লক্ষ্মীপুর: নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই লক্ষ্মীপুরের বিভিন্ন সড়ক ও মহাসড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে সিএনজি চালিত অটোরিকশা।
এসব গাড়ির চালককদের অধিকাংশেরই নেই লাইসেন্স।
জেলা বিআরটিএ অফিস সূত্রে জানা গেছে, লক্ষ্মীপুরের বিভিন্ন সড়ক এবং মহাসড়কে প্রায় ১৫ হাজার অটোরিকশা চলাচল করছে। এসব অটোরিকশার বিপরীতে লাইসেন্স আছে মাত্র দুই থেকে আড়াইশ চালকের।
বিআরটিএ বলছে, চালকদের ঝামেলাবিহীন লাইসেন্স করিয়ে দিচ্ছেন তারা।
এদিকে পুলিশ বলছে, সড়কে শৃঙ্খলা আনতে লাইসেন্সবিহীন চালকদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লক্ষ্মীপুরে গত সাত মাসে অটোরিকশা দুর্ঘটনা ঘটেছে প্রায় অর্ধশতাধিক। এতে নিহত হয়েছেন শিশুসহ কমপক্ষে সাতজন, আহত হয়েছেন শতাধিক।
গত কয়েকদিনে সড়ক এবং মহাসড়কে থাকা অন্তত অর্ধশত অটোরিকশার চালকদের সঙ্গে কথা হয় বাংলানিউজের। কেন লাইসেন্স করাচ্ছেন না এবং লাইসেন্স ছাড়া কীভাবে সড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন, এ বিষয়ে জানতে চাইলে তারা জানান, ড্রাইভিং লাইসেন্স করাতে হলে নানা বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। এছাড়া লাইসেন্স করাতে হলে সুনির্দিষ্ট যে শিক্ষাগত যোগ্যতা লাগে, তাও নেই তাদের। তাই লাইসেন্স না করেই মাসোহারা দিয়ে নির্বিঘ্নে তারা গাড়ি চালাচ্ছেন।
আবার কোনো কোনো চালকের অভিযোগ, লাইসেন্স থাকলেও তাদের চাঁদা দিয়ে চলতে হয়।
লক্ষ্মীপুর জেলার বাসিন্দারা বলেন, অদক্ষ চালকরা গাড়ি চালানোর কারণে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে মহাসড়ক। এতে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। ফলে হতাহতের ঘটনাও ঘটছে। এসব চালকদের কারণে সড়ক, মহাসড়ক যেন মৃত্যুপুরী হয়ে উঠেছে। ঝুঁকি জেনেও প্রয়োজনের তাগিদে তাদের উঠতে হচ্ছে অটোরিকশায়।
সড়কে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে অদক্ষ চালকরা বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো বন্ধে প্রশাসনের নজরদারির অভাব রয়েছে বলে মনে করছেন তারা। তাই সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে নিয়মিত অভিযানের দাবি জানিয়েছেন সচেতন যাত্রীরা।
এদিকে বেশ কয়েকজন অটোরিকশাচালক অভিযোগ করেন, ড্রাইভিং লাইসেন্স করাতে বিআরটিএ অফিসে গেলে নানা জটিলতায় পড়তে হয়। অনেক ক্ষেত্রে মোটা অংকের টাকার মাধ্যমে দালালের কাছে যেতে হয়। এছাড়া লাইসেন্স থাকলেও সড়কে থাকা পুলিশি ঝামেলার শিকার হতে হয় তাদের। তাই লাইসেন্স ছাড়াই মাসিক চুক্তির মাধ্যমে তারা গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছেন। মাসিক চুক্তি এবং স্ট্যান্ডে থাকা দালালের মাধ্যমে এককালীন ভর্তি হয়ে যান তারা। ভর্তি না হলে কিংবা মাসিক চুক্তি না করলে পুলিশি মামলার শিকার হতে হয় তাদের।
এছাড়া কাগজপত্র ঠিক থাকলেও বিভিন্ন অজুহাতে সড়ক মহাসড়কে চাঁদা দিয়ে চলতে হচ্ছে তাদের।
আবার কয়েকজন সিএনজি অটোরিকশা চালক বলেন, ড্রাইভিং লাইসেন্স করাতে হলে সর্বনিম্ন অষ্টম শ্রেণি পাসের সার্টিফিকেটের প্রয়োজন হয়। শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকায় তারা লাইসেন্স করাতে পারেন না। এ ক্ষেত্রে লাইসেন্স ছাড়াই গাড়ি চালাচ্ছেন তারা৷
লাইসেন্স করতে এসে চালকদের বিড়ম্বনার মুখে পড়তে হয়- এমন অভিযোগ অস্বীকার করে লক্ষ্মীপুর বিআরটিএর সহকারী পরিচালক মো. এনায়েত হোসেন মন্টু বলেন, সরকারি ফি ছাড়া বাড়তি টাকা নেওয়ার সুযোগ নেই। লাইসেন্সের জন্য চালকরা অনলাইনে আবেদন করেন। লাইসেন্স ফি বাবদ অর্থ অনলাইনের মাধ্যমে জমা দিতে হয়। সব প্রক্রিয়া অনলাইনে হয়ে থাকে। ডাকযোগে লাইসেন্স তাদের বাড়িতে পৌঁছে যায়। তাই চালকদের বাড়তি টাকা দিতে হয় না।
সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার বিষয়ে তিনি বলেন, মাসে চারটি মোবাইল কোর্ট পরিচালনার বিধান রয়েছে। কিন্তু জনবল সংকটের কারণে অদক্ষ চালকদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না।
এদিকে চালকদের কাছ থেকে কোনো মাসোহারা নেওয়া হয় না দাবি করে লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জ হাইওয়ে থানার পরিদর্শক মো. মফিজ উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে লাইসেন্স বিহীন চালকদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ।
চালকদের লাইসেন্সের জন্য উদ্বুদ্ধ করতে সচেতনতামূলক সভা এবং বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে বলেও জানান হাইওয়ে পুলিশের ইনচার্জ।
বাংলাদেশ সময়: ১৩২৮ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০২৩
এসআই