ঢাকা: রাজধানীতে প্রতি ঘণ্টায় যানবাহনের গতি ৬ থেকে ৭ কিলোমিটার। যানজটে গতিহীন রাজধানীবাসীকে গতিময় করতে শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) উদ্বোধন করা হচ্ছে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে।
রাজধানীর কলাবাগানের বাসিন্দা শাহিন মাহফুজের কর্মস্থল বনানী। বাসা থেকে অফিস, অফিস শেষে আবার বাসা- প্রতিদিন তার রাস্তাতেই কেটে যায় তিন ঘণ্টা। এ ভোগান্তি কেটে যেত যদি এক্সপ্রেসওয়েতে মোটরসাইকেল চলাচলের অনুমতি থাকত। কিন্তু অনুমতি না দেওয়ায় হতাশ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এ কর্মজীবী।
তিনি বলেন, প্রতিদিন দেড় ঘণ্টা লাগে অফিসে যেতে, আসতে আরও দেড় ঘণ্টা। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে সেই ভোগান্তিটা দূর করবে বলে আশা করলেও হতাশ হলাম সিদ্ধান্ত দেখে। অফিস আর রাস্তার যানজট ঠেলে পরিবারকে সময় দেওয়ার জন্য একটু অবসর নেই।
মোটরসাইকেলচালক সজীব হোসেন রাজধানীতে ভাড়াচালিত মোটরবাইক চালান। সায়েন্স ল্যাব এলাকায় কথা হয় এ চালকের সঙ্গে। তিনি বলেন, রাজধানীতে জীবিকা নির্বাহের জন্য মোটরসাইকেল কিনেছি। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে করে এখন যদি আমাদের মোটরসাইকেল নিয়ে চলতে না দেয় তাহলে এর সুফল সবাই পাচ্ছি না।
যানজট ছাড়া যদি চলতে পারতেন তাদের আয় আরও বাড়ত বলে মন্তব্য করেন এ মোটরবাইকচালক।
তবে এক্সপ্রেসওয়েতে মোটরসাইকেল চালাতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত সঠিক বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের সহকারী অধ্যাপক সাইফুন নেওয়াজ।
তিনি বলেন, মোটরসাইকেল ও থ্রি-হুইলার যানবাহনের অনুমতি না দেওয়াটা ইতিবাচকভাবেই নেওয়া উচিত। কারণ এ ধরনের যানবাহনগুলো সড়কে টার্ন করে বেশি। ফলে দুর্ঘটনা ঘটে। সার্বিকভাবে এখন শুধু গতিসীমাটা নজরদারিতে রাখতে পারলেই এর সুফল পাবে নগরবাসী।
যা চলবে না এক্সপ্রেসওয়েতে
এক্সপ্রেসওয়ের ওপর দিয়ে থ্রি-হুইলার, মোটরসাইকেল, বাইসাইকেল ও পথচারী চলাচল করতে পারবে না। কোথাও থেমে ছবি তোলা যাবে না। এক্সপ্রেসওয়েতে কেবল মাত্র চলতে পারবে চার চাকা কিংবা এর অধিক চাকার বাস, ট্রাক ও প্রাইভেটকার।
প্রসঙ্গত, ২০১১ সালের ১৯ জানুয়ারি এ প্রকল্পের প্রথম চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়। এ প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০১১ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। প্রকল্পের বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ফার্স্ট ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে কোম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৩ তারিখে সংশোধিত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। প্রকল্পটি থাইল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ইটালিয়ান থাই ডেভেলপমেন্ট পাবলিক কোম্পানি লিমিটেড ৫১ শতাংশ এবং চায়নাভিত্তিক প্রতিষ্ঠান শোনডং ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক গ্র্যান্ড টেকনিক্যাল কো-অপারেশন গ্রুপ ৩৪ শতাংশ ও সিনোহাইড্রো করপোরেশন লিমিটেড ১৫ শতাংশ যৌথ উদ্যোগে নির্মিত হচ্ছে। প্রকল্পের মূল দৈর্ঘ্য ১৯ দশমিক ৭৬ কিলোমিটার। র্যাম্পসহ মোট দৈর্ঘ্য ৪৬ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার।
প্রকল্পের মোট ব্যয় ৮ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা, যার ২৭ শতাংশ বাংলাদেশ সরকার ভিজিএফ হিসেবে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানকে দেবে। তবে ভূমি অধিগ্রহণ, নকশা বদল, অর্থ সংস্থানের জটিলতায় ৪ বার সময় বাড়ানোর ফলে ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৮৫৮ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০২, ২০২৩
এনবি/আরবি