ঢাকা, মঙ্গলবার, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ফরিদপুরে ঐতিহ্যবাহী লাঠি খেলা অনুষ্ঠিত

হারুন-অর-রশীদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৭ ঘণ্টা, জুলাই ১, ২০২৩
ফরিদপুরে ঐতিহ্যবাহী লাঠি খেলা অনুষ্ঠিত

ফরিদপুর: আধুনিক সভ্যতা ও প্রযুক্তির ছোঁয়ায় হারিয়ে যাওয়া গ্রাম বাংলার হারানো ঐতিহ্যকে বর্তমান প্রজন্মের সামনে তুলে ধরতে ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলায় অনুষ্ঠিত হয়ে গেল বিলুপ্তপ্রায় লাঠি খেলা।

শনিবার (০১ জুলাই) বিকাল ৫টায় উপজেলার চর সুলতানপুর হাইস্কুল মাঠে ঢাঁক-ঢোলের বাজনায়, গানের তালে তালে এ আনন্দময় উৎসবের আয়োজন করা হয়।

 

আনোয়ারা মান্নান বেগের আয়োজনে ও আর্কিটেক্ট মুজাহিদ বেগের ব্যবস্থাপনায় গ্রাম-বাংলার হারানো ঐতিহ্যবাহী লাঠি খেলার শুরুতে ঢাক, ঢোল আর কাসার ঘণ্টার তালে তালে চলে লাঠির কসরত। প্রতিপক্ষের লাঠির আঘাত থেকে নিজেকে রক্ষা ও পাল্টা আঘাত করতে ঝাঁপিয়ে পড়েন লাঠিয়ালরা। তাতে উৎসাহ দেন শত শত দর্শক।  

আবহমান বাংলার ঐতিহ্যবাহী এই আয়োজনকে ঘিরে স্থানীয়দের মধ্যে ছিল উৎসবের আমেজ। এ লাঠি খেলা দেখতে দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসেন দর্শকরা।

সমাজ থেকে অন্যায় অপরাধ দূর করতে আর হারানো ঐতিহ্য ধরে রাখতেই এই আয়োজন। বিপথগামী যুব সমাজের মাদকাসক্ততা মূল্যবোধের অবক্ষয় রোধে লাঠি খেলার মত আয়োজন পথ দেখাবে, যুক্ত করবে সম্প্রীতির বাঁধনে। নিয়মিত আয়োজনের জন্য পৃষ্ঠপোষকতার দাবি করেন আয়োজকরা।

এ লাঠি খেলায় প্রধান অতিথি হিসেবে উদ্বোধন করেন ফরিদপুরের স্বনামধন্য চক্ষু চিকিৎসক ও সমাজসেবক ডা. মহাসিন বেগ।

এ সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- জেলা পরিষদের সদস্য ইলিয়াস বেগ, শিল্পপতি ও ক্রীড়ামোদী ব্যক্তিত্ব শামসুল হক বেগ ও আর্কিটেক্ট মুজাহিদ বেগ।

এতে ফরিদপুরের ঐতিহ্যবাহী লাঠিয়াল দল ফরিদপুর সদরের শাপলা শালুক বনাম যমুনা ধোপাডাঙ্গা চাঁদপুর দল অংশগ্রহণ করেন।

প্রসঙ্গ, লাঠি খেলা একটি ঐতিহ্যবাহী বাঙালি মার্শাল আর্ট–লাঠির দ্বারা এক ধরনের লড়াই–যা ভারত ও বাংলাদেশ অনুশীলন করা হয়। 'লাঠি খেলা' অনুশীলনকারীকে 'লাঠিয়াল' বলা হয়। এছাড়াও, লাঠি চালনায় দক্ষ কিংবা লাঠি দ্বারা মারামারি করতে পটু কিংবা লাঠি চালনা দ্বারা যারা জীবিকা অর্জন করে, তারা লেঠেল বা লাঠিয়াল নামে পরিচিতি পান।

লাঠি খেলাটি লাঠি দিয়ে আত্মরক্ষা শেখায়। ব্রিটিশ শাসনামলে অবিভক্ত বাংলার জমিদাররা (পূর্ব বাংলা ও পশ্চিম বঙ্গ) নিরাপত্তার জন্য লাঠিয়ালদের নিযুক্ত করতো। চরাঞ্চলে জমি দখলের জন্য মানুষ এখনও লাঠি দিয়ে মারামারি করে। মহরম ও পূজাসহ বিভিন্ন ধর্মানুষ্ঠানে এই খেলাটি তাদের পরাক্রম ও সাহস প্রদর্শনের জন্য খেলা হয়ে থাকে। এই খেলার জন্য ব্যবহৃত লাঠি সাড়ে ৪ থেকে ৫ ফুট লম্বা ও প্রায়ই তৈলাক্ত হয়।  

অত্যাশ্চর্য কৌশলের সঙ্গে প্রত্যেক খেলোয়াড় তাদের নিজ নিজ লাঠি দিয়ে রণকৌশল প্রদর্শন করে। শুধুমাত্র বলিষ্ঠ যুবকেরাই এই খেলায় অংশ নিতে পারে। কিন্তু বর্তমানে শিশু থেকে শুরু করে যুবক, বৃদ্ধ সব বয়সের পুরুষেরাই লাঠিখেলায় অংশ নিয়ে থাকেন। উত্তরবঙ্গে, ঈদের সময়ে চাঁদি নামক একটি অনুরূপ খেলা হয়। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ অংশে পূজাসহ বিভিন্ন ধর্মানুষ্ঠানের সময় "লাঠি খেলা" এর প্রদর্শনী এখনও আছে। বাংলায় গুরুসদয় দত্ত কর্তৃক ব্রতচারী আন্দোলনের সময়ও লাঠি খেলা অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল।

লাঠি খেলার অসাধারণ ইতিহাস আছে কিন্তু বাংলাদেশে এর জনপ্রিয়তা এখন পড়তির দিকে। ঈদ উপলক্ষে লাঠিখেলার আয়োজন ফরিদপুর, সিরাজগঞ্জ, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, জয়পুরহাট, পঞ্চগড়, নড়াইল প্রভৃতি জেলায় ভিন্ন নামে দেখা যায়। লাঠি খেলা নিয়ে বর্তমানে নতুন দল তৈরি হচ্ছে না। এছাড়া পৃষ্ঠপোষকতার অভাবেও লাঠি খেলা হারিয়ে যেতে বসেছে।

বাংলাদেশ সময়: ২১০৭ ঘণ্টা, জুলাই ০১, ২০২৩
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।