ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

রূপসা-সীমান্ত এক্সপ্রেসে কোচের অভাব, যাত্রীদের ভোগান্তি চরমে

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪৮ ঘণ্টা, জুন ১৪, ২০২৩
রূপসা-সীমান্ত এক্সপ্রেসে কোচের অভাব, যাত্রীদের ভোগান্তি চরমে

নীলফামারী: শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) অকেজো। তাই চিলাহাটি-খুলানা রুটে আন্তঃনগর ট্রেন রুপসা ও সীমান্ত এক্সপ্রেসের চারটি কোচ খুলে রাখা হয় প্রায় এক মাস আগে।

সেই থেকে কোচগুলো অলস অবস্থায় পড়ে আছে, নেই মেরামতের উদ্যোগ। অথচ এ চার কোচে মোট আসন রয়েছে ৩০২টি। ফলে ব্যাপক চাহিদা থাকা সত্ত্বেও এ রুটে যাত্রীদের কাছে আসনের বিপরীতে টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে না। এতে করে একদিকে যেমন ওই রুটে নীলফামারীর সৈয়দপুরসহ এ অঞ্চলের যাত্রীদের যাতায়াতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। অন্যদিকে সরকারকে লোকসান গুনতে হচ্ছে। ।

যাত্রীদের অভিযোগ, দীর্ঘ এই রুটে এসি কোচগুলো খুলে রাখায় চলাচলে তাদের এক মাস ধরে ভোগান্তি পোহালেও কর্তৃপক্ষ নীরব। সামনে ঈদুল আজহা। যদি কোচগুলো সংযুক্ত করা না হয় তাহলে ঘরমুখী যাত্রীদের চাপ সামলানো মুশকিল হয়ে পড়বে।

রেলওয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানায়, এ কোচগুলোর এসি ব্যবস্থা জটিল প্রকৃতির। যন্ত্রাংশ না পাওয়ায় নস্ট এসি স্থানীয়ভাবে মেরামত সম্ভব হচ্ছে না। তাই এগুলো খুলে রাখা হয়েছে।

তবে খোদ রেলওয়ে একটি সূত্রের দাবি তাদের ইলেকট্রিক বিভাগের ব্যর্থতার জন্য বিপুল অংকের রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ রেলওয়ে ২০০৬ সালে ব্রডগেজ লাইনের বেশ কিছু কোচ আমদানি করে। এগুলোর মধ্যে ছিল পাঁচটি এসি স্লিপার ও পাঁচটি এসি চেয়ার/স্নিগ্ধা। এসব কোচ চিলাহাটি-খুলনা রুটে চলাচলকারী আন্তঃনগর রুপসা ও সীমান্ত এক্সপ্রেস এবং রাজশাহী-খুলনা রুটে চলাচলকারী সাগরদাড়ি এক্সপ্রেস ট্রেনে যুক্ত করা হয়। পাওয়ার কার লোড নিতে পারে না এমন অজুহাতে এতোদিন এ তিন জোড়া ট্রেনে দুটির পরিবর্তে একটা করে এসি কোচ যুক্ত ছিল। এর মধ্যে সেই কোচগুলোর এসি যন্ত্রে সমস্যা দেখা দেয়। তাপমাত্রা বাড়লে তা ঠাণ্ডা হয় না। ফলে রেলওয়ের বিভাগীয় (পাকশি) প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) রিফাত শাকিলের দেওয়া চিঠির নির্দেশনা অনুযায়ী গত ১৪ মে থেকে এসি কোচগুলো খুলে রাখা হয়। ফলে এ নিয়ে সর্বমোট ১০টা এসি কোচ অলস পড়ে আছে খুলনা, চিলাহাটী ও রাজশাহী স্টেশনে।

এর মধ্যে চিলাহাটি-খুলনা রুটে রুপসা এবং সীমান্ত এক্সপ্রেস ট্রেনে একটি করে এসি স্লিপার ও এসি চেয়ার/স্নিগ্ধাসহ মোট চারটি কোচ খুলে রাখা হয়েছে। যার মধ্যে দুটি এসি চেয়ার কোচে ৮০টি করে ১৬০টি, দুটি এসি স্নিগ্ধায় ৮৬টি এবং এসি স্লিপারে ৪৬টি আসন রয়েছে।

বাংলাদেশ রেলওয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, তাদের ইলেকক্ট্রিক বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্তদের অবহেলার কারণে কোচগুলোর এ অবস্থা। এসব এসি কোচ নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে যারা আছেন তারা ঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করলে এভাবে চারটি কোচ অলস পড়ে থাকত না।   আর সরকারও রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হতো না।

সরেজমিনে সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে, ওই কোচগুলোর টিকিটের জন্য কাউন্টারে ভিড় করছেন যাত্রীরা। কিন্তু ওই কোচগুলোর টিকিট বিক্রি বন্ধ থাকায় হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন তারা।

শাহানাজ পারভীন নামে এক যাত্রী বলেন, আমি ছোট দুই ছেলে-মেয়েকে নিয়ে খুলনা যাব। তাই রাতে সীমান্ত ট্রেনের এসি চেয়ার বগির টিকিট করতে এসেছিলাম। কিন্তু কাউন্টার থেকে জানানো হয় বগি খুলে রাখায় এসি চেয়ার কোচের টিকেট বিক্রি হচ্ছে না।

তিনি আরও বলেন, এই ট্রেনের কোচগুলোর জানালা খোলে না। এতে করে ভিতরে কোনো বাতাস ঢুকতে পারে না। তাই এই গরমে কীভাবে ছোট ছেলে-মেয়েদের নিয়ে এত দূরের পথে যাব তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।

রেলওয়ের সৈয়দপুর স্টেশনমাস্টার ওবায়দুল ইসলাম রতন জানান, চিলাহাটি থেকে খুলনার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া আন্তঃনগর রূপসা ও সীমান্ত এক্সপ্রেস ট্রেনের দু’টি করে চারটি এসি কোচের এসি যন্ত্রে ত্রুটি দেখা দেয়। পরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের লিখিত নির্দেশে তা খুলে রাখা হয়েছে। বিকল্প বগি না দেওয়ায় ওই পথের যাত্রীদের আসন দেওয়া হচ্ছে না। কতদিনে বগি চারটি সংযোজন করা হবে তা
এখনই বলা যাচ্ছে না।

এ নিয়ে মুঠোফোনে কথা হয় রেলওয়ের পাকশি বিভাগের প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ ) রিফাত শাকিলের সঙ্গে। তিনি বলেন, কোচগুলোর এসি যন্ত্র কাজ করছে না। যেতেতু যাত্রীদের এসির সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না, তাই কোচগুলো খুলে রাখা হয়েছে। এসি ব্যবস্থাপনা সচল করতে চেষ্টা চালানো হচ্ছে। কিন্তু এর যন্ত্রাংশ পাওয়া যাচ্ছে না বলে কোচগুলো স্টেশনে পড়ে আছে। যন্ত্রাংশ পাওয়া গেলেই সেগুলো মেরামতের জন্য সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় পাঠানো হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৬ ঘণ্টা, জুন ১৪, ২০২৩
এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।