ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৮ আষাঢ় ১৪৩১, ০২ জুলাই ২০২৪, ২৪ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

প্রস্তুত গাবতলী পশুর হাট, জমতে পারে শুক্রবার থেকে

সুব্রত চন্দ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৬ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০২৩
প্রস্তুত গাবতলী পশুর হাট, জমতে পারে শুক্রবার থেকে স্থায়ী অংশের কাজ শেষ, অস্থায়ী অংশের কাজ কিছুটা বাকি

ঢাকা: আর মাত্র এক সপ্তাহ পর উদযাপিত হতে যাচ্ছে মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা। পবিত্র জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা সাপেক্ষে দেশে ঈদুল আজহা উদযাপিত হবে ২৯ জুন।

 

এই ঈদ ঘিরে প্রতি বছর কোরবানির পশু বিক্রির ধুম পড়ে হাটগুলোতে। প্রতি বছরের মতো এবারো পড়বে ধুম। আর তাই রাজধানীর পশুর হাটগুলোতে এখন চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।

রাজধানীতে পশু বিক্রির সবচেয়ে বড় হাট বসে গাবতলীতে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে লাখ লাখ পশু আসায় গাবতলী পশুর হাটের স্থায়ী অংশের পাশাপাশি অস্থায়ী অংশেও করা হয় পশু বিক্রির আয়োজন। এরইমধ্যে সেই আয়োজনে হাট কর্তৃপক্ষ প্রস্তুতি প্রায় শেষ করেছে।

দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে গাবতলী গবাদি পশুর হাটে গরু-ছাগল-ভেড়া-মহিষসহ কোরবানির পশু নিয়ে আসতে শুরু করেছেন ব্যাপারীরা। তবে তেমন ক্রেতা না থাকায় এখনো সেভাবে শুরু হয়নি বিক্রি। আগামী শুক্রবার (২৩ জুন) থেকে হাট পুরোপুরি জমে উঠতে পারে, এমন আশা ইজারাদার ও ব্যাপারীদের।

বুধবার (২১ জুন) গাবতলী বাস টার্মিনাল সংলগ্ন স্থায়ী গবাদি পশুর হাটে গিয়ে দেখা যায়, প্রধান সড়কের পাশে মূল গেটসহ স্থায়ী হাটের প্রস্তুতি সম্পূর্ণভাবে শেষ। তিনটি ওয়াচ টাওয়ারসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ব্যাংকগুলোর জন্য বুথ তৈরির কাজও শেষ করেছে হাট কর্তৃপক্ষ।

তবে হাটের অস্থায়ী অংশে এখনো চলছে গরু রাখার শেড তৈরির কাজ। নির্মাণ শ্রমিকেরা বাঁশের তৈরি অবকাঠামো ত্রিপল ও শামিয়ানা টানানোর কাজ করছেন। পাশাপাশি বসানো হচ্ছে গরু বাঁধার খুঁটি। হাটের আলোকসজ্জার কাজও প্রায় শেষের দিকে।

হাট প্রস্তুতে ডেকোরেশনের দায়িত্বে থাকা আলমগীর মজুমদার বলেন, গত ৮ জুন আমরা হাট প্রস্তুতের কাজ শুরু করি। কোরবানির পশু রাখার শেড নির্মাণ ও খুঁটি বসানোর কাজ প্রায় শেষ। বর্তমানে ত্রিপল ও শামিয়ানা টানানো এবং আলোকসজ্জার কাজ চলছে। আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে তাও সম্পন্ন হবে।

এই বিষয়ে গাবতলী পশুর হাটের ব্যবস্থাপক আবুল হাসেম বলেন, হাট মোটামুটি প্রস্তুত। ব্যাপারীরাও তাদের পশু নিয়ে আসতে শুরু করেছেন। তবে এখনো হাট জমে উঠেনি। বৃহস্পতিবার রাতে ব্যাপক পশু আসবে। ফলে শুক্রবার থেকে হাট জমে উঠতে শুরু করবে। সবচেয়ে বেশি জমজমাট হবে ঈদের ছুটি শুরু হওয়ার পর।

তিনি আরও জানান, এবার হাটে ১১টি হাসিল ঘরের পাশাপাশি নিরাপত্তার জন্য র‍্যাব, পুলিশ ও সিটি এসবির বুথ এবং ব্যাংকের জন্য বুথ থাকবে। ওয়াচ টাওয়ার থাকবে সাত থেকে আটটি। এরইমধ্যে তিনটি নির্মাণ শেষ হয়েছে। বেচাকেনা শুরু হলে বাকিগুলো নির্মাণ করা হবে। সার্বিক তদারকির জন্য চেকপোস্ট থাকবে চারটি। পাশাপাশি দুই শিফটে এক হাজার ২০০ জন স্বেচ্ছাসেবক এবার হাটে দায়িত্ব পালন করবেন।

জাল টাকা শনাক্তের জন্য প্রতিটি হাসিল ঘরে পর্যাপ্ত মেশিন থাকবে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, হাসিল ঘরের পাশাপাশি ১০ থেকে ১২টি ব্যাংকের বুথ থাকবে। কারো সন্দেহ হলে সেসব বুথ বা হাসিল ঘরে গিয়ে টাকা পরীক্ষা করেতে পারবেন। এ ছাড়া পশুদের চিকিৎসায় প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, সিটি করপোরেশন ও চিড়িয়াখানার চিকিৎসকসহ আলাদা আলাদা তিনটি টিম থাকবে। এবার কোরবানির পশুর হাসিল ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি ১০০ টাকায় ৫ টাকা ও এক হাজার টাকা ৫০ টাকা হাসিল দিতে হবে ক্রেতাদের।

গত বছর গাবতলী পশুর হাটে ছোট-বড় মিলিয়ে ২০ হাজার পশু বিক্রি হয়েছিল। এবার আরও বেশি পশু বিক্রির আশা করছেন ব্যবস্থাপক আবুল হাসেম।

এদিকে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ব্যাপারীদের নিয়ে আসা কোরবানির পশুর প্রায় সবগুলোই বর্তমানে রাখা হচ্ছে হাটের স্থায়ী অংশে। এতে স্থায়ী হাটের পুরো অংশই প্রায় কোরবানির পশুতে ভরে গেছে। অস্থায়ী অংশেও কিছু কিছু গরু রাখা হয়েছে। তবে এখনো সিজনাল (মৌসুমি) ব্যাপারী ও পশুবাহী বড় গাড়িগুলো না আসায় হাটের অস্থায়ী অংশ ফাঁকা রয়েছে।

পাবনা থেকে ৪০টি ছাগল নিয়ে গাবতলী গবাদি পশুর হাটে এসেছেন ব্যাপারী আব্দুল আজিজ। তিনি এই হাটে সারা বছরই ছাগল বিক্রি করেন। আব্দুল আজিজ বলেন, এখনো ঈদের বেচাকেনা শুরু হয়নি। আগামী শুক্রবার থেকে বেচাকেনা শুরু হবে। কারণ ওইদিন সরকারি ছুটি। তাছাড়া ঢাকায় মানুষের গরু-ছাগল রাখার জায়গা নেই। তাই ঈদের আগে আগে রাজধানীবাসী কোরবানির পশু কেনে।

ঝিনাইদহ থেকে ৮০টি গরু নিয়ে আসা ব্যাপারী তৌহিদুল বলেন, এখন দুই একটি করে বিক্রি হচ্ছে। মূলত পাইকারি ক্রেতা, কসাই ও সাপ্লাই প্রতিষ্ঠানগুলো এখন গরু কিনছে। ঈদের ছুটি শুরু হলে তখন সাধারণ মানুষ আসবে। এবার গরুর দাম বেশি। তাই মাঝারি ও ছোট গরু বেশি বিক্রি হতে পারে।

বাবলু মোল্লা নামের আরেক ব্যাপারী বলেন, এখন গরুর খাবারসহ সবকিছুর দাম বেশি। তাই এবার গরুর দাম বেশি থাকবে। তারপরও বাজার জমে ওঠা ছাড়া এই কথা নির্দিষ্ট করে বলা যায় না। কখনো কখনো দাম পড়েও যেতে পারে।

হাট এখনো জমে না উঠলেও দুই-একজন ক্রেতা এরই মধ্যে বাজার পরিস্থিতি দেখতে হাটে আসছেন। তেমনি একজন সাজিদ নাদমান। তিনি একজন শিক্ষার্থী। সাজিদ বলেন, এখন থেকে বাজার দেখা শুরু করছি। যদি পছন্দ হয়, তাহলে বাসায় জানাব। তবে এবার গরুর দাম বেশি। গত বছর যেই গরু ৬০-৭০ হাজারে বিক্রি হয়েছিল, সেটি এবার ৮০ হাজারের নিচে পাওয়া যাচ্ছে না।

নাতিকে নিয়ে গাবতলী পশুর হাটে এসেছেন তেজগাঁওয়ের বাসিন্দা শের আলী পাঠান। তিনি বলেন, কোরবানির পশুর দাম এবার কেমন, তা দেখতে এসেছি। আগামী সোমবার গরু কিনব। তাই এখন থেকে বাজার পরিস্থিতি ঘুরে দেখছি।

প্রতি বছরের মতো এবারও রাজধানীতে মোট ১৯টি কোরবানির পশুর হাট বসবে। এর মধ্যে ১৭টি অস্থায়ী এবং বাকি দুটি স্থায়ী হাট।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫১ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০২৩
এসসি/আরএইচ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।