কক্সবাজার: টানা তিনদিন পানিবন্দি থাকার পর পানি নামতে শুরু করেছে কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলায়। পেকুয়া সদরসহ কয়েকটি ইউনিয়নের ৩০টি গ্রামের অন্তত তিন হাজার পরিবার বন্যায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছে।
বন্যা কবলিত এলাকায় এরি মধ্যে দেখা দিয়েছে খাদ্য ও সুপেয় পানির সংকট।
তবে দুর্গত মানুষের দুর্ভোগ কমাতে খাদ্যসহ মানবিক সহায়তা নিয়ে নিরলসভাবে বিরামহীন কাজ করে যাচ্ছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পূর্বিতা চাকমা। তিনি মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে খাবার বিতরণ করছেন। দুর্গত মানুষের জন্য একজন নারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার এমন কর্ম তৎপরতা এলাকায় প্রশংসা কুড়িয়েছে।
এদিকে শুক্রবার (১১ আগস্ট) পেকুয়ায় বন্যা দুর্গত এলাকা পরিদর্শনে যাচ্ছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ইউএনও পূর্বিতা চাকমা বলেন, প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান ১১ আগস্ট দুর্গত এলাকা পরিদর্শন এবং পেকুয়ার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করার কথা রয়েছে।
তিনি বলেন, বন্যার পানি কমতে শুরু করলেও এখনও দুর্গত এলাকায় মানুষ চুলা জ্বালতে পারছে না। তাছাড়া সবার ঘরে চাল চুলো থাকলেও তা পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। জেলা প্রশাসক স্যারের নির্দেশনায় আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছি অন্তত সবার মুখে কোনো না কোনো খাবার তুলে দিতে।
বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) একদিনেই ১০ হাজার মানুষের জন্য খাবার রান্না করা হয়েছে জানিয়ে ইউএনও পূর্বিতা বলেন, পানি নেমে যাওয়ায় কিছু কিছু মানুষ বাড়ি ঘরে ফিরলেও রান্না করতে পারছেন না। যে কারণে খাবারের সংকট আছে। সুপেয় পানিরও সংকট আছে। আমরা সেই সংকট মোকাবিলায় কাজ করে যাচ্ছি।
বৃহস্পতিবার ১০ হাজার মানুষের জন্য খাবার রান্না করেছি। এখন সন্ধ্যা নেমেছে। খাবার বিতরণ এখনো চলছে। যোগ করেন পূর্বিতা।
জেলা প্রশাসন থেকে ২৫ মেট্রিক টন চাল আর চার লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়ার কথা জানিয়ে ইউএনও বলেন, এসব বরাদ্দের বেশিরভাগ ইউপি চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে বিতরণ করা হচ্ছে।
এছাড়াও দুর্যোগ মোকাবিলায় জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পাশাপাশি নৌবাহিনী, পুলিশ, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সাধ্যমত এগিয়ে এসেছে। আশা করছি, আমরা এ মানবিক সংকট মোকাবিলা করতে পারবো। বলেন পূর্বিতা।
এছাড়াও বন্যার পানি পুরোপুরি নেমে গেলে ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, মৎস্যঘের, ক্ষেত খামারসহ উপজেলার যাবতীয় ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান ইউএনও পূর্বিতা।
এলাকার মানুষের এমন দুর্যোগে ইউএনওর নিরলস প্রচেষ্টাকে ইতিবাচক দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখছেন সচেতন মহল।
পেকুয়া সদরের ফল ব্যবসায়ী তারেক বাংলানিউজকে বলেন, বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে ইউএনও নৌকায় করে আমাদের বাড়িতে গিয়ে খাবার পৌঁছে দিয়েছেন। একইভাবে খাবার নিয়ে তিনি অনেকের বাড়ি বাড়ি গেছেন। তার এমন আন্তরিকতা দেখে সত্যিই আমরা দুর্ভোগের কথা ভুলে গেছি।
পেকুয়া সদর ইউনিয়নের বাসিন্দা সমাজকর্মী জেবুন্নেছা (৪৮) বাংলানিউজকে বলেন, আমি যতটুকু জেনেছি, বন্যা কবলিত হওয়ার পর থেকে তিনি (ইউএনও) নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন। নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় করে এ বাড়ি, ওবাড়ি, এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে ছুটে গেছেন। যতটুকু পেরেছেন সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন দুর্গত মানুষের দিকে। এটি আমাদের জন্য আশা ব্যঞ্জক।
প্রসঙ্গত, কয়েকদিনের টানা ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার সদর ইউনিয়ন, শিলখালী, টৈটংসহ বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের অন্তত লক্ষাধিক মানুষ ভয়াবহ বন্যায় প্লাবিত হয়। এছাড়া সাপের ছোবল, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট এবং খালের পানিতে ডুবে তিন শিশুসহ এ পর্যন্ত এখানে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার পেকুয়ায় বন্যা দুর্গতদের পরিদর্শনে আসার কথা রয়েছে প্রতিমন্ত্রীর। তিনি পেকুয়ার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করবেন।
জেলা প্রশাসনের হিসেব মতে, জেলার নয় উপজেলার ৭১ ইউনিয়নের মধ্যে ৬০টি ইউনিয়ন বন্যায় প্লাবিত হয়। এরমধ্যে চকরিয়া ও পেকুয়ার রয়েছে ২৫টি ইউনিয়ন। চকরিয়ায় তিন লাখ ৯০ হাজার ৫০০ জন এবং পেকুয়ায় ৮৫ হাজার মানুষ বন্যায় চরম দুর্ভোগের শিকার হয়।
পানির স্রোতে জেলায় প্রায় ৫৯ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ পর্যন্ত জেলায় পাহাড় ধস, বন্যার পানিতে ভেসে, সাপের ছোবলে, বিদ্যুৎস্পৃষ্টসহ ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান জানিয়েছেন, এ পর্যন্ত দুর্গত এলাকায় ৫৮মেট্রিক টন চাল ও নগদ সাত লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করা হয়েছে ৩৭ হাজার ৫০০টি।
বাংলাদেশ সময়: ২১২৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০২৩
এসবি/আরআইএস