ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

বালুদস্যুদের জরিমানা নয়, জেলে দিতে হবে: নদীরক্ষা কমিশন চেয়ারম্যান

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮১০ ঘণ্টা, জুন ১৪, ২০২৩
বালুদস্যুদের জরিমানা নয়, জেলে দিতে হবে: নদীরক্ষা কমিশন চেয়ারম্যান

ফরিদপুর: বালুদস্যুদের কেবল আর জরিমানা নয়, কারাগারে দিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান মনজুর আহমেদ চৌধুরী।

মঙ্গলবার (১৩ জুন) বেলা ১১টার দিকে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে ‘নদী রক্ষা কমিটির সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

 

জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, আমরা কুমার নদকে হারিয়ে ফেলেছি। ঐতিহ্যবাহী এই নদ খালে পরিণত হয়েছে। প্রায় আড়াইশো কোটি টাকা খরচ করে কুমার নদ খনন করা হল, কিন্তু আমরা কোনো সুফল পেলাম না। পাশাপাশি এ নদটি প্রতিনিয়ত যেভাবে দূষিত করা হচ্ছে তাতে আগামীতে ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয় ঘটতে পারে।  

তিনি আরও বলেন, নদীর বালু কাটা, জমির মাটি কেটে ইট ভাটায় দেওয়া সারা দেশের বাস্তবতা। এগুলো চলতে দেওয়া হবে না। তিনি বলেন, কারা নদী থেকে বালু কাটে তা আমরা জানি, এই সভাতেই তাদের দুই-একজন থাকতেও পারেন। জরিমানা আদায় করে বালু কাটা বন্ধ করা যাবে না। এর জন্য দায়ীদের ধরে ধরে জেলে দিতে হবে।

এ সময় জেলা প্রশাসনের দেওয়া পরিসংখ্যান উল্লেখ করে মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, গত ছয় মাসে দুইশ অভিযান চালিয়ে মাত্র ১০ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। অথচ একই সময়কায়ে তারা একশ কোটি টাকা আয় করেছেন। তাদের কাছে জরিমানা এ টাকা কিছুই না। তাই জরিমানা নয় এখন থেকে জেল দিতে হবে। তবে শ্রমিকদের জেল দেওয়া যাবে না, জেল দিতে হবে মালিককে কিংবা যারা এর পিছনে রয়েছেন তাদেরকে।  

তিনি আরও বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাবে নদী রক্ষা না হয়ে ধ্বংস করে ফেলা হচ্ছে। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, এই কুমার নদ দিয়ে যদি আমরা নৌপথে চলাচল করতে না পারি, জেলেরা যদি মাছ ধরার সুযোগ না পায়, কৃষক যদি সারা বছর সেচ সুবিধা না পায় তাহলে এত টাকা ব্যয় করে এ প্রকল্প আমরা কেন গ্রহণ করলাম। যে টাকা এর পিছনে খরচ হয়েছে তা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী বাংলাদেশের শ্রমিকদের রক্ত ঘাম করা টাকা, রাষ্ট্রের টাকা। সেই টাকা এভাবে কেন অপচয় করা হল।  

সভায় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান কুমার নদ খনন প্রকল্প গ্রহণের শুরু থেকে এ পর্যন্ত যাবতীয় যা কাজ হয়েছে, কত ঘনফুট মাটি কাটা হয়েছে, সে মাটি কিভাবে কোনো প্রক্রিয়ায় বিক্রি করা হয়েছে, যারা কাজ পেয়েছেন তারা কিভাবে কাজ পেলেন, এ সব তথ্য নদী রক্ষা কমিশনে জমা দিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে নির্দেশ দেন। পাশাপাশি কুমার নদের ওপর কতগুলি সেতু কোনো কোনো বিভাগ নির্মাণ করেছে তার দৈর্ঘ্য প্রস্তসহ আনুষাঙ্গিক তথ্য জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি।  

জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, এ নদের পাড়ের ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন এ নদীতে বর্জ্য ফেলে অপরাধ করছেন। পাশাপাশি ফরিদপুর পৌরসভার নর্দমার পানি এ নদে ফেলে পানি দূষিত করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসন, মৎস্য বিভাগ নদী ও খালের কিংবা জলাধারের ইজারা দেন। এতে হয়তো সামান্য রাজস্ব আসে, কিন্তু এর জন্য নদী ও খালের স্বাভাবিক প্রবাহ নষ্ট হচ্ছে এবং আমরা অনেক বেশি ক্ষতি করে যাচ্ছি আগামী প্রজন্মের।  

সভায় সভাপতিত্ব করেন, ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার। সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের পরিচালক কে এম কাবিরুল ইসলাম।

সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন- ফরিদপুর নৌ পুলিশের পুলিশ সুপার আশীক সাঈদ, ফরিদপুর পৌরসভার মেয়র অমিতাভ বোস, ফরিদপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক মোল্যা, চরভদ্রাসন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. কাউসার, ভাঙ্গা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহামন, বিআইডাব্লিউটিসির পরিবহন পরিদর্শক মো. সুজন মৃধা ও শরীয়তুল্লা বাজার বণিক সমিতির সভাপতি নূরুল ইসলাম মোল্লা।  

বাংলাদেশ সময়: ০৮০৯ ঘণ্টা, জুন ১৪, ২০২৩
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।