ঢাকা, মঙ্গলবার, ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

তীব্র তাপদাহ-লোডশেডিং, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় উৎপাদিত পশু নিয়ে শঙ্কা

মেহেদী নূর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৫ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০২৩
তীব্র তাপদাহ-লোডশেডিং, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় উৎপাদিত পশু নিয়ে শঙ্কা ছবি: বাংলানিউজ

ব্রাহ্মণবাড়িয়া: কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রায় ১৫ হাজার খামারে গরু, মহিষ, ছাগলসহ বিভিন্ন পশুকে প্রাকৃতিক উপায়ে মোটাতাজাকরণ করা হচ্ছে। তবে তীব্র তাপদাহ ও ঘন ঘন লোডশেডিং থাকায় উৎপাদিত পশু নিয়ে শঙ্কায় দিন কাটছে খামারিদের।

খামারিরা জানায়, অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর পশু খাদ্যর দাম বেড়েছে দ্বিগুণ। গরমের কারণে প্রতিদিন তিন থেকে চার বার গোসল করাতে হচ্ছে। এছাড়া খাবারের কারণে পশুর স্ট্রোক রোধসহ বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা এড়াতে বাড়তি পরিচর্যা নিতে হচ্ছে। ফলে উৎপাদন খরচ বেড়েছে। এছাড়াও সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় গরুর অনুপ্রবেশের চিন্তাও ভাবিয়ে তুলছে তাদের। বাড়তি খরচে পশু লালন করার পর সীমান্ত দিয়ে ভারতের গরুর অবৈধ চালান এলে পথে বসতে হবে খামারিদের।

এ সময় তারা সরকারের কাছে অবৈধ গরু যেন সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করতে না পারে সেই দাবি জানান।

নিউ প্রিন্স ডেইরি ফার্মের ম্যানেজার জসীম উদ্দিন জানান, প্রতি বছরই কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে খামারে গরু, মহিষসহ বিভিন্ন কোরবানি যোগ্য পশু লালন-পালন করা হয়ে থাকে। তবে এ বছরের চিত্র একেবারেই ভিন্ন। একদিকে অত্যধিক গরম আর অন্যদিকে দিনের বেশিরভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকেনা। এতে পশুর শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় জেনারেটরের নির্ভরশীল থাকতে হচ্ছে। পাশাপাশি খইল, ভুষি, সাইলেসসহ সব ধরনের পশু খাদ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় আমাদের উৎপাদন খরচ বেড়েছে অন্তত দ্বিগুণ। এ অবস্থায় আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। অত্যধিক গরমের কারণে পশুর শারীরিক সুস্থতার বিষয়টি আমাদেরকে দুশ্চিন্তায় রেখেছে।  

রুপচাঁন বিবি ডেইরি খামারের ম্যানেজার রফিকুল ইসলাম জানান, ঈদকে সামনে রেখে গত এক বছর ধরে দেশিয় জাতের বিভিন্ন গরু ও মহিষ পালন করছি। অত্যধিক গরমরে কারণে পশু কখন স্ট্রোক করে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকতে হয়। ঘন ঘন লোডশেডিং থাকায় প্রতিদিন জেনারেটর দিয়ে বিকল্প বিদ্যুতের ব্যবস্থা করে তাপমাত্রা ঠিক রাখতে হচ্ছে। এতে প্রতিদিন ২০ লিটার করে জ্বালানি তেলের প্রয়োজন হয়।

তিনি আরও বলেন, সরকার অবৈধ গরুর প্রবেশ রোধে কঠোর অবস্থানে থাকলেও একটি মহল নানা কৌশলে সীমান্তের কাঁটাতার গলিয়ে দেশে অবৈধভাবে ভারতীয় গরু এনে থাকে। এতে উৎপাদিত পশুর ন্যায্যমূল্য থেকে আমরা বঞ্চিত হই। প্রশাসনের কাছে আমাদের দাবি অবৈধ গরুর প্রবেশ বন্ধে তারা যেন কঠোর অবস্থানে থাকে।


 
এ বিষয়ে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোছাইন বলেন, জেলায় থাকা খামারগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি খামারিরা যাতে তাদের উৎপাদিত পশু নিরাপদে বেচাকেনা করতে পারে সেজন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে চোরাই গরু বেচাকেনা বন্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।  

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাক্তার কাজী নজরুল ইসলাম বলেন, জেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা একলাখ ৪০ হাজার হলেও খামারে একলাখ ২১ হাজার পশু মজুত রয়েছে। অবশিষ্ট পশুর ঘাটতি আশপাশের জেলা থেকে আনা হবে। এতে পশুর চাহিদার কোনো সংকট হবে না।

তিনি বলেন, প্রতিটি খামারে যাতে প্রাকৃতিক উপায়ে পশু মোটাতাজাকরণ নিশ্চিত হয় সে বিষয়ে আমাদের নজরদারি রয়েছে। জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কোনো দ্রব্যের ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না।

তিনি আরও বলেন, তাপদাহে উৎপাদিত পশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় দৈনিক ২/৩ বার গোসল করানোসহ তাপ নিয়ন্ত্রণে খামারিদের সচেতন করা হচ্ছে। এছাড়া সীমান্ত পেরিয়ে অবৈধ পশুর অনুপ্রবেশ রোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১২ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০২৩
এসআইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।