ঢাকা: তামিম ইকবালের অবসরের ঘোষণায় ভক্তদের ঘোর যেন কাটছিল না। অবসরের ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভক্তদের আবেগতাড়িত পোস্ট ছিল তামিমকে ফিরে আসার অনুরোধ জানিয়ে।
বিশেষ করে গতকাল বৃহস্পতিবার (৬ জুলাই) সবার নজরে আসে বাংলাদেশ ক্রিকেটের একনিষ্ঠ ভক্ত টাইগার শোয়েবের মাটিতে গড়াগড়ি খাওয়ার দৃশ্য। শুক্রবার (৭ জুলাই) মানববন্ধন করছেন টাইগার শোয়েবসহ তামিমের অসংখ্য ভক্ত-সমর্থক। ভক্তদের ধারণা, অভিমান করে অবসর নিয়েছেন তামিম ইকবাল।
এর মধ্যেই তামিমকে গণভবনে ডাকেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সঙ্গে ছিলেন মাশরাফি বিন মর্তুজা ও বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান পাপন। ভেতরে যখন আলোচনা চলছে, বাইরে তখন সংবাদকর্মীদের সঙ্গে ছিল তামিম-ভক্তদের ভিড়।
তামিমের গণভবনে আসার খবর পেয়ে দর্শকরা ছুটে যান সেখানে। প্ল্যাকার্ড হাতে তারা রাস্তায় দাঁড়িয়ে পড়েন। তাদের দাবি ছিল, অবসর ভেঙে ফের ক্রিকেটে ফিরবেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের এই সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক। এ সময় অনেকেই পোস্টার হাতে নিয়েও দাঁড়ান। ডাকার জন্য ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রীকেও।
ভিড়ের মধ্যে থেকে একজন মাঝবয়সী লোক হঠাৎ করে চিৎকারও করে ওঠেন- ‘প্লিজ তামিম ভাই, প্লিজ ফিরে আসুন। আপনার বিকল্প এখনো তৈরি হয়নি, প্লিজ ফিরে আসুন। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলতে চাই, আপনি চাইলে সম্ভব। প্লিজ তামিম ইকবালকে ফিরিয়ে আনুন। ’
দুপুর ২টা ৩৩ মিনিটে গণভবনে প্রবেশ করেন তামিম ইকবাল। এর কিছুক্ষণ পরে গণভবনে যান বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। আর তারা দুজনই বের হন সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে। যখন তামিম ইকবাল গণভবন থেকে বের হন, তখন তাকে দেখে উচ্ছ্বসিত হন সাংবাদিকরা, আর তার অগণিত ভক্তরা।
অবস্থা এমন, ভক্তদের হৈ-হুল্লোড়ে সাংবাদিকদের সাক্ষাৎকার নেওয়াই ছিল দুষ্কর। চারদিক থেকে একটাই আওয়াজ, ‘তামিম ভাই আপনি যাবেন না। আমরা আপনার সঙ্গে বিশ্বকাপে যেতে চাই। ’ আর যখন তামিম সত্যিই অবসর প্রত্যাহারের ঘোষণা দিলেন, তখন প্রায় সবাই কেঁদে ওঠেন আনন্দে।
গণভবন থেকে বের হয়ে সংবাদমাধ্যমকে তামিম অবসরের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা প্রসঙ্গে বলেন, ‘আজ দুপুরে আমাকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দাওয়াত করেছিলেন। তার সঙ্গে অনেকক্ষণ আমরা আলোচনা করেছি। তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন খেলায় ফিরে আসতে। আমি আমার অবসর এই মুহূর্তে তুলে নিচ্ছি। কারণ, আমি সবাইকে না বলতে পারি, কিন্তু যিনি দেশের সবচেয়ে বড় ব্যক্তি, তাকে না বলা আমার পক্ষে অসম্ভব। তাতে অবশ্যই পাপন (নাজমুল হাসান) ভাই ও মাশরাফি ভাইয়ের বড় ভূমিকা ছিল। মাশরাফি ভাই আমাকে ডেকে নিয়েছেন। পাপন ভাই সঙ্গে ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী আমাকে দেড় মাসের একটা ছুটিও দিয়েছেন। আমি যেন মানসিকভাবে আরেকটু ফ্রি হতে পারি। ’
বিসিবি সভাপতি নাজমুল পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন। সংবাদকর্মীদের তিনি বলেন, ‘আমার একটা ধারণা হয়েছিল ওর (তামিমের) প্রেস কনফারেন্সটা দেখে, হয়তো আবেগ থেকে সিদ্ধান্তটা নিয়েছে। আমার একটা বিশ্বাস ছিল, ওর সঙ্গে যদি সামনাসামনি একবার বসতে পারি, তাহলে হয়তো এর একটা সমাধান পাব। আজ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে আমরা সবাই ওর সঙ্গে বসেছিলাম এবং ও আপনাদের সামনেই বলে গেল, সে যে অবসরের চিঠিটা দিয়েছে, সেটা সে প্রত্যাহার করছে। সে অবসর নেয়নি। যেহেতু সে শারীরিক ও মানসিকভাবে এখনো ফিট না, সে জন্য সে দেড় মাস সময় নিয়েছে। এই দেড় মাসে পুনর্বাসন করে আশা করছি শিগগিরই আমাদের ক্রিকেটে ফিরে আসবে। ’
তামিমের অবসর ভেঙে ফেরা কতটা স্বস্তির, এমন এক প্রশ্নের জবাবে নাজমুল বলেছেন, ‘অবশ্যই। এটা সবার জন্যই স্বস্তির। আমাদের অধিনায়কই যদি না থাকে, আমরা খেলব কীভাবে!’
দেড় মাস পর এশিয়া কাপে তামিম অধিনায়ক হিসেবেই ফিরবেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে নাজমুল বলেন, ‘ইনশআল্লাহ। ’
আগামী ৩১ আগস্ট শুরু হবে এশিয়া কাপ। তবে দেড় মাসের ছুটিতে থাকা মানে তামিম আফগানিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের পরের দুই ম্যাচ খেলবেন না। এরই মধ্যে তামিমের জায়গায় লিটন দাসকে অধিনায়ক করার ঘোষণা দিয়েছে বিসিবি। তামিমের বদলে দলে ডাকা হয়েছে রনি তালুকদারকেও।
এর আগে বৃহস্পতিবার (৬ জুলাই) চট্টগ্রামের একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দেন তামিম। তার এমন অস্বাভাবিক বিদায়ের সিদ্ধান্তের কোনো সুনির্দিষ্ট কারণও তিনি জানাননি। এমনকি বিষয়টি নিয়ে নির্দিষ্ট তথ্য জানাতে পারেননি বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনও।
তামিমের অবসর ভেঙে ফেরার খবর শোনার সঙ্গেসঙ্গেই উৎসবে মেতে ওঠে গোটা দেশ। চট্টগ্রামে তামিমের পরিবারও নিচে নেমে এসে মিষ্টি বিতরণ করেন। মিষ্টি বিতরণের খবর পাওয়া গেছে দেশের আরও অনেক জায়গা থেকে। সবাই ভাগাভাগি করে নিয়েছেন এই আনন্দ।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৫ ঘণ্টা, জুলাই ৭, ২০২৩
এইচএমএস/আরএইচ