ঢাকা: দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে সততা ও ইমানের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে কোস্ট গার্ড সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার (২১ জুন) গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে কোস্ট গার্ডের অত্যাধুনিক দুটি জাহাজ, দুটি টাগবোট ও একটি ভাসমান ক্রেন কমিশনিংকালে তিনি এ আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে, সততা ও ঈমানের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে বাহিনীর সুনাম ও মর্যাদা অক্ষুণ্ন রাখতে হবে।
তিনি বলেন, এই বাহিনীর ধারাবাহিক অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে এবং আপনাদের সার্বিক কল্যাণে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহায়তা সরকার করে যাবে, আমি সেই আশ্বাস দিচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের বিস্তীর্ণ উপকূলীয় অঞ্চল রয়েছে। সেই জলসীমায় আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখা, আমাদের মৎস্য সম্পদ রক্ষা করা, সমুদ্র বন্দরের নিরাপত্তা বিধান, চোরাচালান, মাদক ও মানব পাচার প্রতিরোধ করা, ডাকাত ও জলদস্যু দমন করাসহ বিভিন্ন কাজের জন্য আমাদের কোস্ট গার্ড একান্তভাবে অপরিহার্য।
কোস্ট গার্ডের কাজের প্রশংসা করে তিনি বলেন, তাদের নিরলস প্রচেষ্টায় চট্টগ্রাম ঝুঁকিপূর্ণ বন্দরের তালিকা থেকে মুক্ত হয়ে একটি নিরাপদ বন্দরে পরিণত হয়েছে।
বহরে নতুন করে যোগ হওয়া ৫টি জাহাজের মাধ্যমে বহিঃনোঙ্গরে বাণিজ্যিক জাহাজে চুরি রোধ, সমুদ্রপথে মানব ও মাদক পাচার নিয়ন্ত্রণ, অর্থনৈতিক সমুদ্র সীমানায় টহল দেওয়া এবং যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও নৌযান দুর্ঘটনায় উদ্ধার অভিযান পরিচালনায় কোস্ট গার্ডের সক্ষমতা বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, সমুদ্র সীমার পাশাপাশি উপকূলকে সুরক্ষিত করাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অর্থনৈতিক দিক আমাদের থেকে সমুদ্র সম্পদকে কাজে লাগাতে হবে।
১৯৭৪ সালের ১০ ডিসেম্বর চট্টগ্রামে নৌ বাহিনী দিবস উপলক্ষে জাতির পিতার ভাষণ থেকে উদ্বৃত করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা কারো সঙ্গে যুদ্ধ করতে চাই না। আমরা শান্তিকামী জাতি। আমরা সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব চাই। কিন্তু আত্মরক্ষা করার মতো ক্ষমতাও আমাদের থাকা দরকার। আমরা বিশ্বাস করি শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে, আমরা বিশ্বাস করি দুনিয়ার শান্তিতে। ’ আশা করি এই কথাগুলো সবাই মনে রাখবেন।
বিগত বছরগুলোতে দেশের অগ্রগতির কথা তুলে ধরে সরকার প্রধান বলেন, গত সাড়ে ১৪ বছরে আমরা দেশের প্রতিটি সেক্টরে কাঙ্খিত অগ্রগতি অর্জন করেছি। এই সময়ে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন করেছে। আমাদের মাথাপিছু আয় ২০০৫ সালের ৫৪৩ মার্কিন ডলার থেকে বেড়ে ২ হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলার হয়েছে। আমরা দারিদ্র্যের হার ৪১.৫ শতাংশ হতে কমে ১৮.৬ শতাংশ এবং অতি দারিদ্রের হার ৫ ভাগে নামিয়ে এনেছি। ইনশাল্লাহ বাংলাদেশে একটি মানুষও হতদরিদ্র থাকবে না।
শেখ হাসিনা বলেন, আজকে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, আমাদের এই অগ্রযাত্রা ইনশাল্লাহ অব্যহত থাকবে। আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করে বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছি বাংলাদেশের জনগণ ইচ্ছা করলে যে কোনো প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করে নিজেদের গড়ে তুলতে পারে, উন্নত করতে পারে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা কেউ আর থামাতে পারবে না।
কোস্ট গার্ডের উন্নয়নে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত ১৪ বছরে এই বাহিনীর জন্য বিভিন্ন আকারের ১৫৪টি আধুনিক ও দ্রুততম জাহাজ ও নৌযান নির্মাণ ও সংযোজন করা হয়েছে। এছাড়াও এ বাহিনীর বহরে যুক্ত হয়েছে ৪টি সামুদ্রিক টহল জাহাজ (ওপিভি) এবং জাপান থেকে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ১০ মিটার ও ২০ মিটার রেসকিউ বোট। কোস্ট গার্ডের ভেসেল ও জাহাজগুলো নির্মাণ, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য গজারিয়ায় একটি ডকইয়ার্ডও নির্মাণ করা হচ্ছে।
নতুন কমিশনিং হওয়া ৫টি নৌযানের মধ্যে নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত সরকারি প্রতিষ্ঠান নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ড অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসে নির্মাণ করা হয় ২টি ইনসোর পেট্রল জাহাজ বিসিজিএস জয় বাংলা, বিসিজিএস অপূর্ব বাংলা। ২টি টাগ বোট বিসিজিটি প্রত্যয়, বিসিজিটি প্রমত্ত এবং ভাসমান ক্রেন বিসিজিএফসি শক্তি নির্মাণ করেছে খুলনা শিপইয়ার্ড।
এ উপলক্ষে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা জেটিতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিতছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কোস্ট গার্ডের মহাপরিচালক (ডিজি) রিয়ার অ্যাডমিরাল আশরাফুল হক চৌধুরী।
অনুষ্ঠানে কমিশনিং হওয়া ৫টি নৌযানের ওপর একটি তথ্য-চিত্র প্রদর্শন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে কোস্ট গার্ডের মহাপরিচালক (ডিজি) রিয়ার অ্যাডমিরাল আশরাফুল হক চৌধুরী জাহাজগুলোর দায়িত্বপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেনদের হাতে ‘কমিশনিং ফরমান’ তুলে দেন।
>>> আরও পড়ুন: কোস্ট গার্ডের বহরে যুক্ত হলো অত্যাধুনিক ৫ নৌযান
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৫ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০২৩
এমইউএম/এমএমজেড