ঢাকা, বুধবার, ১০ পৌষ ১৪৩১, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

নতুন ভূমি অপরাধ আইনে প্রতারণা, জালিয়াতির মামলা শেষ হবে ৬ মাসে

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৩
নতুন ভূমি অপরাধ আইনে প্রতারণা, জালিয়াতির মামলা শেষ হবে ৬ মাসে

ঢাকা: ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেছেন, ভূমি প্রতারণা, জালিয়াতি অবৈধ দখলের মামলা ১৮০ দিন বা ৬ মাসের মধ্যে বিচার শেষ করার বিধান রেখে ‘ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন ২০২৩’ চূড়ান্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি ভূমি প্রতারণা, জালিয়াতি, অবৈধ দখলের মতো ১২ টি অপরাধ চিহ্নিত করে সর্বোচ্চ শাস্তি সাত বছরের বিধান রাখা হয়েছে আইনটিতে।

এ আইন কার্যকর হলে ভূমি সংক্রান্ত অপরাধ কমে যাবে। ফলে জমিজমা সংক্রান্ত মামলাও অনেক কম হবে বলে জানান তিনি।

বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রণালয় সভাকক্ষে ‘ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন ২০২৩’ এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয় নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আইনের বিস্তারিত তুলে ধরেন তিনি।

ভূমিমন্ত্রী সাইফুদ্দিন চৌধুরী বলেন, ভূমির জবরদখল, ক্ষতি, জাল কাগজপত্র তৈরি করে জালিয়াতি বা প্রতারণা বন্ধ করাই এ আইনের প্রধান উদ্দেশ্য। পাশাপাশি দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলার দীর্ঘসূত্রিতা হ্রাস করে জনগণ ভোগান্তি দূর করা এবং ভূমি সংক্রান্ত অপরাধ প্রতিরোধ ও দ্রুত প্রতিকারের বিষয় রয়েছে নতুন আইনে।  

তিনি বলেন, আইনটি ‘ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন ২০২৩’ নামে পরিচিত হবে। এতে আইনটিতে মোট ২৭ টি ধারা রাখা হয়েছে। সেখানে ভূমি বিষয়ক মোট ৮ ধরনের অপরাধ চিহ্নিত করা হয়েছে। পাশাপাশি আরো ৪ ধরনের সম্পূরক অপরাধ বলা হয়েছে। এসব অপরাধের জন্য কিছু জামিনযোগ্য এবং কিছু অজামিনযোগ্য রাখা হয়েছে। শাস্তির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ শাস্তি ৭ বছরের কারাদণ্ডর বিধান রাখা হয়েছে। ভূমি সংক্রান্ত কিছু অপরাধের দ্রুত প্রতিকারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে এ আইনে। অপরাধ সংঘটনে সহায়তা বা প্ররোচনার জন্যও দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। সেখানে রাজস্ব প্রশাসনের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী যদি ভূমি অপরাধ সংক্রান্ত কোনো কাজে সহায়তা করেন তবে তার জন্যও তিনি অপরাধ সংঘটনকারীর সমপরিমাণ দণ্ডে দণ্ডিত হবেন বলে উল্লেখ রয়েছে।


তিনি বলেন, কোনো অপরাধ পুনঃ সংঘটন করলে দ্বিগুণ পরিমাণ দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। কোনো কোম্পানি কর্তৃক অপরাধ সংঘটন করলে তার মালিক, পরিচালক, ম্যানেজার, সচিব বা জড়িত অন্যান্য কর্মকর্তারা দায়ী হবেন। যদি না তারা প্রমাণ করতে পারেন যে, তাদের অজ্ঞাতসারে এ অপরাধ সংঘটন হয়েছে বা উহা রোধ করার জন্য তিনি যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন। বিধি প্রণয়ন করে এ মাসের মধ্যে এ ধরনের অভিযোগ নিষ্পত্তির কথা বলা হয়েছে। ভূমির তথ্য সম্বলিত সমন্বিত ডাটাবেজ তৈরির বিধানও রাখা হয়েছে আইনটিতে।  

তিনি জানান, ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন ২০২৩ এ মোট বারো ধরনের অপরাধ চিহ্নিত করা হয়েছে। সেখানে ভূমি বিষয়ক আট ধরনের অপরাধের মধ্যে রয়েছে ভূমি প্রতারণা, ভূমি জালিয়াতি, অবৈধ দখল, ক্রেতা বরাবর বিক্রিত ভূমির দখল হস্তান্তর না করা, সীমানা বা ভূমির ক্ষতিসাধন, সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান বা জনসাধারণের ব্যবহার্য ভূমির অবৈধ দখল, প্রবেশ বা কোনো কাঠামো নির্মাণ বা ক্ষতিসাধন, সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের স্বার্থযুক্ত বা জনসাধারণের ব্যবহার্য ভূমি অবৈধ ভরাট, শ্রেণি পরিবর্তন এবং মাটির উপরি স্তর কর্তন ও ভরাট। আরো ৪ ধরণের সম্পূরক অপরাধ রয়েছে আইনে।  সেখানে রয়েছে আদেশ অমান্য,অপরাধ সংঘটনে সহায়তা বা প্ররোচনা, অপরাধ পুনঃ সংগঠন, কোম্পানি কর্তৃক অপরাধ সংঘটন ইত্যাদি।

আইনে শাস্তি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ভূমি প্রতারণা সংক্রান্ত অপরাধ এবং ভূমি জালিয়াতি সংক্রান্ত অপরাধে অনধিক ৭ (সাত) বৎসর কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। অন্যান্য অপরাধে অনধিক ২(দুই) বৎসর কারাদণ্ড একই অপরাধ পুনঃ সংগঠন করলে দণ্ড দ্বিগুণ হবে। এছাড়া ভূমি প্রতারণা সংক্রান্ত অপরাধ এবং ভূমি জালিয়াতি সংক্রান্ত অপরাধ অজামিনযোগ্য রাখা হয়েছে আইনে। অন্যান্য অপরাধ জামিনযোগ্য এবং আপসযোগ্য রাখা হয়েছে।

আরো বলা হয়েছে, ভূমি প্রতারণা সংক্রান্ত অপরাধ, ভূমি জালিয়াতি সংক্রান্ত অপরাধ প্রথম শ্রেণির জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে বিচার ১৮০ দিনের মধ্যে শেষ করতে হবে। ফৌজদারি কার্যবিধির বিধান প্রযোজ্য। আরো বলা হয়, ভূমি প্রতারণা সংক্রান্ত অপরাধ, ভূমি জালিয়াতি সংক্রান্ত অপরাধ, অবৈধ দখলচ্যুত ব্যক্তির দখল পুনরুদ্ধার সংক্রান্ত আদেশ এবং অপরাধ পুনঃ সংগঠনের বিচার ব্যতিত অন্যান্য অপরাধ তফসিলভুক্ত হওয়া সাপেক্ষে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে বিচার করা যাবে। আইনটিতে আরো বলা হয়, এই আইনের কোনো বিধানের অস্পষ্টতার কারণে তা কার্যকর করার ক্ষেত্রে কোনো অসুবিধা দেখা দিলে সরকার, আইনের অন্যান্য বিধানের সাথে সামঞ্জস্য রেখে উক্ত অসুবিধা দূর করার আদেশ দিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে।

উল্লেখ্য, দেশে এই মুহূর্তে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৪০ লাখের মতো। আর এসব মামলা বড় অংশই জমিজমা সংক্রান্ত। যা দীর্ঘ সময় ধরে চলে আসছে। এ প্রসঙ্গে ভূমি প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, পুরনো মামলায় আমরা হাত দিতে পারবো না। ওটা ওটার মতো করে চলবে। তবে নতুন আইন কার্যকর হলে ভবিষ্যতে ভূমি সংক্রান্ত মামলার সংখ্যা অনেক কমে আসবে।

বাংলাদেশ সময় : ১৭১৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৩,২০২৩
জিসিজি/এমএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।