ঢাকা: ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) বেদখলকৃত ১২ কাঠা জমি উদ্ধারে অভিযান চলছে। সোমবার (১৯ জুন) দুপুর ১২টার দিকে রাজধানীর বংশালের মাজেদ সর্দার রোডের ওই জায়গায় উদ্ধারে অভিযান শুরু করে ডিএসসিসি।
সংস্থাটির সম্পত্তি কর্মকর্তা (সিনিয়র সহকারী সচিব) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মুনিরুজ্জামানের নেতৃত্বে এই উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। এ সময় ডিএসসিসির অন্যান্য কর্মকর্তা, স্থানীয় কাউন্সিলর ও আনসার সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
ডিএসসিসি সূত্রে জানা যায়, ৩৩ নং ওয়ার্ডে অবস্থিত ওই জায়গায় ১৯৮৭ সাল থেকে ইউসেফ মাজেদ সর্দার নামের একটি এনজিও ভিত্তিক স্কুল পরিচালিত হতো। পাশেই ছিল আশার আলো নামে একটি স্থানীয় সামজিক সংগঠনের ক্লাব। বছর খানেক আগে স্কুলটি এখান থেকে চলে যাওয়ার পর জায়গাটি বেদখল হয়ে যায়। তারপর থেকে এখানে বাজার বসতে শুরু করে।
তবে স্থানীয়রা জানান, স্কুল থাকতেই এখানে অবৈধভাবে বাজার বসতো। ফলে স্কুলটি ৪-৫ বছর আগে স্থানান্তর করে অন্যত্র চলে যায়। তারপর থেকে জায়গাটি পুরোপুরি বেদখল হয়ে পড়ে। কাঁচা বাজারের পাশাপাশি গড়ে উঠে প্লাস্টিকসহ বিভিন্ন কারখানা। এমনকি স্থানীয় কাউন্সিলর মো. আউয়াল হোসেনের বিরুদ্ধে এই অবৈধ বাজার থেকে ভাড়া তোলারও অভিযোগ করেছেন তারা।
তবে দীর্ঘদিন পর জায়গাটি দখলমুক্তের উদ্যোগ নিয়েছে ডিএসসিসি। তারই অংশ হিসেবে এ উচ্ছেদ অভিযান চালানো হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, বেলা ১১টায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে বুলডোজার ও বর্জ্য অপসারণ ট্রাক নিয়ে মাজেদ সর্দার রোডে আসেন ডিএসসিসির কর্মকর্তারা। পরে পুরো জায়গা ঘুরে দেখার পর বেলা ১২টায় উচ্ছেদ অভিযান শুরু করা হয়। এ সময় একতলা স্কুলের টিন খোলার পর বুলডোজার দিয়ে দেয়াল ভাঙা হয়।
উচ্ছেদ অভিযানের বিষয়ে ডিএসসিসির সম্পত্তি কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মুনিরুজ্জামান বলেন, আজকে আমরা মাজেদ সর্দার লেনের যে জায়গাটিতে এসেছি উচ্ছেদ অভিযান চালাতে এটি আমাদের সিটি করপোরেশনে মালিকানাধীন ১৯ শতক বা ১২ কাঠা জায়গা। এই জায়গায় আগে ইউসেফ স্কুল নামে একটি বিদ্যালয় পরিচালিত হতো। স্কুলটি এক বছর আগে তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে অন্যত্র চলে যাওয়ায় এবং পুনরায় কোনো অবকাঠামো নির্মাণ না হওয়ার কারণে স্থানীয় কিছু লোকজন এখানে বাজার বসিয়ে বেদখল করার চেষ্টা করছিল। ডিএসসিসি মেয়রের নির্দেশনায় আজ এখানে অবৈধ দখল উচ্ছেদ করে সিটি করপোরেশনের উন্নয়ন কাজের জন্য অবমুক্ত করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, এখানে আগামীতে কী তৈরি করা হবে সেটি এখনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। স্থানীয় কাউন্সিলর মেয়রের সঙ্গে পরামর্শ করে একটি প্রস্তাব পাঠাবেন। সেটি ঠিক হলে তখন সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আমরা আপাতত এখানের অবকাঠামোগুলো অপসারণ করে চারদিকে বাউন্ডারি দিয়ে আমাদের প্রকৌশল বিভাগকে বুঝিয়ে দেব।
তিনি আরও বলেন, এখানে বছরখানেক আগ পর্যন্ত স্কুল ছিল। এছাড়া আশার আলো নামে একটি স্থানীয় ক্লাব ছিল। আমরা তাদেরকে জায়গাটি থেকে সরে যেতে বলার পর তারা নিজেরাই সরে গিয়ে জায়গাটি আমাদের কাছে হস্তান্তর করেছে।
জায়গাটি যারা দখল করেছিল, তাদের বা তাদের নেপথ্যে থাকা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সিটি করপোরেশন কোনো ব্যবস্থা নেবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা আজকে উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা করতে এসেছি। এর বাইরে অন্যান্য বিষয়গুলো মেয়রের নির্দেশে পরবর্তীতে গ্রহণ করা হবে।
স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. আউয়াল হোসেন বলেন, ডিএসিসির এই জায়গাটি ইউসেফ স্কুল ব্যবহার করতো। কিন্তু জায়গাটি ছোট হওয়ায় বছরখানেক আগে তারা অন্যত্র চলে যায়। পরিত্যাক্ত জায়গাটি এখন ডিএসসিসি তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে।
এ সময় তিনি সিটি করপোরেশনের জায়গায় অবৈধ দোকান বসিয়ে ভাড়া তোলার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এখানে স্কুল ও ক্লাব ছিল। দোকান বসিয়ে ভাড়া তোলার অভিযোগ করলেই তো হলো না।
উচ্ছেদ কার্যক্রমের পর এখানে কী নির্মাণ হবে বা এলাকাবাসী কী চান জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখানে পাশেই আমাদের একটি মাঠ, কমিউনিটি সেন্টার ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র আছে। তাই মেয়রের সঙ্গে পরামর্শ করে জনগণের জন্য যা ভালো হবে, সেটিই নির্মাণ করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৭ ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০২৩
এসসি/এমএমজেড