পাবনা: সাবেক ভায়রা ভাই (স্ত্রীর বোনের স্বামী) হাসিনুর রহমানকে (৫৩) বশীভূত করতে তাবিজ পুঁততে গভীর রাতে তার বাড়িতে যান রিমন সরকার। হাসিনুর ওই সময় রিমনকে দেখে ফেললে তাকে ডেকে কৌশলে ঘরের মধ্যে আটকে রাখেন।
এরপর এ হত্যাকাণ্ডকে চুরির ঘটনা হিসেবে সাজানোর জন্য তিনি ঘরে সিঁধ কেটে সুড়ঙ্গ তৈরি করেন রিমন। পরে হত্যায় ব্যবহৃত শাবল, দা’ ও নিজের রক্তাক্ত পোশাক টয়লেটের ট্যাংকের মধ্যে ফেলে দিয়ে নিহত হাসিনুরের মোবাইল ফোন নিয়ে পালিয়ে যান তিনি।
এরপর রিমন বিষয়টি জানাতে তার স্ত্রীর বড় বোন সাজেদাকে (হাসিনুরের সাবেক স্ত্রী) ফোন করলে মোবাইলের চার্জ ফুরিয়ে বন্ধ হয়ে যায়। এতে ভোর ৫টা ৪০ মিনিটে রিমন নিজের মোবাইল ফোনের সিম খুলে হাসিনুরের ফোন সেটে নিয়ে এক মিনিট সাজেদার সঙ্গে কথা বলেন।
পুলিশ সেই কললিস্টের তালিকা ও কথোপকথনের সূত্র ধরে রোববার (২০ আগস্ট) ভোরে রিমনকে আটক করলে হত্যার বিষয়টি স্বীকার করেন তিনি। এরপর বেরিয়ে আসে হত্যার রহস্য।
পাবনার ভাঙ্গুড়া পৌরশহরের হাড়োপাড়া মহল্লার বাসিন্দা নিহত হাসিনুর ছিলেন একজন দর্জি।
গত ১৬ আগস্ট বেলা সাড়ে ৩টার দিকে হাসিনুরের বাড়ি থেকে তার ক্ষতবিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
হত্যাকারী রিমন একই উপজেলার পারভাঙ্গুড়া ইউনিয়নের রাঙ্গালিয়া গ্রামের আতিকুল সরকারের ছেলে। এ ঘটনায় গত ১৭ আগস্ট রাতে নিহতের আগের স্ত্রীর ছেলে রেজাউল করিম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
পুলিশ জানায়, প্রায় ১০ বছর আগে হাসিনুর সাজেদা খাতুন নামে এক নারীকে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। এরপর থেকে স্ত্রী সাজেদা খাতুন ও এক সন্তানকে নিয়ে চলছিল হাসিনুরের সংসার। তবে হাসিনুর রহমান দুই সপ্তাহ আগে সাজেদা খাতুনকে তালাক দেন। কিন্তু সাজেদা আবার হাসিনুরের পরিবারে ফিরতে চান। এরপর সাজেদার পরিবারের লোকজন হাসিনুরের সঙ্গে গত কয়েকদিন চেষ্টা করেও যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হন। তাই সাজেদার ছোট বোনের স্বামী রিমন সরকার (২৩) সাজেদার সঙ্গে আলোচনা করে হাসিনুরকে বশ করার জন্য মঙ্গলবার গভীর রাতে (১৫ আগস্ট) হাসিনুরের বাড়ির সামনের মাটিতে একটি তাবিজ পোঁতেন।
এসময় হাসিনুর দেখে ফেলে রিমনের সঙ্গে স্বাভাবিক আচরণ করে তাকে ডেকে ঘরের মধ্যে নিয়ে দরজা আটকে দেন। একপর্যায়ে রিমনের তাবিজ পোঁতার বিষয়টি পুলিশ ও স্থানীয় কাউন্সিলরকে জানানোর জন্য ফোন দিতে উদ্যত হন হাসিনুর। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে রিমন ফোন কেড়ে নেন এবং দুজনের মধ্যে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। ধস্তাধস্তির সময় হাসিনুর রহমান মাটিতে পড়ে গেলে রিমন দরজার পাশে থাকা শাবল দিয়ে হাসিনুরের মাথায় আঘাত করেন। হাসিনুর জ্ঞান হারিয়ে ফেললে রিমন মাথার পেছনে দা দিয়ে কয়েকটি কোপ দেন। এতেই মৃত্যু হয় হাসিনুরের।
এদিকে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে রিমন নিজের বাড়িতে গত কয়েকদিন ধরে স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করছিলেন। তবে পুলিশ তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ও বিভিন্ন আলামত দেখে রিমনসহ তিনজনকে গত কয়েকদিন জিজ্ঞাসাবাদ করে। একপর্যায়ে রোববার ভোরে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে একমাত্র আসামি রিমনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পরে রিমন হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি স্বীকার করলে তাকে নিয়ে পুলিশ হাসিনুরের বাড়ির গেট থেকে মাটি খুঁড়ে তাবিজ ও টয়লেটের ট্যাংক থেকে শাবল, দা’ এবং পোশাক উদ্ধার করে। সোমবার রিমনকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হবে।
ভাঙ্গুড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাশেদুল ইসলাম বলেন, রিমন নিজের সিমকার্ড হাসিনুরের ফোনে লাগিয়ে তার স্ত্রীর বড় বোনকে ফোন দেন। ফোনে তিনি বলেন, তাবিজ মাটিতে পোঁতার কাজ হয়ে গেছে, চিন্তার কিছু নেই। নিজেকে নিরাপদ রাখতে রিমন তাকে আরও জানান, হাসিনুরের বাড়ির সামনে মুখোশ পরা তিনজনকে ঘোরাফেরা করতে দেখেছেন তিনি।
ওসি বলেন, মূলত রিমনকে যাতে সন্দেহ না করা হয়, সেজন্য তিনি তিনজন মুখোশ পরা মানুষের গল্পটি বলেছেন সাজেদার কাছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০৯ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০২৩
এসআই