জামালপুর থেকে ফিরে: বাংলানিউজের জামালপুর জেলা প্রতিনিধি গোলাম রাব্বানী নাদিমকে ইট দিয়ে মাথা থেঁতলে দেওয়ার প্রায় চার ঘণ্টা পর সেই রাতেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্টোরি দিয়েছিলেন ইউপি চেয়ারম্যানপুত্র ফাহিম ফয়সাল রিফাত।
গত ১৪ জুন রাতে জামালপুরের বকশীগঞ্জে সাংবাদিক নাদিমের হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করার পর গভীর রাতে ওই স্টোরি পোস্ট দেন নাদিম হত্যার আরেক আসামি ফাহিম ফয়সাল রিফাত।
চেয়ারম্যানপুত্র ফাহিম ফয়সাল রিফাতের ফেসবুক আইডির স্টোরিতে দেওয়া ওই পোস্টে রাজধানী ঢাকার লোকেশন দেওয়া হয়েছে। ১৪ জুন রাত ২টা ১০ মিনিটে পোস্টটি আপ করা হয়েছে। ওই স্টোরি পোস্টের একটি ছবিতে কয়েক বন্ধুর সঙ্গে রিফাতকে দেখা যাচ্ছে এবং লেখা হয়েছে ‘পাবজি গেম টাইম’। ছবিতে চারজন রয়েছেন, এর মধ্যে মির্জা হিমেল, ফাহিম ফয়সাল রিফাত ও রাহাত ইবনে মনির ফোন নিয়ে বসে আছেন এবং দুরন্ত নামের একজন সেলফি তুলেছেন।
ছবিটি ভালো করে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, রিফাতের আইডি নামের নিচে ‘রাহাত ইবনে মনির’ নামের আরেকটি আইডি থেকে দুটি ছবি পোস্ট করা হয়। দ্বিতীয় ছবিটিতে এসে পোস্টটি স্ক্রিনশট দিয়ে পোস্ট করেছেন ফাহিম ফয়সাল রিফাত।
জানা গেছে, ছবিতে থাকা ফাহিম ফয়সাল রিফাত ছাড়া বাকিরা ইউপি চেয়ারম্যান বাবুর ছোট ছেলে ফারহান রিয়াদের বন্ধু আইউবিএটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাহাত ইবনে মনির। এছাড়া বাকি দুইজন মির্জা হিমেল ব্রাক ইউনিভার্সিটি ও দুরন্ত নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন। তাদের সবার বাড়ির জামালপুরের বকশীগঞ্জে।
এ বিষয়ে নিহত সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিমের মেয়ে রাব্বিরাতুল জান্নাত বাংলানিউজকে বলেন, ফাহিম ফয়সাল রিফাতের ফেসবুক আইডির সঙ্গে আমার অ্যাড রয়েছে। আব্বুকে নিয়ে হাসপাতালে গিয়ে আমার সন্দেহ হয়। পরে রাত ৪টার দিকে রিফাতের আইডিতে গিয়ে দেখি এই স্টোরি দিয়েছে। পরে আমি স্টোরির পোস্টটি স্ক্রিনশট দিয়ে রাখি।
তিনি বলেন, ছবিতে রিফাতের সঙ্গে থাকা সবাই রিফাতের ছোটভাই ফারহান রিয়াদের বন্ধু। আমার কাছে মনে হয়, তাদের সঙ্গে এটাই শেষ ছবি রিফাতের। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে রিফাতের খবর পাওয়া যাবে। রিফাত কোথায় গেলো, এতো সময় লাগছে কেনো তাকে ধরতে? ওদের জিজ্ঞাসাবাদ করলেই রিফাতকে পাওয়া যাবে।
এদিকে, ফাহিম ফয়সাল রিফাতকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে জামালপুর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আরমান আলী বাংলানিউজকে বলেন, আমরা সকল তথ্য-উপাত্ত পর্যবেক্ষণ করে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করছি। ইতোমধ্যেই কিছু বিষয়ে আমরা খুব গভীরভাবে তদন্ত করছি। আশা করি, দ্রুতই তাকে গ্রেপ্তার করতে পারবো।
এছাড়া রিমান্ড শেষে আজ ৬ আসামিকে আদালতে নেওয়া হবে বলেও জানান ডিবির এই কর্মকর্তা।
ফাহিম ফয়সাল রিফাত সাংবাদিক নাদিম হত্যা মামলার প্রধান আসামি সাধুরপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুর ছেলে। তিনি বকশীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম-আহ্বায়কও ছিলেন। তিনিই সাংবাদিক নাদিমকে ইট দিয়ে মাথায় আঘাত করে হত্যা করেন। নাদিম হত্যা মামলার দুই নম্বর আসামিও তিনি।
গত ১৪ জুন রাতে বাড়ি ফেরার পথে বকশীগঞ্জের পাথাটিয়ায় পৌঁছালে অস্ত্রধারী ১০ থেকে ১২ জন দুর্বৃত্ত সাংবাদিক নাদিমকে পিটিয়ে জখম করে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। এরপর রাত ১২টায় সেখান থেকে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) সকালে তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন বিকেল পৌনে ৩টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিমের স্ত্রী মনিরা বেগম বাদী হয়ে ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুলকে প্রধান আসামি করে ২২ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ২৫ জনকে আসামি করে বকশীগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এই মামলায় এ পর্যন্ত ১৩ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। এর মধ্যে ১৮ জুন প্রধান আসামি ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুর পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
এছাড়া আসামি রেজাউল করিম ও মনিরুল ইসলাম মনিরের ৪ দিন, জাকিরুল ইসলামের ৩ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়।
একই দিন (১৮ জুন) এই মামলার বাকি ৯ আসামির মধ্যে চার জনের চারদিন করে ও পাঁচ জনের তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
তারা হলেন- মো. গোলাম কিবরিয়া সুমন (৪৩), মো. মিলন (২৫), মো. তোফাজ্জল (৪০), আইনাল হক (৫৫), কফিল উদ্দিন (৫৫), ফজলু মিয়া (৩৫), মো. শহিদ (৪০), মকবুল (৩৫) ও মো. ওহিদুজ্জামান (৩০)।
বাংলাদেশ সময়: ১১৫১ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০২৩
এনবি/এসএফ/এনএস