নওগাঁ: নওগাঁয় এক চালকের মুক্তির দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো জেলার অভ্যান্তরীণ সব রুটে চলছে বাস ধর্মঘট।
কোনো ঘোষণা ছাড়াই মঙ্গলবার (০৮ আগস্ট) সকাল থেকে জেলার অভ্যন্তরীণ রুটে বাস চলাচল বন্ধের ঘোষণা দেয় জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন।
বুধবার (০৯ আগস্ট) সকাল ৯টায় নওগাঁ শহরের বালুডাঙ্গা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, টার্মিনাল থেকে জেলার অভ্যান্তরীণ রুটে কোনো বাস ছেড়ে যাচ্ছে না। তবে বিভিন্ন পরিবহণের রাজশাহী, বগুড়া, ঢাকাসহ আন্তঃজেলা বাসগুলো ছেড়ে যাচ্ছে। জেলা শহর থেকে সাপহার, নজিপুর, মহাদেবপুর, নিয়ামতপুর, পোরশাসহ বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়ার জন্য বাসস্ট্যান্ডে এসে অনেককেই দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
অভ্যন্তরীণ রুটে চলাচলকারী বাস না পেয়ে গন্তব্যে যেতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের। বাস না পেয়ে অনেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও ইলেক্ট্রিক ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকে করে বিভিন্ন গন্তব্যে যাচ্ছেন। এতে বেশি ভাড়া গুনতে হচ্ছে যাত্রীদের। যাত্রীরা বলছেন, ধর্মঘটকে পুঁজি করে অটো ও ইজিবাইকের চালকেরা আরও অতিরিক্ত ভাড়া লুটে নিচ্ছেন।
একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার কর্মকর্তা শফিউল আজম। সকাল ৯টায় তার সঙ্গে কথা হয় বালুডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে। তিনি বলেন, আমি পরিবার নিয়ে নওগাঁ শহরে থাকি। আমার কর্মস্থল নজিপুরে। সকাল ১০টার মধ্যে অফিসে হাজিরা দিতে হবে। কিন্তু বাসস্ট্যান্ড থেকে গতকালের মতো কোনো বাস ছাড়ছে না। বাধ্য হয়ে দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে অটোরিকশাতে যেতে হবে। এই ধর্মঘট যতদিন চলবে, ততদিন এভাবেই ভোগান্তি সইতে হবে। পরিবহণ শ্রমিকদের কাছে সাধারণ যাত্রীরা সব সময় জিম্মি।
জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন ও বাস মালিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, গত ১ জুলাই নওগাঁ-সাপাহার রুটে চলাচলকারী একটি বাসের ব্রেক ফেল করায় চালক গাড়িটির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। এতে নওগাঁ শহরের জলিল পার্ক এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারানো বাসটির সঙ্গে দুইটি মাইক্রোবাসের সংঘর্ষ হয়। এতে দুর্ঘটনা কবলিত বাস ও মাইক্রোবাসে থাকা যাত্রী ছাড়াও পার্কে ঘুরতে আসা বেশ কয়েকজন দর্শনার্থীসহ অন্তত ২০ জন আহত হন। পরবর্তীতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে একজনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় থানায় একটি মামলা হয়। ওই মামলার বাসের চালক ইমরান হোসেন গত ১৭ জুলাই আদালতে হাজির হয়ে জামিনের জন্য আবেদন করলে আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠায়।
গত রোববার (০৬ আগস্ট) পরবর্তী শুনানিতেও আদালত ওই চালকের জামিন নামঞ্জুর করেন। বাস চালক ইমরানসহ সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন দুর্ঘটনার মামলায় নওগাঁ জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাতজন শ্রমিক কারাগারে রয়েছেন। ইমরানসহ গ্রেপ্তার সব শ্রমিকের মুক্তির দাবিতে মঙ্গলবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য জেলার অভ্যন্তরীণ রুটে বাস ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন সাধারণ শ্রমিকরা।
নওগাঁ জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আজহারুল ইসলাম বলেন, আমাদের একজন বাস চালকের নামে মামলা হয়েছে। মামলার পর আমরা নিজেরা আদালতে উপস্থিত থেকে তাকে জামিনের জন্য আবেদন করতে বলি। কিন্তু বিচারক জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। এভাবে পরপর তিনবার তার জামিন নামঞ্জুর করা হয়। তার মুক্তির দাবিতে শ্রমিকেরা এখন কর্মবিরতি শুরু করেছেন।
তিনি আরও বলেন, বাদীপক্ষের সঙ্গে আপোষনামা করে আগামী রোববার আবারও আদালতে জামিনের জন্য আবেদন করা হবে। জামিন না হলে শ্রমিকদের এই কর্মবিরতি চলতেই থাকবে।
বাংলাদেশ সময়: ১২৫৮ ঘণ্টা, আগস্ট ০৯, ২০২৩
এফআর