যশোর : পাঁচ বছরের মেয়ে খাদিজাকে চিকিৎসা করাতে যশোর শহরে এসেছিলেন সোনিয়া বেগম। সঙ্গে ছিল দুই বছর বয়সী যমজ সন্তান হাসান ও হোসাইন।
আর তাদের বহনকারী ইজিবাইক দুর্ঘটনায় পড়লে শেষ হয়ে যায় গোটা একটি পরিবার। সোনিয়া বেগম ও তার কন্যা খাদিজা ছাড়া বেঁচে নেই কেউ।
ভয়াবহ এ দুর্ঘটনা ঘটে গত ৭ জুলাই যশোর-মাগুরা মহাসড়কের লেবুতলা এলাকায়।
নিহতরা সবাই বাঘারপাড়া উপজেলার যাদবপুর গ্রামের বাসিন্দা। গতকাল (শনিবার) সকাল সাড়ে ১০টায় নিহতদের সবার জানাজা শেষে দাফন সম্পন্ন হয়।
কোলে থাকা আদরের ধন যমজ শিশু হাসান ও হোসেন যে পৃথিবীতে নেই, তাদের দাফনও হয়েছে সেটা এখনও জানেন না মা সোনিয়া। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজে ও মেয়ে খাদিজা খাতুন যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
নিহত হাসান-হোসাইনের দাদা জলিল মুনসী বলেন, শিশু খাদিজার বাবা হেলাল মুনসী পেশায় একজন গার্মেন্টস কর্মী। থাকেন ঢাকায়। মেয়ে খাদিজার টনসিলের চিকিৎসার জন্য টাকা পাঠিয়েছিল সে। ওই টাকা নিয়ে বউমা (সোনিয়া বেগম) তার মা-খালা ও খালাতো বোনকে সঙ্গে নিয়ে ইজিবাইকে করে যশোর যাচ্ছিল। পথে যশোরের লেবুতলায় রয়েল কোচ পরিবহনের একটি বাস ওই ইজিবাইকটিকে চাপা দেয়। এতে যমজ শিশু হাসান-হোসাইন, বউমার মা মাহিমা, খালা রাহিমা ও খালাতো বোন জেবা ঘটনাস্থলেই নিহত হয়।
নিহত মাহিমা খাতুনের দেবর ইমরান মুনসী জানান, এ দুর্ঘটনায় পুরো তিনটি প্রজন্ম শেষ হয়ে গেছে। এ ক্ষতি কোনদিনই পূরণ হবে না। তবে এদের পরিবার হতদরিদ্র, তাদের শোকাহত পরিবারের প্রতি সরকারের সার্বিক সহযোগিতার দাবি করছি আমরা।
সরেজমিনে বাঘারপাড়ার যাদবপুরে দেখা গেছে, গোটা গ্রামে শোকাবহ পরিবেশ বিরাজ করছে। দুই বছর বয়সী যমজ শিশু হাসান ও হোসেনের মৃত্যুতে নিস্তব্ধ হয়েছে গ্রামের মানুষগুলো। এই দুই শিশুর বাবা হেলাল মুন্সী ও দাদি রেণুকা বেগমের আহাজারিতে বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে।
সকালে যাদবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে নেওয়া হয়। চোখের জলে শেষবিদায় জানাতে গ্রামের হাজারো মানুষ তাদের জানাজায় অংশ নেন। জানাজা শেষে যাদবপুর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে অবস্থিত যাদবপুর মুন্সীবাড়ি পারিবারিক কবরস্থানে তাদের দাফন করা হয়। নিহত শিশুদের জন্য দোয়া করতে সেখানেও শত শত মানুষ উপস্থিত হন।
এছাড়াও তাদের নানি মহিমা খাতুনকে বাঘারপাড়া উপজেলার যাদবপুর গ্রামে ও মহিমার বোন রহিমা ও রহিমার মেয়ে জেবাকে পার্শ্ববর্তী সেকেন্দারপুর গ্রামে এবং ইজিবাইকের চালক ইমরান হোসেনকে মথুরাপুর গ্রামে পৃথক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
এদিকে, এ ঘটনার পর শনিবার সকাল থেকে যশোর মাগুরা মহাসড়কে ইজিবাইক, অটোভ্যান, ও অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ।
খাজুরা পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই অভিজিৎ সিংহ রায় বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় ৭ জনের মারা যাওয়া, এটি খুবই দুঃখজনক ঘটনা। আমরা গত ২ জুলাই থেকে সড়কে অভিযান অব্যাহত রেখেছি। আজ সকাল থেকে এ অভিযান আরও জোরদার করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময় : ১১২৫ ঘণ্টা, জুলাই ০৯, ২০২৩
ইউজি/এসএএইচ