শরীয়তপুর: পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার সদ্য বদলি হওয়া ওসি শেখ মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান ও পরিদর্শক (তদন্ত) সুরুজ উদ্দিন আহম্মেদকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
তাদের বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে ৭২ লাখ টাকা চেক নেওয়া ও ছিনতাই মামলার ৪ আসামিকে নির্মম নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে।
শুক্রবার (১৬ জুন) দুপুরে শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার মো. সাইফুল হক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) পুলিশ সদর দপ্তর থেকে ওই আদেশ দেওয়া হয়েছে। আদেশটি সন্ধ্যায় শরীয়তপুরের পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে পৌঁছায়। শেখ মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমানকে চট্টগ্রাম রেঞ্জে ও সুরুজ উদ্দিনকে বরিশাল রেঞ্জে সংযুক্ত করা হয়েছে। তবে বর্তমানে তারা শরীয়তপুরে কর্মরত আছেন। গত ৭ জুন শেখ মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমানকে পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানা থেকে বদলি করে শরীয়তপুর জেলা পুলিশ অফিসে সংযুক্ত করা হয়েছিল।
জানা গেছে, জাজিরা উপজেলার পদ্মা সেতুর দক্ষিণ থানা সংলগ্ন নাওডোবা বাজারের ব্যবসায়ী আবু জাফর ওরফে ঠান্ডু চোকদারকে তুলে নিয়ে পিটিয়ে ৭২ লাখ টাকার চেক নেওয়া ও একটি ছিনতাই মামলার ৪ আসামিকে পিটিয়ে নির্মম নির্যাতন করে আহত করার অভিযোগ ওঠে।
এরপর বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার সদ্য বদলি হওয়া ওসি শেখ মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান ও পরিদর্শক (তদন্ত) সুরুজ উদ্দিন আহম্মেদকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
এ ঘটনায় আরেক অভিযুক্ত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (নড়িয়া সার্কেল) রাসেল মনিরের বিরুদ্ধে এখনো পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপের খবর পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তাও বক্তব্যের জন্য বারবার চেষ্টা করেও তাদেরকে পাওয়া যায়নি।
দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের বিষয়টি নিশ্চিত করে শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার মো. সাইফুল হক বলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (নড়িয়া সার্কেল) রাসেল মনিরের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এ বিষয়ে শিগগিরই আনুষ্ঠানিকভাবে গণমাধ্যমকর্মীদের জানানো হবে।
উল্লেখ্য, নাওডোবা বাজারের ব্যবসায়ী আবু জাফর ওরফে ঠান্ডু চোকদার ২ জুন পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ ভিত্তিতে জানা গেছে, জাজিরার পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুরুজ উদ্দিন আহম্মেদ ৩১ মে গভীর রাতে তাকে বাড়ি থেকে তুলে থানায় নিয়ে যায়।
সেখানে নিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (নড়িয়া সার্কেল) রাসেল মনির ও পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান তাকে একটি ছিনতাই মামলার আসামি ও তার ৪ আত্মীয়ের পক্ষে ৭২ লাখ টাকা দেওয়ার জন্য চাপ দেয়।
এর বিনিময়ে তাকে বলা হয়, “ওই আত্মীয়দের মালিকানাধীন নাওডোবা বাজারের দুটি দোকান তার নামে লিখে দেওয়া হবে। ” তবে এতে আবু জাফর ঠান্ডু চোকদার রাজি না হওয়ায় ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তা তাকে মারধর করেন।
একপর্যায়ে ৭২ লাখ টাকার চেক লিখে দিতে রাজি হলে তার চাচা ও মামলার আসামি রশিদ চোকদারের জিম্মায় ভোররাতে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
পরদিন সকালে ন্যাশনাল ব্যাংক নাওডোবা শাখায় নিজের হিসাব নম্বরের ৫টি চেকে ৭২ লাখ টাকা লিখে দেন ঠান্ডু চোকদার। আর ওই চেকগুলো ওসির কাছে দেওয়া হয়। পরে ওই চারজনকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
ওই যুবকদের নির্যাতনের চিত্র আদালতের নজরে এলে তাদের চিকিৎসা করানো ও মেডিকেল প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। মেডিকেল প্রতিবেদন পাওয়ার পর ৭ জুন শরীয়তপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আল ইমরান নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন ২০১৩ এর ৫ ধারা বিধান অনুযায়ী ওই এএসপি ও ওসির বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নিতে পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেন।
ঠান্ডু অভিযোগ তদন্তের দায়িত্বে ছিলেন, শরীয়তপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মোহাম্মদ বদিউজ্জামান। বৃহস্পতিবার পুলিশ সুপারের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন তিনি। এরপর পরই পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পদ্মা সেতুর দক্ষিণ থানার সদ্য বদলি হওয়া ওসি শেখ মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান ও পরিদর্শক (তদন্ত) সুরুজ উদ্দিন আহমেদকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫০ ঘণ্টা, জুন ১৬, ২০২৩
এসএএইচ