কিন্তু কেনো সেটা বাস্তবায়ন হচ্ছে না, তা আমাদের জানা নেই। তবে কোনো এক অদৃশ্য শক্তি আছে বলে দাবি করেন তিনি।
একটা সময় কলেজ পরিচালনা কমিটিতে থাকলেও তখন কেনো কোনো ব্যবস্থা নেননি? এই প্রশ্নের জবাবে বকুল বলেন, আমি যখন ওই কমিটির সদস্য ছিলাম, তখন সুজাত আলী অধ্যক্ষ ছিলেন না।
সংবাদ সম্মেলনে গোবিন্দগঞ্জ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিনের সভাপতিত্বে আরও উপস্থিত ছিলেন মেনন চৌধুরী, আলতাফ আলী, নবাব আলী আব্বাস উদ দৌলা প্রমুখ।
উক্ত অভিযোগের ভিত্তিতে অধ্যক্ষ সুজাত আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, একটি কুচক্রী মহল আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। আমি সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। আমার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারকে হেয় করার জন্য তারা এগুলো করছে।
তথ্য প্রযুক্তি আইনে মামলা করেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আমি তথ্য প্রযুক্তি আইনে একটি মামলা করেছি। মামলাটি তদন্তে রয়েছে। আর হাইকোর্টের নির্দেশনা ছিল, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিষয়টি সুরাহা করবে। ইতোমধ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বিষয়টি নিষ্পত্তি করেছে।
নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, কর্তৃপক্ষ আমাকে যথাযথ নিয়ম মেনে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দিয়েছে। যারা নিয়োগের প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন, তারা আমার ও কলেজের সুনাম ক্ষুণ্ন করতে এসব করছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১০ ঘণ্টা, জুন ৯, ২০২৩
এমএমআই/এনএস