নেত্রকোণা: কৌশলে বাবার সম্পত্তি নিজেদের নামে লিখে নিয়েছেন ৩ ছেলে। ছেলের বউ দিয়েছে টাকা চুরির অপবাদ।
এই কষ্ট সহ্য করতে না পেরে ছাড়তে হয়েছে সেই বাড়ি। নদীর পাড়ে শাড়ি আর টিন দিয়ে তৈরি ছোট্ট একটি ঘরে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা।
শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) বিকেলে সরেজমিনে বৃদ্ধ সুরেশ চন্দ্র দাস (৭০) ও বেলি রাণী দাসের (৬০) কষ্টময় জীবনযাপনের এ দৃশ্য চোখে পড়ে।
তারা নেত্রকোণা জেলার দুর্গাপুর পৌরসভার ১নম্বর ওয়ার্ডের সাধুপাড়া এলাকার বাসিন্দা।
সম্পত্তি লিখে নিয়ে সুরেশ-বেলি রাণীকে তাড়িয়ে দিয়েছেন তাদের ছেলেরা এমন অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত তিন ছেলের নাম - শ্যামল, সাগর ও সজল।
বৃদ্ধ মা বেলি রানি দাস বলেন, চার ছেলে নিয়েই ছিল আমাদের সংসার। আমার স্বামী সহজ-সরল। সেই সরলতার সুযোগ নিয়ে কৌশলে শেষ সম্বলের ২০ শতাংশ জায়গার ১৮ শতাংশ তিন ছেলে শ্যামল, সাগর ও সজল তাদের নামে লিখে নিয়েছে। সবার বড় ছেলে পরিমল বাবা মতোই সরল হওয়ায় তাকে দেয়নি কিছুই।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি আরও বলেন, সম্পত্তি লিখে নেওয়ার পর যখন ছেলেদের সঙ্গেই তাদের ঘরে থাকতে হয়েছে। সে-সময় প্রায়ই না খেয়েও থেকেছি। পেটের তাগিদে রাস্তায় রাস্তায় ভিক্ষাও করেছি। এরপর একদিন তাদের ঘরের টাকা চুরির অপবাদ দিয়ে ছেলের বউ ঘর থেকে লাথি মেরে বের করে দেওয়ার কথা বলে। এইসব কষ্ট সহ্য করতে না পেরেই বাড়ি ছেড়ে এখন বাড়ির সামনে নদীর পড়ে শাড়ি কাপড় আর টিনের তৈরি ছোট্ট একটি ঘরে বসবাস করছি।
কীভাবে সম্পত্তি লিখে নিল ছেলেরা, প্রশ্নে ভুক্তভোগী সুরেশ চন্দ্র দাস জানান, তিন ছেলে তার টিপসই চাইলে তিনি তা দিয়ে দেন। এরপর তিন ছেলে মিলে যা শিখিয়েছে তাই বলেছেন। এভাবেই যে সম্পত্তি তারা নিজেদের নামে লিখে নিয়েছে তিনি বুঝতেই পারেননি।
এ বিষয়ে বড় ছেলে পরিমল চন্দ্র দাস বলেন, তিন ভাই বাবার সব জায়গা তাদের নামে লিখে নেওয়ার প্রায় এক বছর পর আমি জানতে পারি। পরবর্তীতে দরবারে তিন ভাই মিলে নেওয়া জায়গা ফেরত দেওয়ার সিদ্ধান্ত হলেও তারা ফেরত দেয়নি।
অভিযুক্ত ছেলেদের মধ্যে দ্বিতীয় ছেলে শ্যামল চন্দ্র দাসের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করেন। বলেন,বাবা-মায়ের সব অভিযোগই মিথ্যা। বাবা নিজের ইচ্ছায় আমাদের নামে জায়গা লিখে দিয়েছেন। আর বাড়ি ছাড়া আমরা করিনি। তারাই সেখানে গিয়ে থাকছেন। আমি প্রতিমাসে টাকাও দিচ্ছি।
তারই স্ত্রীর দেওয়া টাকা চুরির অপবাদের বিষয়ে জানতে চাইলে কথাটি এড়িয়ে যান তিনি।
এ প্রসঙ্গে পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. নুরুল আকরাম খান বলেন, তিন ছেলে মিলে তাদের বাবার সম্পত্তি নিজেদের নামে লিখে নেওয়ার ঘটনাটি সত্যি। আমি তিন ছেলেকে অনেকবার বলেছি। কিন্তু তারা কিছুই শুনেনি। ছোট দুই ছেলে খুবই খারাপ। বড় দুইজন বাবা-মাকে দেখাশোনার কিছুটা চেষ্টা করে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ রাজীব-উল-আহসান বলেন, এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
দুর্গাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শিবিরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, এই ঘটনার বিষয়ে এখন পর্যন্ত আমার জানা নেই। কেউ কোনো অভিযোগও দায়ের করেনি। তবে আমি খোঁজে নিচ্ছি। অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩১২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৩, ২০২৩
এসএএইচ