মাদারীপুর: চীন থেকে পড়ালেখা শেষ করে গেল মাসে বাংলাদেশে আসেন মাদারীপুরের প্রকৌশলী মেহেদী হাসান (২৩)। বাবা-মায়ের সঙ্গে পাঁচদিন ছিলেন নিজ বাড়িতে।
নানা জায়গায় খোঁজ করে যখন তার পরিবার ব্যর্থ তখনই জানা যায়, মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় জঙ্গি আস্তানা থেকে গ্রেপ্তার হওয়াদের মধ্যে তাদের ছেলে মেহেদীও ছিলেন।
এই খবর দেখে হতবাক মেহেদীর পরিবার ও এলাকাবাসী। এলাকার কেউই বিশ্বাস করতে পারছেন না মেধাবী ছাত্রটি জঙ্গি দলের সদস্য!
জানা গেছে, মেহেদীর বাবা রেজাউল করিম মাদারীপুর সদর উপজেলার পূর্ব চিড়াইপাড়া এলাকার বাসিন্দা। তিনি জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয়ের গাড়ি চালক। চাকরির সুবিধার্থে রেজাউল করিম তার স্ত্রী দিনারা মমতাজকে সঙ্গে নিয়ে থাকেন শহরের ইটেরপুল এলাকায়।
এ দম্পতির দুই ছেলের মধ্যে বড় ছেলে মেহেদী হাসান। ছোট ছেলে ঢাকার বাঙলা কলেজে স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।
মেহেদী হাসান ২০১৫ সালে খিলগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ নিয়ে পাস করেন। পরে ২০১৭ সালে ঢাকা ইমপিরিয়াল কলেজ থেকে জিপিএ- ৪ দশমিক ৯২ নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হন। এরপর স্কলারশিপ নিয়ে চীনের ইয়াংজু বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সেখান থেকে চলতি বছরই মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে ভালো ফল নিয়ে স্নাতক পাস করেন।
পরিবারসূত্রে জানা গেছে, পড়ালেখা শেষে গত ৬ জুলাই চীন থেকে বাংলাদেশে আসেন মেহেদী। বিমানবন্দর থেকে নেমে তার বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে খিলগাঁও যান। সেখান থেকে মেহেদীর কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে ঘুরতে চলে যান পাবনা।
পরে গত ১১ জুলাই মেহেদী তার নিজ এলাকা মাদারীপুরে তার মা-বাবার কাছে আসেন। পাঁচদিন মেহেদী তার মা-বাবার সঙ্গে কাটালেও হঠাৎ ১৭ জুলাই বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন তিনি। বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ছেলের সন্ধান না পেয়ে ১০ আগস্ট মাদারীপুর সদর মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন রেজাউল করিম।
মেহেদীর মা দিনারা মমতাজ বলেন, ‘আমার ছেলেটা চীন থেকে দেশে আসছে, বিয়া করামু। মেয়েও দেখেছি। কত স্বপ্ন আর আশা ছিল বুকে। সব শ্যাস হইয়া গেলে। ও যে কাজটা করেছে, তার জন্যে কারো কাছে মুখ দেখানোর জায়গা নাই। আমার ছেলেডা আমাদের অপরাধী বানাইয়া দিছে। ’
আক্ষেপ আর হতাশা নিয়ে বাবা রেজাউল করিম বলেন, ‘অল্প টাকার বেতনে চাকরি করি। নিজের রক্ত পানি কইয়া বড় ছেলেডারে মানুষ করতে চেষ্টা করেছি। বড় ছেলেডা পড়ালেখা ভালো দেইখা, রাতদিন পরিশ্রম করে আয় করতাম। চীনে পাঠাইছি, পড়ালেখা শেষ কইরা দেশে আইসা ভালো চাকরি পাবে, আমাগো কষ্ট দূর হইবে। এমন কত আশা ছিল ওরে নিয়া। সব শ্যাষ কইরা দিল। ’
তিনি আরও বলেন, ‘ছেলের সাফল্যে প্রতিটি বাবা গর্ব করে। আমার ছেলে যখন ভালো রেজাল্ট করতো তখন সবাই ওর প্রশংসা করতো। আমিও তখন আমার ছেলের জন্য গর্ববোধ করতাম। আনন্দে চোখ পানি ফেলতাম। আর এখন আমার ছেলেকে আমি মৃত মনে করি। যে ছেলে দেশের জন্য ক্ষতিকর, খারাপ পথে চলে যায় তাকে আর ফিরাতে চাই না। ’
বড় ছেলে মেহেদী হাসানকে আর ফিরে পেতে চান না রেজাউল-মমতাজ। ছেলের এমন কর্মকাণ্ডে হতাশা আর কষ্ট ঘিরে ধরেছে বাবা-মাকে।
উল্লেখ্য, গত ১২ আগস্ট সকালে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার পাহাড়ি এলাকায় একটি বাড়িতে জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালায় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিসিটিভি) ইউনিট। অভিযানে ৬ নারীসহ ১০ জনকে আটক করা হয়। তাদের সঙ্গে তিন শিশুও রয়েছে। এই ১৩ জনের মধ্যে প্রকৌশলী মেহেদী হাসান একজন।
তারা ‘ইমাম মাহমুদের কাফেলা’ নামে নতুন জঙ্গি সংগঠনের সদস্য বলে জানিয়েছে সিটিটিসি। এ ঘটনার পর গত সোমবার একই এলাকা থেকে জঙ্গি সন্দেহে আরও ১৭ জনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেন স্থানীয় জনতা।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০২৩
এসএএইচ