সিলেট: দুয়ারে কড়া নাড়ছে পবিত্র ঈদুল আজহা। মাঝে একদিন এরপরই বৃহস্পতিবার (২৯ জুন) ঈদের নামাজ আদায় শেষে পশু কোরবানির মধ্য দিয়ে ঈদুল আজহা উদযাপন করবেন মুসলিম উম্মাহ।
ঈদে সিলেট বিভাগের বিভিন্ন স্থানে স্থায়ী-অস্থায়ী ২২৫টি পশুর হাট বসেছে। এসব হাটে চলছে কোরবানির পশু বেচা-বিক্রি।
তবে এবার শেষ বেলায় এসে জমেছে পশুর হাট, কিন্তু দাম চড়া। যদিও এবার ঈদে সিলেটে পর্যাপ্ত কোরবানির পশু না ওঠায় দামও চড়া।
তাছাড়া গুটি রোগের কারণে অসংখ্য খামারি ও ব্যক্তি পর্যায়ে পালিত পশু বিক্রিতারা বড় ধাক্কা খেয়েছেন। রোগের কারণে গরু বিক্রির জন্য বাজারে তুলছেন না। এর প্রভাব পড়েছে বাজারে উত্তোলিত গরুর দামেও।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের হিসেবেও এবার সিলেট এবং মৌলভীবাজারে খামার ও ব্যক্তি পর্যায়ে চাহিদা অনুপাতে পশুর মজুদ নেই। তবে বিভাগের সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জে চাহিদার বেশি পশু মজুদ থাকায় সিলেট অঞ্চলে কোরবানি যোগ্য পশুর ঘাটতি থাকবে না।
অন্যদিকে বাজারে ক্রেতারা গিয়ে দেখেশুনে ফিরে আসছেন, মাত্রাতিরিক্ত দামের কারণে। তাছাড়া নগরের পশুর হাটগুলো ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে তুলনামূলক কোরবানির পশু কম, আর চড়া দাম হাকাচ্ছেন ক্রেতারা।
নগরের ঐতিহ্যবাহী পশুর হাট কাজিরবাজার, অস্থায়ী নগরের কয়েদীর হাট, দক্ষিণ সুরমা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল ও ঝালোপাড়া, নগরের চৌকিদেখি, মদিনা মার্কেট, নগরের উপকণ্ঠ মিরাপাড়া, টুকেরবাজার, মেজরটিলা এলাকায় বসা পশুর হাটে কোরবানির পশু তেমন নেই। এছাড়া দক্ষিণ সুরমা ও ফেঞ্চুগঞ্জের মধ্যবর্তী হাজিগঞ্জ বাজারে খুঁটি গেড়ে রাখলেও পশুর হাটটি খালি পড়ে আছে। অথচ গত বছর বাজারটিতে কোরবানির পশুতে সয়লাব ছিল। বাজার ছেড়ে রাস্তায় বসেছিল পশুর হাট। স্থানীয়রাও এবার কোরবানির পশু সংকট এবং এ কারণে বাড়তি দামের কথা স্বীকার করেছেন।
তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশের উত্তরাঞ্চল, কুষ্টিয়া, নীলফামারিসহ বিভিন্ন স্থান থেকে কোরবানির পশুর আমদানি বাড়লেই দাম কমার পাশাপাশি ঘাটতিও থাকবে না।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মতে, সিলেট বিভাগে এ বছর কোরবানির পশুর চাহিদা ৩ লাখ ৯৩ হাজার ২৯৩টি। বিভাগজুড়ে গরু মহিষ, ছাগল ও ভেড়া ৪ লাখ ১০ হাজার ২২৫টি পশু ব্যক্তি ও খামার পর্যায়ে প্রস্তুত রয়েছে। এরমধ্যে সিলেট ও মৌলভীবাজারে চাহিদার ৪৫ হাজার ৫৩টি পশুর ঘাটতি রয়েছে।
সিলেটে কোরবানির পশুর চাহিদা এক লাখ ৪৯ হাজার ৮৯৭ এর বিপরীতে ১ লাখ ২০ হাজার ৮৩৮ এবং মৌলভীবাজারের কোরবানীর পশুর চাহিদা ৯৮ হাজার ৪০২ এর বিপরীতে ৭২ হাজার ৪১৫ প্রস্তুত রয়েছে।
তবে বিভাগের সুনামগঞ্জ এবং হবিগঞ্জ জেলায় চাহিদার তুলনায় ৭১ হাজার ৯৮৫ বেশি পশু কোরবানীর জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। বিভাগের সিলেট ও মৌলভীবাজারের পশুর ঘাটতি পার্শ্ববর্তী জেলা থেকে মেটানো সম্ভব।
বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তরে সিলেটের ডেপুটি চিফ ইপিডেমিওলজিস্ট মো. আছির উদ্দিন জানান, সিলেট বিভাগে মোট কোরবানিযোগ্য পশু হিসেবে কোনো ঘাটতি না থাকলেও জেলাভিত্তিতে সিলেট ও মৌলভীবাজারে ঘাটতি রয়েছে। তবে তা কোরবানিতে কোনো প্রভাব ফেলবে বলে মনে হয় না। কারণ সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জে চাহিদার চেয়ে বেশি কোরবানিযোগ্য পশু রয়েছে। যা বিভাগের বাকি ২ জেলার চাহিদা মেটাতে সক্ষম। এছাড়া কুষ্টিয়াসহ অন্যান্য জেলা থেকে যে পশু সিলেট আসবে, তাতে ঘাটতি হওয়ার কথা না।
দক্ষিণ সুরমার আলমগীর খন্দকার বলেন, বয়সের কারণে এখন আর হাটে তেমন একটা ঘোরাঘুরি করতে পারি না। তাই খামারে খামারে কোরবানির গরুর সন্ধান করছি। খামারে পালিত গরুগুলো দেখতেও যেমন সুন্দর হয়, তেমনি তাদের খাদ্যাভাস জানতে একটু চোখকান খোলা রাখলেই চলে। এছাড়া দেশের বাইরে থাকা ছেলেরাও ভিডিওকলে গরু দেখে পছন্দ করতে পেরেছে।
সিলেট কাজিরবাজার পশুর হাটের একাধিক ব্যাপারি জানান, সিলেটে মূলত ঈদের আগে দুদিন পশু বিকিকিনি হয়। আর এ টার্গেট থেকে সিলেটে বাইরের জেলা থেকে পশু নিয়ে তারা রওনা হন। অতীতে পথিমধ্যে বারবার বাধা আর হয়রানির শিকার হওয়ার কারণে পশুর মূল্য বাড়তো। এবারো বাধা, চাঁদাবাজির খবর আসছে। ফলে আগে থেকে যারা বাজারে কোরবানির পশু নিয়ে এসেছেন, তারাও গরুর দাম ছাড়ছেন না। বিকিকিনি বাড়লে হয়তো দাম কিছুটা কমতে পারে।
এদিকে কোরবানির হাট ও আশপাশের এলাকায় যাতে কোরবানির পশু বিক্রেতারা কোনো ধরনের হয়রানির শিকার না হন সেজন্য সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ ও জেলা পুলিশ কয়েকস্তরের নিরাপত্তা পরিকল্পনা নিয়েছে। হাইওয়েতে পশুবাহী গাড়ির নিরাপদ যাত্রা, কোনো ধরনের চাঁদাবাজি যাতে না হয় এবং সড়কে ইজারা বহির্ভূত পশুর হাট না বসে তার জন্য সতর্ক রয়েছে পুলিশ।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) সুদীপ দাস বলেন, মেট্রোপলিটন এলাকার স্থায়ী অস্থায়ী পশুর হাটের নিরাপত্তা নিশ্চিতে নানামুখী পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এক হাটের পশুবাহী ট্রাক যেন অন্য হাটে জোর করে নেওয়া না হয়, তার জন্য সবধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এদিকে, সিলেট রেঞ্জ ডিআইজি শাহ মিজান শাফিউর রহমান মঙ্গলবার (২৭ জুন) পশুর হাট পরিদর্শন করেছেন।
তিনি কোরবানির পশুর হাট, পশু পরিবহন ঘরমুখী মানুষের নিরাপদ যাত্রার বিষয়ে খোঁজখবর নেন। পরিদর্শনকালে রেঞ্জ ডিআইজি সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভায় অংশগ্রহণ করেন এবং দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন। তিনি সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন।
এ সময় ডিআইজির সঙ্গে সিলেট জেলার পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ পুলিশ কর্মকর্তারা, গোলাপগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান মঞ্জুর কাদির এলিম চৌধুরী, পৌর মেয়র আমিনুল ইসলাম রাবেল, উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি লুৎফুর রহমান ও উপজেলা নিবাহী কর্মকর্তা মৌসুমী মান্নানসহ বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা, কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫০ ঘণ্টা, জুন ২৮, ২০২৩
এনইউ/জেএইচ