পাবনা: দেশের অন্যতম প্রাচীন জেলা শহরের মধ্যে পাবনা পৌরসভা অন্যতম। শত বছরের পুরাতন এই পৌরসভা অনেক আগেই প্রথম শ্রেণীর পৌরসভা হিসাবে ঘোষণা হয়েছে।
সম্প্রতি রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে ডেঙ্গুর সংক্রমণ বহুগুণে বেড়ে গেছে। দেশের বিভিন্ন সিটি এলাকাসহ গুরুত্বপূর্ণ পৌরসভাগুলো ডেঙ্গু প্রতিরোধে গ্রহণ করেছে নানা ধরনের পদক্ষেপ। কিন্তু পাবনা পৌরসভাতে লোক দেখানো ডেঙ্গু প্রতিরোধ কার্যক্রম ছাড়া প্রকৃত অর্থে ডেঙ্গু প্রতিরোধে নেই কোনো সঠিক পদক্ষেপ। পৌর এলাকার গুরুত্বপূর্ণ ওয়ার্ডগুলোতে জলাবদ্ধতাসহ ড্রেনগুলোতে বদ্ধ হয়ে রয়েছে বৃষ্টির পানি। বিশেষ করে পৌর এলাকার ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বেশ কিছু মহল্লার অবস্থা বেশ নাজুক।
দীর্ঘদিন ধরে এই ওয়ার্ডের ড্রেনগুলোতে জলাবদ্ধসহ ময়লা আবর্জনায় ছেয়ে গেছে চারিপাশ। একটু বৃষ্টিতেই ড্রেনের ময়লা পানি সড়কের ওপরে উঠে আসছে। ড্রেনগুলোতে মশা, মাছি বংশ বিস্তার করছে প্রতিনিয়ত। অসহায় সাধারণ পৌরবাসী, ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ মেয়রকে বলার পরেও নেই কোনো সঠিক পদক্ষেপ। মহল্লাগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে নেই কোনো ময়লা ফেলার নির্দিষ্ট পাত্র বা স্থান। তাইতো যেখানে সেখানে বাসাবাড়ির ময়লায় পরিবেশ নষ্টসহ রোগ-জীবাণু ছড়িয়ে পরছে সর্বত্র।
এদিকে ডেঙ্গু প্রতিরোধে পৌর এলাকাতে মাইকিং করে সচেতনতামূলক প্রচার কার্যক্রম চালালেও মশা, মাছি নিধনে নেই কোনো পদক্ষেপ। এই বর্ষাতে ডেঙ্গু প্রতিরোধে ড্রেনগুলোতে মশা নিধনের জন্য এখনো দেওয়া হয়নি কোনো জীবাণুনাশক। তবে পৌর এলাকার গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে মশা নিধন কার্যক্রম চালানো হচ্ছে বলে জানান পৌর কর্তৃপক্ষ। তবে ওয়ার্ডগুলোর সাধারণ মানুষ দীর্ঘ এক মাসের মধ্যে পৌরসভাকর্তৃক জীবণুনাশক কোনো স্প্রে কার্যক্রম তারা দেখতে পায়নি।
এদিকে পয়ঃনিষ্কাশন কার্যক্রম সঠিকভাবে না হওয়াতে পৌর এলাকাতে মশার উপদ্রব বহুগুণে বেড়ে গেছে। ময়লা আবর্জনা আর জলাবদ্ধার কারণে দুর্গন্ধের সঙ্গে বিভিন্ন রোগ ছড়িয়ে পড়ছে ওয়ার্ডগুলোতে।
তবে বাজেট সংকটের কারণে প্রতিনিয়ত মশা নিধন কার্যক্রম চালাতে পারছে না বলে জানালেন পৌর মেয়র। ১৫টি ওয়ার্ডের প্রতিটি ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের মশা নিধনের জন্য একটি করে হ্যান্ড স্প্রে মেশিন দেওয়া হয়েছে। তবে হাত মেশিন দিয়ে ওয়ার্ডগুলোর মশা নিধন স্প্রে কার্যক্রম করা সম্ভব না বলে জানান কাউন্সিলররা। আর যে মেডিসিন দেওয়া হয়েছে সেটি দিয়ে তিনদিনের বেশি স্প্রে কার্যক্রম চালানো সম্ভবনা বলে জানান কাউন্সিলররা। জীবাণুনাশক মেডেসিন স্বল্পতার কারণ বন্ধ রয়েছে মশা নিধন কার্যক্রম।
জেলাতে বর্তমানে সব মিলিয়ে ৪০ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৪ জন নতুন করে ডেঙ্গুতে আক্রাস্ত হয়েছেন। তবে সম্প্রতি শুধু ঢাকা থেকে আসা রোগীই না জেলার বিভিন্ন স্থান থেকেও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হচ্ছেন। পাবনা সদর জেনারেল হাসপাতালে বর্তমানে ৫ জন নারীসহ মোট ১৯ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছেন। গত এক মাসে ১০৯ জন রোগী সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ১২৩ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় সাতজন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন পাবনা সদর জেনারেল হাসপাতালে।
স্থানীয় ওয়ার্ড বাসিন্দারা অভিযোগ করে বলেন, এক মাসের মধ্যে পৌরসভা থেকে ডেঙ্গু প্রতিরোধে কোনো জীবাণুনাশক ছিটানো হয়নি। ড্রেনে নোংরা পানি বাসা বাড়ির ময়লা আবর্জনা যেখানে সেখানে ফেলে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। পৌর এলাকাতে নেই কোনো ময়লা ফেলার ডাস্টবিন। পৌর কর্তৃপক্ষ উদাসীন, নামেই প্রথম শ্রেণীর পৌরসভা কামে নেই।
৭ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর রাজিবুল হাসান রবিন ও আশলাফ প্রামাণিক বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে সবার আগে সচেতনতা বাড়াতে হবে। প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে হাতল স্প্রে মেশিন দিয়েছে মেয়র। এই মেশিন দিয়ে ওয়ার্ডগুলো কাভার করা সম্ভব না। আর যে মেডিসিন দিয়েছে সেটি দিয়ে তিনদিনের বেশি স্প্রে করা যায় না। আর জলাবদ্ধতা তো আমাদের দীর্ঘদিনের সমস্যা।
পাবনা পৌর মেয়র শরীফ উদ্দিন প্রধান বলেন, আমরা চেষ্টা করছি সবাইকে নিয়ে স্বল্প সামর্থ্যের মধ্যে ডেঙ্গু প্রতিরোধ করার। তবে পাবনাতে যে সব রোগী শনাক্ত হচ্ছে তার বেশিরভাগই ঢাকা ফেরত স্থানীয় রোগী খুবই কম। তবে আমাদের পৌরসভাতে বাজেট সংকট রয়েছে। স্বল্প বাজেট দিয়ে আমরা চেষ্টা করছি। শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে স্প্রে করা হচ্ছে। সবাই মিলে এগিয়ে এলে ডেঙ্গু প্রতিরোধ করা সম্ভব। শুধু পৌরসভার দিকে চেয়ে থাকলে এই সমস্যার সমাধান হবে না।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪২ ঘণ্টা, আগস্ট ১২, ২০২৩
আরএ