ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

দেশে ফিরে সন্তানকে দেখা হলো না মালয়েশিয়া প্রবাসীর

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭১৮ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০২৩
দেশে ফিরে সন্তানকে দেখা হলো না মালয়েশিয়া প্রবাসীর

ফরিদপুর: জীবিকার তাগিদে ১২ বছর আগে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমান মো. এনায়েত শেখ (৩৫)। বছর দেড়েক আগে দেশে এসে বিয়ে করেন তিনি।

পরিবারের মুখে একটু হাসি ফোটাতে ফের চলে যান মালয়েশিয়ায়। সেখানে যাওয়ার কয়েকমাস পর ছেলে সন্তানের বাবার হন ফরিদপুরের সালথার এই যুবক।  

ছেলে ওছামার বয়স এখন মাত্র ৭ মাস। আসন্ন ঈদুল আজহায় শিশু সন্তানকে দেখতে দেশে আসার কথা ছিল তার।  

কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে শনিবার (১০ জুন) বাংলাদেশ সময় সকাল ৯টার দিকে মালয়েশিয়ায় নিজ কর্মস্থলে তেলের ট্যাংকির ভেতরে পড়ে গিয়ে প্রাণ হারান এনায়েত।  

শনিবার (১০ জুন) রাতে পরিবারের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

নিহত এনায়েত শেখ ফরিদপুরের সালথা উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের বাংরাইল গ্রামের মৃত হামেদ শেখের ছেলে। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে এনায়েত ছিলেন সবার ছোট। তার এমন মৃত্যুর খবরে পুরো পরিবারে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। পরিবারের সদস্যদের আহাজারিতে এলাকার পরিবেশ ভারি হয়ে উঠেছে।  

এদিকে এনায়েতের মরদেহ দেশে আনা নিয়েও পরিবারের সদস্যদের কপালে পড়েছে চিন্তার ভাজ। মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারের সহযোগিতা কামনা করেছেন তার পরিবার।

নিহতের বড় ভাই শাহাদত শেখ বলেন, ১২ বছর আগে মালয়েশিয়ায় যায় এনায়েত। মালয়েশিয়ার জহুরবারো এলাকায় একটি পেট্রোল পাম্পের কর্মী হিসেবে কাজ করতেন। প্রতিদিনের মতো শনিবার (১০ জুন) সকাল ৭টার দিকে ফোনের মাধ্যমে পরিবারের সঙ্গে শেষ কথা হয় তার। এরপর সকাল ৯টার দিকে ওই দেশে থাকা এনায়েতের বাংলাদেশি সহকর্মীরা ফোন করে তার মৃত্যুর বিষয়টি আমাদের জানায়।  

সহকর্মীরা জানান, এনায়েত তেলের ট্যাংকি পরিষ্কার করার সময় ট্যাংকির ভেতরে পড়ে যান। পরে গুরুতর অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।  

শাহাদত শেখ বলেন, এখন তার মরদেহ কীভাবে দেশে ফিরিয়ে আনবো, সেই চিন্তায় আছি। ভাইয়ের লাশ ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারের সহযোগিতা কামনা করছি।

এনায়েতের বৃদ্ধা মা তছিরন বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ছেলেটা আমার বিদেশে গিয়ে ১২ বছর ধরে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে উপার্জন করে আমাদের মুখে হাসি ফুটিয়েছে। দেড় বছর আগে তাকে জোর করে দেশে এনে বিয়ে দেই। বিয়ের কয়েকমাস পর আবারও বিদেশ চলে যায়। সেখানে যাওয়ার পর ছেলে সন্তানের বাবা হয় আমার বাজান। এরপর থেকে প্রতিদিন ভিডিও কলে ছেলেকে দেখতো আর তাকে বলতো আগামী কোরবানির ঈদে এসে তোমাকে সরাসরি দেখবো, কোলে নিয়ে ঘুরবো বাবা। কিন্তু ছেলেকে দেখার আগেই আমার বাজান চলে গেল। এটা আমরা কীভাবে মেনে নেবো। এখন কী হবে ওর স্ত্রী-সন্তানের।

স্থানীয়রা জানান, এনায়েত এলাকায় একজন ভালো মানুষ হিসেবে পরিচিত। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন। মালয়েশিয়া থেকে উপার্জন করে গ্রামে একটি মাদরাসাও প্রতিষ্ঠিত করেছেন তিনি। যে কারণে গ্রামের সবাই তাকে আলাদা চোখে দেখতেন, ভালোবাসতেন। তার এমন মৃত্যুর খবরে গ্রামের সবাই শোকাহত।        

সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আক্তার হোসেন শাহিন বলেন, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে যথাযথভাবে আবেদন করলে সরকারিভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে সহযোগিতা চাইলে আমি অবশ্যই সহযোগিতা করবো।

বাংলাদেশ সময়: ০৬৫৮ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০২৩
এনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।