ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ডেঙ্গু পরিস্থিতিতে চিকিৎসার মান-পরিধি বাড়ানোর আহ্বান তাপসের

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১০ ঘণ্টা, জুলাই ৫, ২০২৩
ডেঙ্গু পরিস্থিতিতে চিকিৎসার মান-পরিধি বাড়ানোর আহ্বান তাপসের সোনারগাঁও হোটেল সংলগ্ন হাতিরঝিল পানি নিষ্কাশন যন্ত্র (এসএসডিএস) পরিদর্শনে মেয়র তাপস। ছবি: রাজীন চৌধুরী

ঢাকা: ডেঙ্গুতে মৃত্যুর হার বাড়তে থাকায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে তাদের চিকিৎসাসেবার মান ও পরিধি আরও বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।

তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে অন্যান্য দেশের তুলনায় ভালো অবস্থানে রয়েছি, যদিও আমাদের দেশে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর হার বাড়ছে।

এখানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে আরও নজর দিতে হবে।  

তিনি আরও বলেন, চিকিৎসাসেবার মান ও পরিধি আরও বাড়াতে হবে। কোনো রোগী যাতে শঙ্কাজনক অবস্থায় না যায়, সেজন্য প্রাথমিকভাবে যে কার্যক্রমগুলো নেওয়া দরকার, তা নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে আমরা মৃত্যুর হার কমাতে পারব।

বুধবার (৫ জুলাই) রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেল সংলগ্ন হাতিরঝিল পানি নিষ্কাশন যন্ত্র (এসএসডিএস) পরিদর্শন শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

ডিএসসিসি মেয়র আরও বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে জানুয়ারি মাস থেকে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে আমরা দফায় দফায় সভা করেছি। যখনই আমরা ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবের আভাস পেয়েছি, তখনই আমরা আমাদের কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছি। যেসব এলাকায় ডেঙ্গু রোগী বেশি, গতকাল থেকে আমরা সেসব এলাকায় চিরুনি অভিযান শুরু করেছি। এর বাইরে আমাদের নৈমিত্তিক যে কার্যক্রম, তা চলমান। যারা দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করছে না, তাদের বিরুদ্ধে আমরা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছি। এর ফলও আমরা পাওয়া শুরু করেছি।

এবার অগ্রিম ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব লক্ষ্য করা গেছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ডেঙ্গু এখন কিছুটা বেড়েছে। ডেঙ্গুর ভরা মৌসুমে আমাদের সামষ্টিক যে কার্যক্রম, তাতে আমরা আশা করি, এটি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে পারব। ডেঙ্গু বা এডিস মশা পুরোপুরি নির্মূল কোনো দেশই করতে পারেনি। যদি কোনো সমাধান থাকে, তাহলে আমরা সেটি নেব।

এডিস মশা বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন করছে জানিয়ে তাপস বলেন, এবার তাপদাহের সময়ও আমরা ডেঙ্গু রোগী পেয়েছি। কিন্তু সে সময় ডেঙ্গু হওয়ার কথা নয়। এসব বিষয় আমরা আমলে নিচ্ছি এবং আমাদের কার্যক্রমকে আরও বিস্তৃত করছি। ২০২১ সালে আমরা দুই মাসের কার্যক্রম নিয়েছিলাম। এখন আমরা সেটিকে বাড়িয়ে চার মাসের কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। আমরা আমাদের সক্ষমতা বাড়িয়েছি।

রাজধানীবাসীর প্রতি অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, আপনারা যেখানে মনে করবেন এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যেতে পারে বা আশঙ্কা করছেন কোথাও পানি জমে আছে, সেটির তথ্য আমাদের জানানো মাত্রই ১৫ মিনিটের মধ্যে আমাদের মশককর্মী সেখানে পৌঁছে লার্ভা ধ্বংস করে পানির আধার বিনষ্ট করবে এবং সেই জায়গা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে দেবে। সুতরাং আমাদের তথ্য দিয়ে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করে সহযোগিতা করুন। এ ছাড়া এখন থেমে থেমে বৃষ্টি হবে। তাই আপনার নিজেরা বাড়ি, ফুলের টব, ছাদ, চৌবাচ্চা কোথাও পানি কোথাও জমতে দেবেন না।  যদি আপনি পানির উৎস ধ্বংস করতে পারেন, তাহলে আমরা ডেঙ্গু রোগ থেকে মুক্ত হতে পারব।

তিনি আরও বলেন, আমাদের চেয়ে উন্নত দেশগুলোতেও ডেঙ্গু একেবারে নির্মূল করার কোনো সমাধান আবিষ্কৃত হয়নি। তাই আমি বলতে পারব না, আমাদের বিশেষজ্ঞরা ভুল মতামত দিচ্ছেন বা সেটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মতামতের বিরোধী। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কোন কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে, আমাদের বিশেষজ্ঞরা সেটি নির্ধারণ করে দেন, কোন কোন সময় এবং কোন কোন জায়গায় আমাদের কার্যক্রম বাড়াতে হবে, সেটি জানান। তাদের মতামতের ভিত্তিতে আমরা আমাদের কার্যক্রম পরিচালনা করি। এভাবেই আমরা ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছি।

ঢাকা উত্তরের তুলনায় দক্ষিণ সিটিতে ডেঙ্গু রোগীর হার বেশি এবং ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ডিএসসিসির ব্যবস্থাপনা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র তাপস বলেন, ঢাকার উত্তর অঞ্চলটি অনেকটা পরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে। সেই তুলনায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে পরিকল্পিত নগরায়ন কম হয়েছে। আমাদের এখানে জনসংখ্যার হার বেশি। এখানে প্রতিকূলতাও বেশি। তারপরও আমরা ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছি। আমরা এসব প্রতিকূলতা বিবেচনা করে আমরা আমাদের কর্ম পরিকল্পনা সাজিয়েছি। আমাদের প্রতিটি ওয়ার্ডে সকালে সাতজন এবং বিকেলে ছয়জন কাজ করছেন। তাদের পর্যাপ্ত কীটনাশক ও যন্ত্র দেওয়া হয়েছে। নিবিড় তদারকি আমরা করছি। এখানে কারো সঙ্গে আমাদের প্রতিযোগিতা নেই। আমাদের দায়িত্ব আমরা পালন করছি।

তিনি আরও বলেন, ঢাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে আমরা বিভিন্ন স্বল্পমেয়াদি কার্যক্রম নিয়েছি। এর পাশাপাশি এখন মধ্যমমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি সমাধানে যেতে হবে। তা না হলে আমরা সাময়িক সময়ের জন্য এলাকাবাসীকে সুফল দিতে পারলেও, দীর্ঘমেয়াদি সুফল দিতে পারব না।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০৭ ঘণ্টা, জুলাই ৫, ২০২৩
এসসি/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।