ঢাকা, সোমবার, ১৯ কার্তিক ১৪৩১, ০৪ নভেম্বর ২০২৪, ০২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

টিকিট ছাড়াই প্লেনে ওঠা জুনায়েদ বাড়ি ফিরে শিকলবন্দি

একরামুল কবীর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২৩
টিকিট ছাড়াই প্লেনে ওঠা জুনায়েদ বাড়ি ফিরে শিকলবন্দি

গোপালগঞ্জ: টিকিট, ভিসা, পাসপোর্ট ছাড়া প্লেনে উঠে পড়া শিশু জুনায়েদ মোল্লা (১১) বাড়ি ফিরেই শিকলে বাঁধা পড়েছে।  

তার পায়ে শিকল লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এর আগেও কাউকে কোনো কিছু না বলে বাড়ি থেকে চলে যাওয়ায় ঘরে তালাবদ্ধ করে রাখা হতো জুনায়েদকে।  

চারদিন আগে দাদি আসমা বেগমকে মাদরাসায় যাওয়ার ওয়াদা করে জুনায়েদ মোল্লা তালাবদ্ধ ঘর থেকে বের হয়েই ছুট দেয়। প্রথমে ইজিবাইকে করে মুকসুদপুর বাসস্ট্যান্ড। তারপর ঢাকার বাসে উঠে সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ডে নামে জুনায়েদ। সেখান থেকে বাসে করে এয়ারপোর্ট যায় সে।  

জুনায়েদ মোল্লা জানায়, এয়ারপোর্ট যাওয়ার পর ওপরে উঠতে গেলে তাকে নিরাপত্তা কর্মীরা বাধা দেন। পাসপো্র্ট ছাড়া ওপরে ওঠা যাবে না বলে জানান। পরে অন্য পাশ দিয়ে ঘুরে সিঁড়ি দিয়ে ওপরে ওঠে জুনায়েদ। গত সোমবার রাতে দোতলায় উঠে এক নম্বর গেট দিয়ে ঢোকার পর একজনকে পাসপোর্ট নিতে আবার দিতে দেখে সে। তখন অনেক যাত্রী একসঙ্গে ঢুকছিল। সেই সুযোগে চেকিং পার হয়ে ঢাকা থেকে কুয়েতগামী কুয়েত এয়ারওয়েজের রাত ৩টা ১০ মিনিটের ফ্লাইটে (কেইউ-২৮৪) উঠে পড়ে শিশুটি। প্লেনের সিটে এক ঘণ্টার মতো বসার পর ওই সিটের যাত্রী আসার পর তাকে সিট থেকে তুলে দেওয়া হয়। তখন প্লেনের আর কোনো সিট ফাঁকা ছিল না। এসময় কেবিনক্রুদের নজরে আসে বিষয়টি। তারা তখন দেখেন, টিকিট, ভিসা, পাসপোর্ট, বোর্ডিং পাস ছাড়াই শিশুটি প্লেনে উঠে পড়েছে। তখন তাকে প্লেন থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়। পরে তাকে বিমানবন্দর থানা হেফাজতে রাখা হয়।  

জুনায়েদ মোল্লা গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের পারইহাটি গ্রামের স্থানীয় একটি মসজিদের ইমাম ও সবজি ব্যবসায়ী ইমরান মোল্লার ছেলে।
 
জুনায়েদ মোল্লা ছোট চাচা ইউসুফ মোল্লা বলেন, এয়ারপোর্ট থানা থেকে তাকে মোবাইলে ফোন দিয়ে জুনায়েদ সম্পর্কে খোঁজ খবর নেওয়ার পর ঘটনা সম্পর্কে জানানো হয়। তখন তার মা অথবা বাবাকে এসে জুনায়েদকে নিয়ে যেতে বলা হয়। মঙ্গলবার  (১২ সেপ্টেম্বর) রাত ৩টার সময় জুনায়েদকে তার কাছে হস্তান্তর করা হয়। বুধবার বাড়ি আনার পর আবার পালানোর চেষ্টা করে জুনায়েদ। পরে ওর খালার বাড়ি থেকে ওকে ধরে আনা হয়।
 
বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিজুল হক মিয়া জানান, শিশুটি থানা হেফাজতে ছিল। তার বাড়ি গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলায়। তার অভিভাবককে খবর দেওয়ার পর তিনি এসে শিশুটিকে নিয়ে যান।
 
চাচা ইউসুফ মোল্লা আরও জানান, তার ভাতিজা জুনায়েদ মোল্লা খুবই দুরন্ত স্বভাবের। তাকে হাফেজিয়া মাদরাসায় ভর্তি করা হয়েছিল। সেখান থেকে সে বার বার পালিয়ে আসে বলে তাকে বাড়ির পাশে আলিয়া মাদরাসায় ভর্তি করা হয়েছে। বর্তমানে জুনায়েদ পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। তারপরও সে বাড়ি থেকে মাঝে মধ্যে হারিয়ে যায়, আবার একাই ফিরে আসে। এর আগে সে পালিয়ে ঢাকা, মোংলা, রাজবাড়ীসহ বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছে।  

জুনায়েদের বাবা ইমরান মোল্লা বলেন, ১৮ মাস বয়সে অভাব-অনাটনের কারণে জুনায়েদের মা ওকে ফেলে গিয়ে অন্যত্র বিয়ে করে। পরে আমিও আবার বিয়ে করি। জুনায়েদ ছাড়াও আমার আরও এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। ওর সৎ মা অন্য ছেলে-মেয়ের মতো করে ওকে ভালোবাসে। কিন্তু ছেলেটি সুযোগ পেলেই পালিয়ে যায়। তাই বাড়ির পাশে আলিয়া মাদরাসায় ভর্তি করেছি। এ ঘটনার পর মনে হচ্ছে ওর মানসিক কোনো সমস্যা হয়েছে। শিগগিরই ওকে ভালো চিকিৎসকের কাছে নেওয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে ওর পায়ে শিকল বেঁধে রেখেছি। চিকিৎসা শেষে ওর পায়ের শিকল খুলে দেওয়া হবে। আর তাকে তালাবদ্ধ অবস্থায়ও রাখা হবে। পালিয়ে গেলে ঝামেলায় পড়তে হয়, তাই এমন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।  

বাংলাদেশ সময়: ২০০৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২৩
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।