বরিশাল: আগামী ১২ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ২২ দিনের ইলিশ শিকারের নিষেধাজ্ঞা এক মাস পেছানোর দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে বরিশাল আড়ৎদার অ্যাসোসিয়েশন।
সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বরিশাল নগরের পোর্টরোডস্থ বরিশাল জেলা মৎস্য পাইকারি বাজারের ইলিশ ভবনে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলেনে লিখিত বক্তব্যে অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নীরব হোসেন টুটুল বলেন, সরকার কঠোরভাবে করোনা মোকাবিলা করার আশির্বাদে আমরা যখন ঘুর দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি ঠিক সেই সময় জলবায়ু পরিবর্তনসহ প্রাকৃতিক নানান কারণে ইলিশ মাছের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। বিশেষ করে মৎস্য ব্যবসা নির্ভর করে ইলিশ মাছের ওপর। তবে এ বছর ইলিশের এত কম আমদানি বিগত ১০ বছরেও দেখা যায়নি। শুধু মিঠা পানির নদীর মাছে দেশের ইলিশের চাহিদা পূরণ হয় না। আর এবার তো মিঠা পানির নদীতেই মাছের স্বল্পতা। আর সাগর উত্তাল থাকার কারণে জেলেরা বিগত বছরের মতো এবার সাগরেও তেমনভাবে মাছ শিকার করতে পারেননি। মূলত প্রাকৃতিক কারণে এ বছর মাছের মৌসুমের প্রতিটি অমাবস্যা ও পূর্ণিমার তিথিতে সাগরে সতর্কতা সংকেত থাকায় জেলেরা সাগরে যেতে পারেননি। এ কারণে ইলিশ শিকার হয়নি। যার বিরূপ প্রভাব পড়বে আমাদের মোকামসহ সারা দেশের ইলিশ বাজারের ওপর। এমন পরিস্থিতিতে শুধু বরিশালের মোকামে শত কোটি টাকা লোকসানের আশঙ্কা করছি।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের ইচ্ছায় মাছ রপ্তানির কারণে কালো বাজারে মাছের চোরা চালান যেমনি কমেছে, তেমনি সরকার আয় করছে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা। তবে সরকার ব্যবসায়ীদের কল্যাণে ইলিশ রপ্তানির যে কার্যক্রম শুরু করেছে, তাও মাছের অভাবে মুখ থুবরে পড়েছে। তার ওপর আসছে ১২ অক্টোবর থেকে ইলিশ শিকারের নিষেধাজ্ঞা। এটিই আমাদের এখন ক্ষতির প্রধান কারণ। আমরা সরকারের মৎস্য বিভাগের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি, আমাদের আর্থিক ক্ষতির কথা বিবেচেনা করে ১২ অক্টোবর সরকারের যে নিষেধাজ্ঞা শুরু হচ্ছে তা এক মাস পরে অর্থাৎ ১২ নভেম্বর থেকে শুরু করতে অনুরোধ করছি।
এ পর্যন্ত ৪০ টন ইলিশ বরিশাল থেকে ভারতে রপ্তানি করা হয়েছে জানিয়ে টুটুল বলেন, গত ২০ সেপ্টেম্বর থেকে আগামী ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত ভারতে প্রায় ৩ হাজার ৯৫০ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন পেলেও, ১২ অক্টোবর থেকে যদি মাছের ওপর নিষেধাজ্ঞা আসে তাহলে কীভাবে ব্যবসায়ীরা এ কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।
তিনি বলেন, এবার যখন নদীতে ইলিশ আসবে তখনই নিষেধাজ্ঞা শুরু হচ্ছে, কিন্তু বিগত বছরগুলোতে দেখেছি নিষেধাজ্ঞা শেষে ইলিশের পেটে প্রচুর ডিম থাকছে। তাই এবার বিষয়টি বিবেচনা করার দাবি জানাচ্ছি।
ভারতে আমাদের দেশের মতো এতো নিষেধাজ্ঞা নেই জানিয়ে টুটুল বলেন, সেসঙ্গে ইলিশ শিকারের নিষেধাজ্ঞা কমিয়ে জাটকা ও চাপিলা ইলিশ আহরণ বন্ধে জোরদার ভূমিকা রাখা উচিত। তাহলে ইলিশের উৎপাদন বাড়বে।
এদিকে স্থানীয় বাজার দরের চেয়ে রপ্তানি মাছের মূল্য কম হওয়ায় লোকসান গুনতে হচ্ছে কিনা সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে টুটুল বলেন, মাছের আমদানি বাড়লে দাম কমে যাবে, আর কম দামে মাছ কিনতে পারলে রপ্তানিতে লাভ হবে। এখন মাছের সংকট থাকায় স্থানীয় বাজারের সঙ্গে রপ্তানির মূল্যের হিসেবে কিছুটা গড়মিল হচ্ছে। তবে রপ্তানি হলে সাগরসহ, সুন্দরবন ও খুলনা অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা থেকে কালোবাজারি বন্ধ হবে। এতে দেশের ভেতরেও মাছের সংকট থাকবে না।
তবে নিষেধাজ্ঞা পেছানোর কোনো সুযোগ নেই জানিয়ে রপ্তানির সময়সীমার বিষয়টি মাঠ পর্যায়ে আলোচনা করে দেওয়া উচিত বলে দাবি জেলা মৎস্য কর্মকর্তাদের।
এদিকে নানা গবেষণা করে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার ফলে ইলিশের উৎপাদন বাড়ছে বলে দাবি মৎস্য অধিদপ্তরের। মৎস্য অধিদপ্তর বলছে ২০১১ সালে বরিশালে ইলিশ উৎপাদন ছিল ১৫ হাজার ৬৫০ মেট্রিক টন। যা গত ১২ বছরে বেড়ে হয়েছে ৩৮ হাজার ৮৯১ মেট্রিক টন।
অপরদিকে ১২ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিন ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান-২০২৩ উপলক্ষে ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত জেলা টাস্কফোর্স কমিটির প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টায় জেলা প্রশাসন ও জেলা মৎস্য অফিসের আয়োজনে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত ওই সভায় মা ইলিশ সংরক্ষণের বিষয়ে আলোচনা করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২৩
এমএস/আরআইএস