যশোর: যশোরের যুবককে বিদেশে পাঠানোর নামে প্রতারণা ও গুমের দায়ে ঝিকরগাছার কুমড়ি গ্রামের আদম ব্যবসায়ী আনিসুর রহমানের ১৩ বছরের কারাদণ্ড ও জরিমানার আদেশ দিয়েছেন আদালত।
মামলার ২৯ বছর পর বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) এ রায় ঘোষণা করেন যশোরের অতিরিক্ত দায়রা জজ ১ম আদালতের বিচারক জয়ন্তী রানি দাস এ আদেশ দেন।
সাজাপ্রাপ্ত আনিসুর রহমান ঝিকরগাছার কুমড়ি গ্রামের জামাত আলী মোড়লের ছেলে।
আদালত সূত্র জানায়, ১৯৯৩ সালে একই গ্রামের রওসানারা বেগমের ছেলে নুরুল হককে কুয়েতে নিয়ে ভালো বেতনে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ৭৫ হাজার টাকা দাবি করে আনিসুর। তার কথায় বিশ্বাস করে রওসানারা স্বামীর রেখে যাওয়া সম্পত্তি ও তার স্থাবর অস্থাবর সব সম্পত্তি বিক্রি করে ৫৪ হাজার টাকা আনিসুরের হাতে তুলে দেন। বাকি ২১ হাজার টাকা কুয়েতে পাঠানোর পর দেওয়া হবে শর্তে ১৯৯৩ সালের ২৫ জুন নুরুলকে কুয়েতের উদ্দেশ্যে ঢাকাতে নিয়ে যায় আনিসুর। এরপর থেকে পরিবার তার আর খোঁজ পায়নি।
পরবর্তীতে তারা বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পারেন আনিসুর রহমান নুরুলকে কুয়েতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে প্রতারণা করে পাকিস্তানে নিয়ে গেছে। পরে তাকে গুম করে ফেলেছে। একথা জানতে পেরে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে মা রওসানারা। এছাড়া অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে তিনি ভিক্ষা করা শুরু করেন।
পরবর্তীতে আনিসুর দেশে ফিরে আসলে নুরুলের সন্ধান চায় তার পরিবার। কিন্তু আনিসুর নানা টালবাহানা শুরু করে।
পরে অসহায় রওসানারা তার ছেলেকে ফিরে পেতে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন। জেলা প্রশাসকের নির্দেশে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ বিষয়ে তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পান।
এরমধ্যে রওসানারা মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন। অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় তৎকালীন যশোর জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের ভারপ্রাপ্ত সহকারী পরিচালক অলিয়ার রহমান বাদী হয়ে ১৯৯৪ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি আদম ব্যবসায়ী আনিসুর রহমানকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট জমা দেন। পরে বৃহস্পতিবার মামলার রায় ঘোষণার দিনে আসামির উপস্থিতিতে এ রায় ঘোষণা করেন।
রায়ে বিচারক ৪২০ ধারায় আনিসুরের তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা এবং ৩৬৪ ধারায় ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ছয় মাসের সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দিয়ে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০২৩
ইউজি/এসএম