ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

কর্মজীবনে ছুটি কাটাননি প্রধান শিক্ষক, বিদায় নিলেন ঘোড়ার গাড়িতে

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২৪ ঘণ্টা, আগস্ট ১১, ২০২৩
কর্মজীবনে ছুটি কাটাননি প্রধান শিক্ষক, বিদায় নিলেন ঘোড়ার গাড়িতে

নওগাঁ: ব্যতিক্রম আয়োজনের মধ্য দিয়ে চাকরি জীবনের শেষ দিনে ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে বিদায় নিয়েছেন শিক্ষক দুলাল আহমদ। তিনি নওগাঁর বদলগাছী উপজেলায় ভরট্ট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।

বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) দুপুরে তার কর্মময় জীবনের শেষ দিন উপলক্ষে প্রতিষ্ঠানের মিলনায়তনে বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন।

সেখানে প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. আমিরুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন নওগাঁ সরকারি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. নাসিম আলম।

এছাড়া বালুভরা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আল এমরান হোসেন, সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার রেবেকা সুলতানা ও মিজানুর রহমান, নজিপুর সরকারি কলেজের প্রভাষক মাহমুদুল হাসান হিরো, বদলগাছী মহিলা কলেজের প্রভাষক নজরুল ইসলাম, তেঁতুলিয়া বিএমসি কলেজের অধ্যক্ষ সিদ্দিকুর রহমান, জাগোনিউজের সহকারী বার্তা সম্পাদক (কান্ট্রি এডিটর) আনোয়ার হোসেন সেখানে বক্তব্য রাখেন।

এ সময় স্থানীয় মিঠাপুর আদর্শ কলেজের প্রভাষক ফিরোজ হোসেন, ঢেকড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বজলুর রশীদ, সমাজসেবক মজিদুল ইসলাম, শিক্ষক বায়েজীদ হোসেন ও শিক্ষক নজিবর রহমান সহ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। পরে বিদায়ী শিক্ষককে বিভিন্ন উপহার দেন স্কুলের বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক ও এলাকাবাসী।

বদলগাছী মহিলা কলেজের প্রভাষক নজরুল ইসলাম বলেন, আমি দুলাল আহমদ স্যারের ছাত্র ছিলাম। স্যারকে কখনও ছুটি নিতে দেখেনি। অসুস্থ থাকলেও স্যার স্কুলে এসেছেন। স্যারের দেওয়া শিক্ষা নিয়ে আজ আমরা নানাভাবে প্রতিষ্ঠিত। স্যার আমাদের আদর্শ। একজন আদর্শ শিক্ষক আজ চাকরি থেকে বিদায় নিলেন। স্যার ভালো থাকুক সবসময়।

এ সময় কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন বিদায়ী শিক্ষক মো. দুলাল আহমদ। তিনি বলেন, ৩৬ বছর চাকরি করেছি। এ সময়ের মধ্যে আমার কোনো ধরনের ছুটির প্রয়োজন হয়নি। শিক্ষার্থীদের সবসময় পড়াশুনার প্রতি উদ্ধৃত করেছি। পরিশেষে কর্মময় জীবনে কোনো ধরনের ভুলত্রুটি করে থাকলে সবার কাছ ক্ষমা প্রার্থনা করছি। বাকি জীবন পরিবার-পরিজন নিয়ে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে অতিবাহিত করতে পারি সবার কাছে দোয়া চাই। আমার চাকরি জীবনের শেষ দিনে সুন্দর অনাড়ম্বরের মধ্য দিয়ে বিদায় হবে যা ছিল কল্পনাতীত। এটা আমার জীবনের অনেক বড় প্রাপ্তি। যা বাঁকি জীবনটুকু মনে রাখার মত। সবার জন্য অনেক দোয়া ও শুভকামনা।

উল্লেখ্য, শিক্ষক মো. দুলাল আহমদ নওগাঁ সদর উপজেলার কীত্তিপুর গ্রামের মৃত মোশাররফ হোসেন মণ্ডলের ছেলে। তিনি ১৯৮৭ সালে ৪ অক্টোবর চাকরিতে যোগদান করেছিলেন। দাম্পত্য জীবনে স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে আছে। তিনি ছিলেন ক্রীড়া সংগঠক ও সামাজিক ব্যক্তিত্ব। কর্মময় জীবনে অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রীকে শিক্ষা দিয়েছেন যারা বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ ব্যবসা ও রাজনীতিতে দেশ ও জাতির জন্য অবদান রেখে চলছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১২১৯ ঘণ্টা, আগস্ট ১১, ২০২৩
এফআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।