ঢাকা, মঙ্গলবার, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

সরকারের কাছে ১৫ দাবি এনআরবি সিআইপির

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২৩
সরকারের কাছে ১৫ দাবি এনআরবি সিআইপির ছবি: রাজীন চৌধুরী

ঢাকা: সরকারের কাছে ১৫টি দাবি জানিয়েছে প্রবাসীদের শীর্ষ সংগঠন এনআরবি সিআইপি অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনটি মনে করছে সরকার যদি প্রবাসীদের যৌক্তিক দাবিগুলো বাস্তবায়ন করেন, তাহলে প্রবাসীদের মাঝে সরকারের ভাবমূর্তি অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে এবং বাংলাদেশের রেমিট্যান্স প্রবাহ অনেকাংশে বাড়বে।

শনিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে দাবিগুলো তুলে ধরেন তারা।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সিআইপি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাহতাবুর রহমান দাবিগুলো উত্থাপন করেন। এগুলো হলো—

১. একজন অসহায় প্রবাসী জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে টাকা রোজগার করে দেশের রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখে। সে রেমিট্যান্স যোদ্ধা যখন চিকিৎসার অভাবে বিদেশে মৃত্যুবরণ করেন তাকে দেশে পাঠানোর জন্য প্রবাসীদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে চাঁদা সংগ্রহ করে সেই অসহায় প্রবাসীর মরদেহ দেশে পাঠাতে হয়, যা খুবই লজ্জাজনক। তাই সরকারের প্রতি আমাদের বিনীত অনুরোধ থাকবে, সে অসহায় প্রবাসীর মরদেহ যেন সম্পূর্ণ সরকারি খরচে দেশে পাঠানো হয়।

২. যেসব প্রবাসী বিদেশের মাটিতে তাদের জীবন যৌবন সব কিছু বিসর্জন দিয়ে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে জীবনের শেষ বয়সে বাংলাদেশে ফিরে যান, ওই সময় তার আর চাকরি করার সক্ষমতা থাকে না। সেসব প্রবাসী যারা ২০ থেকে ৩০ বছর পরে দেশে ফেরত যাবে তাদের জন্য প্রবাসী ভাতা চালু করতে হবে। সরকার এরই মধ্যে সর্বজনীন পেনশন বীমা চালু করেছেন। তার মধ্যে নীতিমালায় কিছু পরিবর্তন দরকার আছে। বিশেষ করে সেখানে স্পষ্ট করা হয়নি। পেনশন বীমা চালু হওয়ার পর যদি কোন কারণে ওই প্রবাসী সাত-আট বছর পরে দেশে চলে আসে, তাহলে সে ক্ষেত্রে সরকারের করণীয় কি থাকবে। বলা হয়েছে প্রিন্সিপাল এমাউন্টটা ফেরত দেওয়া হবে। আমরা মনে করি সে প্রবাসী বীমা কন্টিনিউ করার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠালে সরকারের পক্ষ থেকে যেই ২ দশমিক ৫ শতাংশ ইন্সেন্টিভ দেওয়া হচ্ছে, তার একটি অংশ প্রবাসীদের জন্য জমা রাখা যেতে পারে।

৩. প্রবাসীরা দেশে তাদের নিশ্চিত ইনভেস্টমেন্ট মনে করে বাংলাদেশ ইউএস ডলার বন্ড, ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড, এবং ওয়েজ আর্নার্স বন্ডে বিনিয়োগ করে থাকেন। গত দুই বছর ধরে বন্ডে বিনিয়োগ সীমাবদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে। মেয়াদ শেষে পুনঃবিনিয়োগ করার সুযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কিছুদিন আগে ইউএস ডলার বন্ডের সুদের হার দেওয়া হয়েছে মাত্র ৩ শতাংশ, যা দেখে প্রবাসীরা হতাশ। বিশ্বে অনেক উন্নত দেশে এখন ডলারের পরিবর্তে ৬ শতাংশ মুনাফা দেওয়া হচ্ছে। এভাবে নিম্ন সুদে বন্ডে কোনো প্রবাসী বিনিয়োগ করতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। প্রবাসীরা তাদের বিনিয়োগ নিজ-নিজ দেশে ফেরত নিয়ে যাচ্ছে। ফলে বাংলাদেশে ডলার সংকট দেখা যাচ্ছে। অন্যদিকে ওয়েজ আর্নার্স বন্ডের ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত কোনো ডিক্লারেশন আসেনি। তাই আমরা মনে করি অতিসত্বর সরকারের রিজার্ভ আরও বৃদ্ধি করার লক্ষে কোনো ধরনের সীমারেখা না রেখে ওয়েজ আর্নার্স বন্ড বিক্রির জন্য সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। ডলার সংকট নিয়ে গুজব বন্ধ করতে হবে। তাতে করে দেশ এবং প্রবাসী দু'পক্ষই উপকৃত হবে।

৪. প্রবাসীরা বিদেশে থেকে বাংলাদেশ ঘরবাড়ি নির্মাণ করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। তাই প্রবাসীদের জন্য উপজেলা ভিত্তিক প্রবাসী পল্লি বরাদ্দ দেওয়া হলে পরিবেশগত সুন্দর আবাসন গড়ে উঠবে।
সরকারি প্লট এবং ফ্ল্যাট ক্রয় করার ক্ষেত্রে প্রবাসীদের অগ্রাধিকার দিতে হবে এবং স্বল্প সুদে প্রবাসীদের জন্য ঋণ বরাদ্দ দিতে হবে।

৫. বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রবাসীরা সুনামের সঙ্গে বড় মাপের শিল্প-বাণিজ্য পরিচালনা করে যাচ্ছেন। অনেক অভিজ্ঞ ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। প্রবাসীদের শীর্ষ সংগঠন এনআরবি সিআইপি অ্যাসোসিয়েশন বিভিন্ন দেশে গ্লোবাল বিজনেস সামিট আয়োজন করে। সেসব স্বনামধন্য ব্যবসায়ীদের দেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বারবার অনুরোধ করে যাচ্ছেন। তারই ধারাবাহিকতায় অনেক ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশ বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। তাদের প্রস্তাব হচ্ছে, যদি সরকার নিশ্চয়তার মাধ্যমে প্রবাসীদের জন্য আলাদা ইকোনমিক জোন তৈরি করতে পারে, তাহলে অনেক ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করবেন। তাতে করে বাংলাদেশে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।

৬. প্রবাসীরা দেশ-বিদেশে তাদের কর্মস্থলে যাতায়াতের জন্য বিমান ভাড়া সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে। যেসব প্রবাসী শ্রমিক কাজের জন্য বিদেশে যাচ্ছেন তাদের ক্ষেত্রে ভ্রমণ কর তুলে নিতে হবে। উল্লেখ্য, ওইসব প্রবাসী ভ্রমণের জন্য বিদেশে যাচ্ছেন না তারা কাজের জন্য যাচ্ছেন। সরকারের নেওয়া প্রবাসীদের ব্যাপারে যেকোনো সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে নীতি নির্ধারণী কমিটিতে প্রবাসীদের পক্ষ থেকে এনআরবি সিআইপি অ্যাসোসিয়েশনকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

৭. বাংলাদেশ স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিকেল কলেজে ভর্তির জন্য প্রবাসীর সন্তানদের আলাদা কোটা রাখতে হবে। প্রবাসীদের বিদেশে বসে দূতাবাসের মাধ্যমে ভোটার আইডি কার্ড করার সুযোগ করে দিতে হবে। এরই মধ্যে কিছু দেশে ভোটার আইডি কার্ড চালু করা হলেও তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। সব দেশে প্রবাসীদের ভোটার আইডি কার্ড করার সুযোগ করে দিতে হবে।

৮. প্রবাসীরা বিদেশে যাওয়ার জন্য পাসপোর্ট করার প্রক্রিয়া আরও সহজ করতে হবে। পাসপোর্ট করতে গিয়ে পুলিশ ভেরিফিকেশনের নামে হয়রানি বন্ধ করতে হবে। যেসব প্রবাসীর সন্তানরা বিদেশে জন্মগ্রহণ করে সেই ক্ষেত্রে জন্ম নিবন্ধনের নামে পুলিশ ভেরিফিকেশন তুলে নিতে হবে। প্রবাসীদের ছেলেমেয়েরা বিদেশের মাটিতে পড়ালেখার ক্ষেত্রে সরকারি খরচে স্কুল কলেজ সংখ্যা আরও বৃদ্ধি করতে হবে।

৯. প্রবাসী অসুস্থ শ্রমিকদের দেশে প্রেরণ করার ক্ষেত্রে আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করতে হবে। বাংলাদেশ সরকারের আর্থিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে ইউনিয়ন পর্যায়ে তালিকা তৈরি করে নিম্নআয়ের প্রবাসী শ্রমিকদের পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতার আওতায় আনতে হবে।

১০. বাংলাদেশে বিমানবন্দরগুলোতে প্রবাসী হয়রানি বন্ধ করতে হবে।  সরকারের সব মন্ত্রণালয়ে প্রবাসীদের সার্ভিস দেওয়ার জন্য প্রবাসী সহায়তা-ডেস্ক চালু করতে হবে।

১১. বিদেশের মাটিতে যেসব প্রবাসী উদ্যোক্তা বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নিয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছেন, তাদের বাংলাদেশে সামাজিক মর্যাদায় সম্মানিত করে উৎসাহিত করতে হবে।

১২. বিশ্বের অনেক দেশে বাংলাদেশে অতিরিক্ত রেমিট্যান্স প্রেরণ করার ক্ষেত্রে কিছু বিধি নিষেধ থাকে। সে ক্ষেত্রে পরিবারের সদস্যদের মাধ্যমে দেশে টাকা প্রেরণ করলে, তা পরিবারের কর্তা ব্যক্তির নামে অন্তর্ভুক্ত করে সিআইপি আবেদন করার সুযোগ করে দিতে হবে।

১৩. প্রবাসীরা আয়কর দিতে গিয়ে অনেক হয়রানির শিকার হচ্ছে, সেক্ষেত্রে প্রবাসী করদাতাদের হয়রানি বন্ধ করে সহজ প্রক্রিয়ায় কর প্রদান করার ব্যবস্থা করতে হবে।

১৪. বিশ্বের সব দেশে দূতাবাসগুলোকে আরও গতিশীল করে হুন্ডি প্রতিরোধ করার জন্য দূতাবাস প্রবাসীদের পরামর্শ গ্রহণ করে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।

১৫. প্রবাসীদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে কথা বলার জন্য মহান জাতীয় সংসদে প্রবাসীদের প্রতিনিধি নিয়োগ দিতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি থাতেইয়ামা কবির, সহ-সভাপতি মো. মনির হোসেন, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইয়াছিন চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক এম আর খান শাহিন, কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদ আশরাফুর রহমান ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক শ্যামল দত্ত উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২৩
এমকে/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।