ঢাকা: নারীর প্রতি সমাজের প্রচলিত পিতৃতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং ক্রমবর্ধমান সহিংসতা বৃদ্ধি এবং সহিংসতার ঘটনায় বিচারের দীর্ঘসূত্রিতা নারীর জীবনে নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ সমমর্যাদা ও সম-অধিকার নিশ্চিত করতে পারছে না বলে মন্তব্য করেছেন বিশিষ্টজনেরা।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের আয়োজনে অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রণয়ন নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ সনদ বাস্তবায়ন বিষয়ক আলোচনা সভায় তারা এ মন্তব্য করেন।
রোববার আন্তর্জাতিক সিডও দিবস পালন উপলক্ষে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের উদ্যোগে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় সংগঠনের আনোয়ারা বেগম মুনিরা খান মিলনায়তনে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম। সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের আন্তর্জাতিক উপপরিষদ সম্পাদক দেবাহুতি চক্রবর্তী।
উক্ত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতিসংঘ সিডও কমিটির প্রাক্তন সদস্য ফেরদৌস আরা বেগম ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহনাজ হুদা। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ওয়াই ডব্লিউ সিএ অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক হেলেন মনীষা সরকার;মহিলা ঐক্য পরিষদের সহ-সভাপতি গীতা বিশ্বাস; বাংলাদেশ আদিবাসী ইউনিয়ন এর সহ-সভাপতি রাখী ম্রং এবং ভোরের কাগজের সিনিয়র রিপোর্টার সেবিকা দেবনাথ।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনে বলা হয়, সিডও সনদের দুটি ধারার ওপর সংরক্ষণ বহাল থাকায়, নারীর অধিকার রক্ষা ও বাস্তবায়নে এই সংরক্ষণ বিরাট এক প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের নারীর অবস্থা ও অবস্থানের দিকে দৃষ্টিপাত করলে লক্ষ্য করা যায় সংবিধানে নারীর অধিকার ও মর্যাদা রক্ষায় ইতিবাচক দিক এবং সরকার কর্তৃক বিভিন্ন আইন সংস্কারসহ নানা উন্নয়ন পদক্ষেপ গ্রহণের পরও ব্যক্তিজীবনের অধিকারহীনতার ক্ষেত্র, নারীর প্রতি সমাজের প্রচলিত পিতৃতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং ক্রমবর্ধমান সহিংসতা বৃদ্ধি এবং সহিংসতার ঘটনায় বিচারের দীর্ঘসূত্রিতা নারীর জীবনে নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ সমমর্যাদা ও সম-অধিকার নিশ্চিত করতে পারছে না। পাশাপাশি নারীর ব্যক্তিজীবনে অধিকারের অসম ক্ষেত্রগুলো হচ্ছে বিবাহ, বিবাহবিচ্ছেদ, সন্তানের অভিভাবকত্ব ও সম্পত্তির উত্তরাধিকারে রাষ্ট্রীয় নীতি অনুসারে সমান সুযোগের অভাব। নারীর ব্যক্তিজীবনের অধিকারহীনতার ক্ষেত্রগুলো একটির সঙ্গে আরেকটি সম্পৃক্ত যা নারীর অবস্থানে প্রান্তিকতা সৃষ্টি করছে। সাম্প্রতিককালে বিবাহবিচ্ছেদ, সম্পত্তির উত্তরাধিকার নিয়ে বিভিন্ন জনগোষ্ঠী সোচ্চার হয়ে উঠেছে, এই ক্ষেত্রে বিরোধিতাও করছে। বিষয়টিকে সিডও সনদ বাংলাদেশের সংবিধানের পরিপ্রেক্ষিতে কীভাবে বৈষম্যপূর্ণ পারিবারিক আইন বাস্তবায়ন করা যায় সে বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য রাষ্ট্রকে দায়িত্ব নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জাতিসংঘ সিডও কমিটির প্রাক্তন সদস্য ফেরদৌস আরা বেগম বলেন, ১৯৮১ সালের এই দিনে সিডও প্রথম যাত্রা শুরু করে। এই সুদীর্ঘ সময়ে সারা পৃথিবীতে নারীদের ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে। ১৮১ টি দেশ এই সনদে স্বাক্ষর করেছে। এ পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকার নারীবান্ধব প্রচুর আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করলেও সিডও সনদের পূর্ণ বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়নি। এতে সিডও সনদকে আইনে পরিণত করা যাচ্ছে না, কোর্টে উত্থাপন করা সম্ভব হচ্ছে না। সমতার আন্দোলন কার্যকর হচ্ছে না। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে হলে সিডও সনদের পূর্ণ অনুমোদন ও অভিন্ন পারিবারিক প্রণয়ন অত্যাবশ্যক।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহনাজ হুদা বলেন, আইন প্রণয়নে রাজনীতির একটা বড় প্রভাব আছে।
তিনি বিবাহ, বিবাহ বিচ্ছেদে, ভরণপোষণে বিভিন্ন ধর্মীয় আইনের নিয়ম কানুনে উল্লেখ করে বলেন, ল কমিশন এখনো চেষ্টা করছে অভিন্ন আইন প্রণয়নের। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ যখন অভিন্ন পারিবারিক আইন নিয়ে কাজ শুরু করে তখন মনে হয়েছিল সমাজ এটা আস্তে আস্তে গ্রহণ করবে, কিন্তু নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণই বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে, এ অবস্থায় অভিন্ন পারিবারিক আইনের জন্য অ্যাডভোকেসি ক্রমাগতভাবে চলতেই থাকবে।
সভায় সংগঠনের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগর কমিটির নেত্রী, সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির সদস্য সংগঠনের মধ্যে বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ; বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি, উইমেন ফর উইমেন, ঢাকা ওয়াইডব্লিউ সিএ, কর্মজীবী নারী, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকসহ বেশ কয়েকটি সংগঠনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের আন্তর্জাতিক উপপরিষদ সদস্য লুনা নূর।
বাংলাদেশ সময়: ১০৪৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৪, ২০২৩
এইচএমএস/এসআইএস