বাগেরহাট: প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের আধাঁর বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন। ১০ হাজার বর্গ কিলোমিটার জুড়ে গড়ে ওঠা এই বনের ৬ হাজার ৫১৭ বর্গ কিলোমিটার রয়েছে বাংলাদেশ অংশে।
দেশে ব্যবহৃত গোলপাতার সিংহভাগ আসে সুন্দরবন থেকে। শুধু সুন্দরবন নয়, জেলার বাগেরহাট সদর, মোরেলগঞ্জ, রামপাল, শরণখোল ও চিতলমারীর বেশকিছু এলাকায় গোলপাতা জন্মে।
জানা যায়, পাম জাতীয় উদ্ভিদ গোলপাতার বৈজ্ঞানিক নাম Nypa fruticans। লবণাক্ত এলাকায় নদী ও খালের চরে অল্প পানিতে এ গাছের জন্ম হয়। এটি গাছ হলেও, গোলপাতা নামের বেশি পরিচিত। ঘরের ছাউনিসহ নানা কাজে এই গাছের পাতার ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে। এই গাছের পাতাগুলো নারকেলের পাতার মত। পাতা ৩ থেকে ৯ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। পাতার পাশাপাশি ফলও হয়ে থাকে গোলপাতা গাছে। যা গোলফল নামে পরিচিত।
এক কাঁদিতে ৫০ থেকে ২০০টি পর্যন্ত ফল হয়। ৩ থেকে ৪ ইঞ্চি লম্বা ফলগুলো দেখতে কিছুটা ছোট নারকেলের মত। পাকা ফলের রং শুকনো নারকেলের মত। ফলের ওপরের শক্ত আবরণের নিচে রয়েছে তালশ্বাসের মত শ্বাস। যা খেতে কিছুটা তালশ্বাসের মত। গোলপাতার ফলের এই শ্বাসে প্রচুর ভিটামিন ও মিনারেল রয়েছে। গোলফল পানিশূন্যতা পূরণ, পেটের কৃমি দমন, কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি, এবং চর্মরোগ নিরাময়ে সাহায্য করে বলে ধারণা করা হয়। এই ফলের বাণিজ্যিক বিপণন এখনও শুরু হয়নি।
তবে গত চার বছর ধরে বাগেরহাটের বিশ্ব ঐতিহ্য ষাটগম্বুজ মসজিদের সামনে ভ্যানের উপর গোলফল বিক্রি করেন দুই পা হারানো আব্দুর রহমান শেখ নামের এক ব্যক্তি।
সোমবার (১৪ আগস্ট) ষাটগম্বুজের সামনে খুলনা-বাগেরহাট মহাসড়কের একটি ভ্যানকে ঘিরে জটলা দেখা যায়। যে যার মত আব্দুর রহমানের কাছ থেকে গোলফল কিনে খাচ্ছেন।
আব্দুর রহমান, ভৈরব, দড়াটানা, চিত্রা, পুটিমারি নদীসহ বাগেরহাট সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে গোলপাতা সংগ্রহ করেন। অনেক সময় কিছু গৃহস্থ বাড়ি থেকে, নামমাত্র মূল্যে গোলফল সংগ্রহ করেন।
প্রতিপিস ১০ টাকা করে দিনে ২ থেকে ৪ হাজার টাকার গোলফল বিক্রি করেন তিনি। এই ফলেই তার সংসার চলে। তার এই ফলের বেশিরভাগ ক্রেতা ষাটগম্বুজ মসজিদে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরা।
দুই বছরের শিশুকে গোলফল খাওয়াতে নিয়ে এসেছেনে ষাটগম্বুজের পার্শ্ববর্তী সুন্দরঘোনা গ্রামের শেখ শহিদুল ইসলাম বলেন, ছোট বেলায় আমরা গাছ থেকে পেরে গোলফল খেতাম। কিন্তু এখনকার বাচ্চারা গোলফল সম্পর্কে জানেই না। ছেলে ও আমি দুইজনই খেলাম। অনেক ভাল লাগলো।
ষাটগম্বুজ ঘুরতে আসা মাদরাসা শিক্ষার্থী মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, সুন্দরবনের পাশেই মোংলার চিলা এলাকায় বাড়ি হলেও, ছোট বেলা থেকেই খুলনায় থেকে মাদরাসায় পড়ি। গোলফল আগে দেখেছি কিন্তু আজ প্রথম খেলাম, খুব ভাল লেগেছে।
খুলনা শহরের মদিনাতুল উলুম কোরিয়া মাদরাসার শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম বলেন, এই প্রথম গোলফল দেখলাম এবং খেলাম।
ঢাকা থেকে ষাটগম্বুজ ঘুরতে আসা শাহ আলম বলেন, ১০ টাকায় একটি গোলফল খেলাম। অনেক ভাল লাগল।
গোলফল বিক্রেতা আব্দুর রহমান শেখ বলেন, একসময় ভ্যান চালিয়ে সংসার চালাতাম। দুর্ঘটনায় পা হারানোর পরে সংসার চলতে খুব কষ্ট হতো। পরে গোলফল বিক্রি শুরু করি। বিভিন্ন নদ-নদীর পাশ থেকে গোলফল সংগ্রহ করি। অনেক সময় কিছু গৃহস্থবাড়ি থেকে কম দামে ফল সংগ্রহ করে বিক্রি করি। স্ত্রী ও ছোট ছেলে আমাকে সহযোগিতা করে। প্রতিদিন ২ থেকে ৩ হাজার টাকার ফল বিক্রি করি। শুক্রবার ও শনিবার একটু বেশি বিক্রি হয়। ওই টাকায় সংসারসহ বাচ্চাদের পড়াশুনার ব্যয় চলে।
আব্দুর রহমান শেখ আরও বলেন, ইচ্ছে করলে ভিক্ষা করে খেতে পারতাম। কিন্তু মানুষের কাছে হাত না পেতে, ফল বিক্রি করে খাই। অনেক সময়, কিছু ক্রেতা আছে যারা দামের পরে অতিরিক্ত বখশিশও দিয়ে যায়। সব মিলিয়ে গোলফল বিক্রি করে ভাল আছি।
বাংলাদেশ সময়: ১০৫১ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০২৩
এসএম