ঢাকা: আগামী ১৬ আগস্ট থেকে ডিম কেনাবেচায় পাকা রশিদ ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান। অন্যথায় কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
সোমবার (১৪ আগস্ট) ডিমের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান (ফার্ম ও করপোরেট), এজেন্ট-ডিলার ও ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সঙ্গে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় এই নির্দেশ দেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ডিজি। অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের সভাকক্ষে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।
সভাপতির বক্তব্যে ডিজি বলেন, ডিম উৎপাদক থেকে শুরু করে খুচরা বিক্রিতারা যদি পাকা রশিদ ব্যবহার করেন, তাহলে আমরা তদারকি করতে পারি কত টাকায় ডিম ক্রয়-বিক্রয় হচ্ছে। কিন্তু এই পাকা রশিদ ব্যবহার না করার কারণে দাম বাড়ার জন্য একে অন্যকে দোষারোপ করছে। এই বিশৃঙ্খলা রোধ করার বড় সমাধান হতে পারে পাকা রশিদ ব্যবহার।
আগামী ১৬ আগস্ট থেকে ডিম উৎপাদনকারী করপোরেট প্রতিষ্ঠান ও ফার্ম এবং পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের ডিম কেনাবেচার সময় পাকা রশিদ ব্যবহারের নির্দেশ দেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক। পাশাপাশি কেউ যদি ওই দিন থেকে পাকা রশিদ ব্যবহার না করে তাহলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ারও হুঁশিয়ারি দেন।
সফিকুজ্জামান বলেন, আমরা শুধু পাকা রশিদটা নিশ্চিত করতে চাই। আগামী ১৬ আগস্ট থেকে যেখানে পাকা রশিদ পাওয়া যাবে না, সেখানে আমরা কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেব। পাশাপাশি খুচরা পর্যায়ে সর্বোচ্চ ১২টায় ডিম বিক্রি হচ্ছে কি না, সেটি তদারকিতে ওই দিন থেকে আমরা মাঠে আরও জোরদারভাবে কাজ করব।
ডিম উৎপাদনকারী বড় বড় যে ৫-৬টি করপোরেট প্রতিষ্ঠান রয়েছে, সেগুলোকে আগামী ১৬ আগস্ট থেকে প্রতিদিন সকাল বেলা ডিম বিক্রির তথ্য ভোক্তা অধিদপ্তরকে দেওয়ার আহ্বান জানান অধিদপ্তরের মহাপরিচালক।
বাজারে কোনো পণ্যের দাম বাড়লে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে নিরবচ্ছিন্ন তদারকি কার্যক্রম পরিচালনা করা হয় জানিয়ে তিনি বলেন, কিন্তু জনবলের সীমাবদ্ধতায় আমরা সত্যিকার অর্থে ডিমের ক্ষেত্রে সেই ফোকাসটি দিতে পারিনি।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আরও বলেন, আমাদের আমিষের মূল চাহিদা পূরণ করছে ডিম এবং বয়লার মুরগি। কিন্তু এই খাতে প্রচুর অস্থিরতা বিরাজ করছে। হঠাৎ করে দাম বেড়ে যাচ্ছে, কমে যাচ্ছে। এজন্য ক্ষুদ্র খামারিদের ১৫ শতাংশের ফার্ম বন্ধ হয়ে গেছে। তাই এই খাতে শৃঙ্খলা আসা প্রয়োজন।
ডিম আমদানির সুযোগ রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এখন আমরা যদি বর্ডার খুলে দেই এবং ভারত থেকে ৬ রুপিতে ডিম আসে, তাহলে দেশে একটি পোল্ট্রিও টিকতে পারবে না, একটি করপোরেট গ্রুপও কম্পিটিশন করতে পারবে না। আমরা আপনাদের (ব্যবসায়ী) ততক্ষণ প্রোটেকশন দেব, যতক্ষণ আপনারা বাজার অস্থির করবেন না। দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে যদি ডিম প্রতি ৪ টাকা বেড়ে যায়, তাহলে তো প্রোটেকশন দেব না। কারণ সরকারকে ব্যবসায়ীদের প্রোটেকশন দেওয়ার পাশাপাশি ১৭ কোটি মানুষের কথাও ভাবতে হয়।
মতবিনিময় সভায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের সদস্য মো. হাফিজুর রহমান, কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) প্রোগ্রাম কর্ডিনেটর আহমেদ ইকরামুল্লাহ, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র অতিরিক্ত মহাসচিব শাহ মোহাম্মদ আব্দুল খালেক, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. মো. শহীদুল আলম, তেঁজগাও ডিম ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি আমান উল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক মো. হারুনুর রশিদ, পিপলস পোল্ট্রি ফার্ম অ্যান্ড হ্যাচারির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুবুল রহমান, বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ও ঢাকা জেলা কার্যালয়ের অফিস প্রধান আব্দুল জব্বার মন্ডল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:
জনবলের অভাবে ডিমের বাজার তদারকি করতে পারিনি: ভোক্তার ডিজি
বাংলাদেশ সময়: ১৭০০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০২৩
এসসি/এমজেএফ