ঢাকা, শুক্রবার, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

হবিগঞ্জের নদী-খালবিল গিলছে ৬০০ দখলবাজ

বদরুল আলম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪০ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০২৩
হবিগঞ্জের নদী-খালবিল গিলছে ৬০০ দখলবাজ

হবিগঞ্জ: পুরো জেলায় নদী আছে ছোট বড় মিলিয়ে আটটি; সরকারি জলাশয়-খালবিল আছে পঞ্চাশের বেশি। কিন্তু এসবের কোনোটিই এখন দখলের বাইরে নেই।

৬০০ দখলবাজ প্রতিনিয়ত গিলে খাচ্ছে এসব নদী জলাশয়-খালবিল।

অভিযোগ আছে, ৬০০ দখলবাজের মধ্যে ব্যক্তি সংখ্যা বেশি। তা ছাড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও এসব নদী-জলাশয় দখল করে রেখেছেন। এদের তালিকা নদীরক্ষা কমিশনে থাকলেও আইন প্রয়োগ নেই। ফলে দখলদারদের সাহস আকাশ সমান উঁচু হয়েছে।

হবিগঞ্জের আটটি নদীর দখল ধরে রেখেছে তালিকাভুক্ত ২৩৮ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান। জলাশয়-খালবিলগুলোর দখল ৩৬২ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের হাতে।

নদীরক্ষা কমিশনের সূত্র বলছে, হবিগঞ্জ শহরের পুরাতন খোয়াই নদী দখল করেছে ১০১ জন। তা ছাড়া খোয়াই নদী ১১; নবীগঞ্জ উপজেলার কুশিয়ারা ৯, ডেবনা ১৯, বিবিয়ানা ৫৪, শাখা বরাক ১১, মাধবপুর উপজেলার কাস্টি নদীতে ৬ ও চুনারুঘাটের খোয়াই নদীতে স্থাপনা নির্মাণ করে রেখেছে ২৩ ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠান।

এসব নদীতে টিনের ঘর, আধাপাকা ঘর, মুদি দোকানসহ নানা ধরণের স্থাপনা রয়েছে। নদীরক্ষা কমিশনের প্রণীত তালিকায় এসব স্থাপনার কথা উল্লেখ আছে বলে সূত্রটি জানায়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, দখলদারদের মধ্যে রয়েছেন জনপ্রতিনিধি, সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, আইনজীবী এবং শিক্ষা, ধর্মীয় ও সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান।

অন্যদিকে ৩৬২ ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান সরকারি অর্ধশত জলাশয়-খালবিল দখল করে রাখায় সরকার থেকে রাজস্ব পাচ্ছে না। কিন্তু দখলদাররা নিজের মুনাফা মাছচাষসহ নানা কাজ করে ঠিকই হাতিয়ে নিচ্ছেন।

হবিগঞ্জ শহরে পুরাতন খোয়াই নদী ঘুরে দেখা গেছে, পাঁচ কিলোমিটার জুড়ে কয়েক হাজার অবৈধ স্থাপনা। ২০১৯ সালে জেলা প্রশাসন এসব স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান শুরু করেছিল। বহুতল ভবনসহ প্রায় দেড়শ স্থাপনা গুড়িয়ে দেওয়াও হয়। কিন্তু কোনো এক অজানা কারণে অভিযানটি আর দিনের আলো পায়নি।

এরপর থেকে গত চারবছর ধরে স্থানীয়রা নদী রক্ষায় উচ্ছেদ অভিযান চালাতে দাবি জানিয়ে আসছে। কিন্তু উদ্যোগ নিচ্ছে না জেলা প্রশাসন। বরং, আগের অভিযানে উদ্ধার অংশগুলোই ভরাট হয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জের সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল এ ব্যাপারে বলেন, পুরাতন খোয়াই নদী উদ্ধার না হওয়ার ব্যর্থতা জেলা প্রশাসনের। নদীটি দখলদারদের কবল থেকে দ্রুত উদ্ধার করাসহ বর্জ্য ও দূষণ বন্ধে কার্যক্রম শুরু করার জন্য প্রশাসনের প্রতি জোর দাবিও জানান তিনি।

সরকারের ঊর্ধ্বতন দপ্তরের এক কর্মকর্তাও প্রশাসনের এমন কর্মকাণ্ডের কারণে প্রশ্ন তুলেছেন। যদিও তিনি নিজের নাম প্রকাশ করেননি।

যোগাযোগ করা হলে হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক (ডিসি) ইশরাত জাহান এ বিষয়ে বলেন, অবৈধভাবে দখলে থাকা নদ-নদী ও জলাশয় চিহ্নিতকরণের কাজ চলছে। এজন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের তাগিদ দেওয়া হয়েছে। এরপরই উচ্ছেদের কাজ শুরু হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৮ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০২৩
এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।