ঢাকা, বুধবার, ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

নদী ড্রেজিংয়ে বিআইডব্লিউটিএ’র সাফল্য সীমিত: এসসিআরএফ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৮ ঘণ্টা, জুন ১২, ২০২৩
নদী ড্রেজিংয়ে বিআইডব্লিউটিএ’র সাফল্য সীমিত: এসসিআরএফ ফাইল ছবি

ঢাকা: সরকার নদী খনন ও ড্রেজিংয়ের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ দিলেও এ কাজে আশানুরূপ সাফল্য দেখাতে পারেনি বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। বরং সংস্থাটির বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগই বেশি।

বিশেষ করে মেগা প্রকল্পগুলোতে অর্জন অতি সামান্য হলেও অর্থ অপচয়ের মাত্রা অনেক বেশি।

ঢাকার গণমাধ্যমকর্মীদের সংগঠন শিপিং অ্যান্ড কমিউনিকেশন রিপোর্টার্স ফোরামের (এসসিআরএফ) এক পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।

সোমবার (১২ জুন) গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রতিবেদনের সারমর্ম তুলে ধরা হয়।

পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে নদী খননে কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থতার জন্য বিআইডব্লিউটিএ’র ড্রেজিং বিভাগের অদক্ষতা, উদাসীনতা, অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম ও দুর্নীতিকে দায়ী করা হয়েছে। মেগা প্রকল্পগুলোর পরিচালকসহ (পিডি) এর সঙ্গে যুক্ত জ্যেষ্ঠ প্রকৌশলীরা প্রকল্প এলাকায় নিয়মিত না গিয়ে বছরের অধিকাংশ কর্মদিবসে ঢাকায় প্রধান কার্যালয়ে অবস্থান করেন বলে পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, দীর্ঘ পর্যবেক্ষণে কয়েকটি নদী সরেজমিনে পরিদর্শন, প্রকল্প এলাকার বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষের সঙ্গে আলোচনা, প্রথম শ্রেণির কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন এবং বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যসমূহের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে শিগগির পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে বলে জানানো হয় সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।

এসসিআরএফ জানায়, নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ থেকে জামালপুরের নালিতাবাড়ি পর্যন্ত কংস ও ভোগাই নদীর ১৫৫ কিলোমিটার খনন প্রকল্প হাতে নেয় বিআইডব্লিউটিএ। এতে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৩৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী, নদী দু’টির প্রশস্ততা ৮০ থেকে ১০০ ফুট এবং শুকনো মৌসুমে গভীরতা ৮ থেকে ১০ ফুট হবে। কাগজে কলমে প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে।

তবে সরেজমিন পরিদর্শন ও নদীতীরবর্তী লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কংস ও ভোগাই নদীর প্রশস্ততা ও গভীরতা মোটেও বাড়েনি। তাদের দাবি, ১৩৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকার সিংহভাগই জলে গেছে। এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ময়মনসিংহ সমন্বিত জেলা কার্যালয় ও ঢাকা কার্যালয় অনুসন্ধান করছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।

এসসিআরএফের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০১৯ সালে পুরাতন ব্রহ্মপুত্রের ২২৭ কিলোমিটার খনন শুরু হয়। পাঁচ বছর মেয়াদি এ প্রকল্পে বরাদ্দের পরিমাণ দুই হাজার ৭৬৩ কোটি টাকা। এতে বলা হয়েছিল, চলতি বছরের জুন-জুলাইয়ের মধ্যে যমুনা-ব্রহ্মপুত্রের সংযোগস্থল থেকে কিশোরগঞ্জের টোক পর্যন্ত প্রশস্ততা ৩০০ ফুট ও গভীরতা অন্তত ১০ ফুট হবে, এ নৌপথ দিয়ে ঢাকা পর্যন্ত বড় নৌযান চলবে। কিন্তু ময়মনসিংহের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এ নদের অনেক স্থানেই হাঁটুপানি দেখা গেছে। সময়মতো কাজ না করে প্রকল্পের মেয়াদ আরও অন্তত তিন বছর বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলছে বলে উল্লেখ করা হয় বিজ্ঞপ্তিতে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, যমুনা নদীর গাইবান্ধার বালাসী থেকে জামালপুরের বাহাদুরাবাদ পর্যন্ত ফেরিপথ চালুর লক্ষ্যে ২০১৭ সালে ১২৪ কোটি ৭৭ লাখ টাকার প্রকল্প হাতে নেয় বিআইডব্লিউটিএ। খনন শুরুর এক পর্যায়ে সংস্থাটি জানায়, এই নৌপথে ফেরি চলাচল সম্ভব নয়। তবে প্রকল্পটি বাস্তায়ন হলে লঞ্চ চলাচল করবে। ২০২২ সালের ৯ এপ্রিল বালাসী-বাহাদুরাবাদ নৌপথে লঞ্চ চলাচল উদ্বোধন করা হয়। তবে তীব্র নাব্যতা সংকটের কারণে এক মাসের মধ্যেই লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সাফল্য আসবে না জেনেও দুই দফা সংশোধনের মাধ্যমে প্রকল্পব্যয় বাড়িয়ে ১৪৫ কোটি ২ লাখ টাকা করা হয়। এছাড়া প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বালাসী ও বাহাদুরাবাদ টার্মিনালে অফিস ভবন, পাইলটহাউজ, পুলিশ ও আনসার ব্যারাক, ফায়ার সার্ভিস, টুল্স ভবন, ড্রাইভার রেস্টহাউজ, যাত্রী ছাউনি, টয়লেটসহ ১১টি অবকাঠামো নির্মাণের মাধ্যমে সরকারি অর্থ অপচয় করেছেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৮ ঘণ্টা, জুন ১২, ২০২৩
টিএ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।