লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুরে খোলা আকাশের নিচে পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের মোটরযান। আইনি জটিলতার কারণে বছরের পর বছর রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে এসব মোটরযানের যন্ত্রপাতি বিনষ্ট হয়ে গেছে।
তবে স্থানীয় লোকজন এবং আইনজীবীরা পুলিশের গাফিলতি ও আইনের জটিলতাকে দুষছেন। তাদের মতে, আইনি জটিলতা নিরসনের মাধ্যমে যথাযথ ব্যবস্থা নিয়ে দেশের সম্পদ রক্ষায় সবাইকে আরও আন্তরিক হতে হবে।
জানা গেছে, বিভিন্ন সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে কাগজপত্রবিহীন ও নানা অপরাধের ঘটনায় মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন মোটরযান জব্দ করা হয়। পরে সেগুলো লক্ষ্মীপুর পুলিশ লাইনস্, বিভিন্ন থানা, আদালতপাড়া ও বিআরটিএ অফিসের সামনে ফেলে রাখা হয়। বছরের পর বছর ধরে এভাবেই খোলা আকাশের নিচে অযত্নে অবহেলায় যানবাহনগুলো পড়ে থাকে। সরকারি মালখানায় অযত্নে পড়ে থাকা এসব গাড়ির কাঠামো বা চ্যাসিজ ছাড়া অবশিষ্ট তেমন কিছুই নেই। বৃষ্টিতে ভিজে, রোদে পুড়ে মরিচা পড়ে ইঞ্জিন, চাকা এবং গাড়ির অবকাঠামো অনেকাংশে নষ্ট হয়ে গেছে। আইনি জটিলতার কারণে অনেক মালিকই এগুলো যথাসময়ে ছাড়িয়ে নিতে পারেন না। ফলে এক সময় এগুলো চালানোর অনুপযোগী হয়ে পড়ে। কতগুলো গাড়ি অযত্নে পড়ে আছে, তার সুনির্দিষ্ট হিসাবও পাওয়া যায়নি পুলিশ কিংবা বিআরটিএ কার্যালয় থেকে।
স্থানীয়রা বলছেন, জব্দকৃত যানবাহনগুলো দ্রুত আইনি প্রক্রিয়ায় প্রকৃত মালিকদের কাছে হস্তান্তর কিংবা নিলামের উদ্যোগ নেওয়া হলে এগুলো ব্যবহার করা যেত। এতে দেশের সম্পদ নষ্ট হতো না। সরকারও রাজস্ব পেত।
তাদের মতে, জব্দকৃত যানবাহনগুলো সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া উচিত।
লক্ষ্মীপুর জজ আদালতের আইনজীবী হারুনুর রশিদ ব্যাপারী ও মোসাদ্দেক হেসেন বাবর বলেন, জব্দ করা গাড়িগুলো অযত্নে অবহেলায় পড়ে থাকে। এতে পুলিশের গাফিলতিও আছে। যেসব মামলায় যানবাহন সম্পৃক্ত, সেই মামলাগুলোর চার্জশিট যথাসময়ে দেওয়া হয় না। তাই আইনি জটিলতায় দীর্ঘ সময় পড়ে থাকায় যানবাহনগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। কাগজপত্রবিহীন গাড়িগুলোও নিলামের উদ্যোগ নেওয়া হয় না। দ্রুত আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিলামের উদ্যোগ নিলে খোলা আকাশের নিচে পড়ে থেকে নষ্ট হতো না। এজন্য আইন সংশ্লিষ্ট সবাইকে আরও আন্তরিক হতে হবে। এতে দেশের সম্পদ বিনষ্ট হওয়া থেকে রক্ষা পাবে।
লক্ষ্মীপুর বিআরটিএ এর সহকারী পরিচালক মো. এনায়েত হোসেন মন্টু বলেন, আইনি জটিলতায় পড়ে থেকে জব্দকৃত গাড়িগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আইনি প্রক্রিয়া যদি আরও সহজ হতো তাহলে জব্দকৃত এসব আলামত প্রকৃত মালিকের নিকট হস্তান্তর করা যেত কিংবা নিলামে দেওয়া যেত।
লক্ষ্মীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আবু বকর ছিদ্দিক বলেন, ট্রাফিক পুলিশের অভিযানে অবৈধ, ফিটনেস বিহীন গাড়ি, রেজিস্ট্রেশন বিহীন গাড়ি জব্দ করে আমরা আদালতে আইন অনুযায়ী রিপোর্ট করি। গাড়ির মালিকানা যাচাই করে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী নিষ্পত্তি করি। আদালতের নির্দেশনা পেলে আমরা গাড়িগুলো নিলামেও দিতে পারি। আদালত যত দ্রুত এসব বিষয়ে আমাদের নির্দেশনা দেবেন, তত দ্রুত আমরা সমাধান করতে পারব। তারপরও আমরা চেষ্টা করি, রাষ্ট্রের সম্পদ রক্ষা করতে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৬ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০২৩
এসআই