নাটোর: নাটোরে গোসলের ভিডিও দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে টানা দুই বছর এক নারীকে ধর্ষণের অভিযোগে উজ্জ্বল মৃধা (৩২) নামে এক যুবককে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।
উজ্জ্বল মৃধা নাটোর শহরের কানাইখালি এলাকার বিসমিল্লাহ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
ভুক্তভোগী নারী নলডাঙ্গা উপজেলার বাসিন্দা। তিনি ওই হাসপাতালের মাঠকর্মী হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) বিকেলে নাটোর সদর আমলি আদালতের বিচারক মো. রওশন আলমের আদালতে আত্মসমর্পণ করলে উজ্জ্বলকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত। এর আগে ভুক্তভোগী নারী গোসলের ভিডিও ধারণ করে ব্ল্যাকমেইলের মাধ্যমে টানা দুই বছর ধরে ধর্ষণের অভিযোগে নাটোর সদর থানায় মামলা করেন। ভুক্তভোগী নারীর অভিযোগ থেকে জানা যায়, চার বছর আগে অভিযুক্ত উজ্জ্বলের সঙ্গে তার পরিচয় হয়।
এক রোগীকে ওই ক্লিনিকে চিকিৎসা দিতে আনার সূত্র ধরে উজ্জ্বলের সঙ্গে তার যোগাযোগ হয়। একপর্যায়ে উজ্জ্বল ওই নারীকে ক্লিনিকের মাঠকর্মী হিসেবে কাজের প্রস্তাব দিলে তিনি রাজি হন। তখন থেকে হাসপাতালে চাকরির পাশাপাশি রোগী বেশি থাকলে বা কোনো রোগীর রাতে অপারেশন হলে ভুক্তভোগী নারী রাতে হাসপাতালে অবস্থান করতেন।
ভুক্তভোগী নারী তার অভিযোগে বলেছেন, ২০২১ সালের মাঝামাঝি রোগীর চাপের কারণে একদিন তিনি হাসপাতালে অবস্থান করেন।
ওইদিন বাথরুমে গোসলের সময় উজ্জ্বল গোপনে সেই ভিডিও ধারণ করেন। ভিডিওর কথা গোপন রেখে কথাবার্তার মাধ্যমে বন্ধুত্ব গড়ে তোলেন। একপর্যায়ে অবৈধ শারীরিক সম্পর্কের প্রস্তাব দেন উজ্জ্বল। রাজি না হওয়ায় গোপনে ধারণ করা গোসলের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেবার হুমকি দেন। ওই নারী ঘটনাটি পুলিশকে জানানোর উদ্যোগ নিলে উজ্জ্বল তাকে হাসপাতালের কাজে যোগ দিতে বলেন ও তার সামনে ফোন থেকে গোসলের ভিডিওটি ডিলিট করার আশ্বাস দেন। উজ্জ্বলকে বিশ্বাস করে ওই নারী বিকেলে হাসপাতালে কাজে যোগ দিতে গেলে হাসপাতালের ছয়তলায় উজ্জ্বলের শোবার ঘরে ডেকে নিয়ে যান ও রাতভর তাকে ধর্ষণ করেন। এ ধর্ষণের ভিডিও গোপন ক্যামেরায় ধারণ করেন উজ্জ্বল। এবার এ ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে টানা দুই বছর উজ্জ্বল তার শোবার ঘরে নিয়ে ওই নারীকে ধর্ষণ করেন। এ সময়ের মধ্যে ওই নারী গর্ভধারণ করলে উজ্জ্বল গর্ভপাত করাতে বাধ্য করেন। সর্বশেষ গত ২ জুন উজ্জ্বল আবার ওই নারীকে হাসপাতালে তার কক্ষে আটকে ধর্ষণ করেন। অবশেষে সইতে না পেরে ওইদিন তিনি নাটোর থানায় মামলা দায়ের করেন।
ভুক্তভোগী নারী বলেন, গোপন ছবি ও গোসলের ভিডিও ধারণের পর ব্ল্যাকমেইল করে উজ্জ্বল শহরের একাধিক নারীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করেছেন। তার এ কাজে বিসমিল্লাহ হাসপাতালের অন্য পার্টনাররা জড়িত। তাদের সহযোগিতায় তিনি আমাকে দুই বছর ধরে ধর্ষণ করেছে। তার মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ ও অন্য ডিভাইসে এসব ছবি ও ভিডিওর প্রমাণ পাওয়া যাবে। আমি এ ঘটনায় বিচার চাই।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাসিম আহমেদ বলেন, ধর্ষণের অভিযোগ ভুক্তভোগী নারী থানায় মামলা দায়ের করে। পুলিশ গুরুত্বের সঙ্গে মামলাটি নিয়েছে। বর্তমানে আদালতের নির্দেশে উজ্জ্বল কারাগারে রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৩৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১১, ২০২৩
এসআই